বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক গোপন রাখতে হত্যা করা হয় খুশিকে
সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার বাসিন্দা পরিবহন কর্মচারী বাবার ৬ মেয়ে ও দুই ছেলের মধ্যে খুশি বেগম (১৫) সবার ছোট। সিলেটের ইউসুফ নামে এক লন্ডন প্রবাসীর সঙ্গে দুই বছর আগে মোবাইলফোনে বিয়ে হয় তাদের। তবে এ সম্পর্কের বাইরে একই এলাকার মহিউদ্দিন (২২) নামে এক যুবকের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে তার।
একপর্যায়ে বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকে খুশি। কিন্তু মহিউদ্দিন বিয়েতে নারাজ। বিয়েতে অস্বীকৃতি জানালে খুশি সম্পর্কের কথা ফাঁস করার হুমকি দেয়। সম্মানহানির ভয়ে হাফেজ মহিউদ্দিন গত ১৭ নভেম্বর খুশি বেগমকে কৌশলে বাড়ি থেকে ডেকে পার্শ্ববর্তী ধান ক্ষেতে নিয়ে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়।
বিজ্ঞাপন
ওই ঘটনার পর খুশির পরিবার নিখোঁজের জিডি করে। তিন দিন পর ধান ক্ষেত থেকে ওই কিশোরীর অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ক্লুলেস হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচনসহ ঘটনার মূল অভিযুক্ত মহিউদ্দিনকে গ্রেফতার করে সিআইডির এলআইসি শাখার একটি দল।
শনিবার (৪ ডিসেম্বর) মালিবাগ সিআইডি সদর দফতরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর।
তিনি বলেন, গত ১৭ নভেম্বর নিখোঁজ হয় ছাতকের গৌরীপুরের খুশি বেগম (১৫)। সে মুক্তিরগাঁও হাফিজিয়া মাদরাসার ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী ছিল। নিখোঁজের বিষয়ে দুই দিন পর তার বাবা ছাতক থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। ২১ নভেম্বর সকালে প্রত্যক্ষদর্শীদের দেওয়া খবরের ভিত্তিতে গ্রামের একটি ধান ক্ষেত থেকে গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় খুশি বেগমের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
স্থানীয় থানা পুলিশ সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ হাসপাতালে পাঠায়। ওই ঘটনায় নিহতের বাবা অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় গুরুত্বের সঙ্গে সিআইডি ছায়া তদন্ত শুরু করে।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর বলেন, সংগৃহীত বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিচার বিশ্লেষণ করে আসামিকে শনাক্ত করা হয়।
তিনি বলেন, সিলেট শহর এলাকার ইউসুফ নামে এক লন্ডন প্রবাসীর সঙ্গে প্রায় ২ বছর আগে পরিবারের সম্মতিতে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ভিকটিম খুশির বিয়ে হয়। স্বামীর অবর্তমানে একই এলাকার মো. মহিউদ্দিন (২২) সঙ্গে খুশি বেগমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মহিউদ্দিন খারগাঁও হাফিজিয়া মাদরাসা থেকে ২০১৮ সালে হেফজ্ পাস করে দুই বছর বেকার ছিলেন। সব বিষয়াদি যাচাই বাছাই করে এই ক্লুলেস হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে মহিউদ্দিনের সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায়। পরবর্তীতে এলআইসি শাখার একটি চৌকস দল মহিউদ্দিনকে গ্রেফতার করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার মহিউদ্দিন খুশি বেগমের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক স্বীকার করেছেন। তিনি জানান, খুশি বেগম তাকে বিয়ে করার জন্য চাপ দিচ্ছিল। বিয়েতে অস্বীকৃতি জানালে তাদের সম্পর্কের বিষয়টি ফাঁস করার হুমকি দেয় খুশি। এরই জেরে পরিকল্পিতভাবে ১৭ নভেম্বর রাতে খুশি বেগমকে কৌশলে বাড়ি থেকে ডেকে পার্শ্ববর্তী ধান ক্ষেতে নিয়ে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যা করে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন তিনি।
জেইউ/এসকেডি