গত কয়েক দিন ধরে নিরাপদ সড়কসহ ও ১১ দাবিতে রাজধানীর রামপুরা ব্রিজে এক দল শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে যাচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সোহাগী সামিয়া নামের তরুণী। তিনি নিজেকে রাজধানীর খিলগাঁও মডেল কলেজের শিক্ষার্থী বলে পরিচয় দিয়েছেন।

শুক্রবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টায় রামপুরা ব্রিজে ওই দিনের মতো আন্দোলন শেষে শনিবার লাল কার্ড নিয়ে নামার ঘোষণা দেন তিনি।

সোহাগী জানান, চলমান এইচএসসি পরীক্ষার কারণে তারা গত দুইদিন ধরে রাস্তা অবরোধ কর্মসূচি পালন করছেন না। তবে তারা রাস্তার পাশে তাদের দাবি নিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। শনিবার তারা একই ভাবে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন, তবে রাস্তা অবরোধ করবেন না। তবে আগামীকালে তারা তাদের দাবি আদায়ের ক্ষেত্রে ভিন্নভাবে আন্দোলন করবেন। সড়কে অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিবাদে তারা লাল কার্ডসহ বিভিন্ন ব্যঙ্গাত্মক ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে আন্দোলন করবেন। বেলা ১২টায় রামপুরা ব্রিজের ওপর তারা এই কর্মসূচি পালন করবেন।

এর আগে শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত নিরাপদ সড়ক দাবিতে রামপুরা ব্রিজের ওপর আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা। প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে চলা কর্মসূচিতে তাদের দাবির পক্ষে বিভিন্ন শ্লোগান দেন।

উল্লেখ, গত বুধবার রামপুরা ব্রিজের আন্দোলন থেকে শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতকরণে ১১ দফা দাবি উত্থাপন করেন শিক্ষার্থীরা। 

১১ দফা দাবি

১. সড়কে নির্মম কাঠামোগত হত্যার শিকার নাঈম ও মাঈনউদ্দিনের হত্যার বিচার করতে হবে। তাদের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। গুলিস্তান ও রামপুরা ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় পথচারী পারাপারের জন্য ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করতে হবে।

২. সারাদেশে সকল গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের হাফ পাস (অর্ধেক ভাড়া) সরকারি প্রজ্ঞাপন দিয়ে নিশ্চিত করতে হবে। হাফ পাসের জন্য কোনো সময় বা দিন নির্ধারণ করে দেওয়া যাবে না। বর্ধিত বাস ভাড়া প্রত্যাহার করতে হবে। সকল রুটে বিআরটিসির বাসের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে।

৩. গণপরিবহনে ছাত্রছাত্রী এবং নারীদের অবাধ যাত্রা ও সৌজন্যমূলক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

৪. ফিটনেস ও লাইসেন্সবিহীন গাড়ি এবং লাইসেন্সবিহীন চালককে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। গাড়ি ও ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে বিআরটিএর দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

৫. সকল রাস্তায় ট্রাফিক লাইট, জেব্রা ক্রসিং নিশ্চিত করাসহ জনবহুল রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ এর সংখ্যা বাড়াতে হবে। ট্রাফিক পুলিশের ঘুষ দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

৬. বাসগুলোর মধ্যে বেপরোয়া প্রতিযোগিতা বন্ধে এক রুটে এক বাস এবং দৈনিক আয় সকল পরিবহন মালিকের মধ্যে তাদের অংশ অনুযায়ী সমানভাবে বণ্টন করার নিয়ম চালু করতে হবে।

৭. শ্রমিকদের নিয়োগপত্র ও পরিচয়পত্র নিশ্চিত করতে হবে। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করতে হবে। চুক্তির ভিত্তিতে বাস দেওয়ার বদলে টিকিট ও কাউন্টারের ভিত্তিতে গোটা পরিবহন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। শ্রমিকদের জন্য বিশ্রামাগার ও টয়লেটের ব্যবস্থা করতে হবে।

৮. গাড়ি চালকের কর্মঘণ্টা একনাগাড়ে ৬ ঘণ্টার বেশি হওয়া যাবে না। প্রতিটি বাসে ২ জন চালক ও ২ জন সহকারী রাখতে হবে। পর্যাপ্ত বাস টার্মিনাল নির্মাণ করতে হবে। পরিবহন শ্রমিকদের যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

৯. যাত্রী, পরিবহন শ্রমিক ও সরকারের প্রতিনিধিদের মতামত নিয়ে সড়ক পরিবহন আইন সংস্কার করতে হবে এবং এর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।

১০. ট্রাক, ময়লার গাড়িসহ অন্যান্য ভারী যানবাহন চলাচলের জন্য রাত ১২টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত সময় নির্ধারিত করে দিতে হবে।

১১. মাদকাসক্তি নিরসনে গোটা সমাজ জুড়ে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। চালক-সহকারীদের জন্য নিয়মিত ডোপ টেস্টের ও কাউন্সিলিং এর ব্যবস্থা করতে হবে।

এমএসি/এইচকে