ভারত-পাকিস্তান থেকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ
উৎপাদন খাতে ভারত ও পাকিস্তান থেকে ক্রমেই এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ফলে মাথাপিছু আয়, জিডিপি প্রবৃদ্ধি, নগরায়ণ ও নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে যাচ্ছে দেশ দুটি।
বুধবার (১ ডিসেম্বর) নগরীর লেকশোর হোটেলে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) বার্ষিক উন্নয়ন সম্মেলন-২০২১ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় ‘বাংলাদেশ ইন কমপারেটিভ পার্সপেক্টিভ প্রতিবেদন’ প্রকাশ করা হয়।
বিজ্ঞাপন
প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন বিআইডিএস মহাপরিচালক ড. বিনায়েক সেন। প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান, অধ্যাপক নুরুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্টরা কনফারেন্সে অংশ নেন।
প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মাথাপিছু আয়ে পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে ভারতের ঘাড়েও নিশ্বাস ফেলছে বাংলাদেশ। ১৯৯০ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ২ দশমিক ৫৪ শতাংশ হারে বাড়ত, অথচ এখন এটা ৫ দশমিক ০৩ শতাংশ হারে বাড়ছে। ১৯৯০ সালে ভারতের মাথাপিছু আয় ৩ দশমিক ২৬ হারে বাড়ত, এখন তা কমে ১ দশমিক ১৪ হার হয়েছে। একইভাবে ৯০ দশকে পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির হার ছিল ১ দশমিক ৬৯ শতাংশ, এটা এখন আরও কমে ০ দশমিক ৮৬ হয়েছে। মাথাপিছু আয়ে ৯০ দশকে পাকিস্তানের চেয়ে ৪৫ শতাংশ পিছিয়ে ছিল বাংলাদেশ। অথচ এখন পাকিস্তানের চেয়ে মাথাপিছু আয়ে ১০ শতাংশ এগিয়ে বাংলাদেশ। উৎপাদন খাতে ভারত-পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ৯০ দশকে এ খাতে বাংলাদেশের অগ্রগতি ছিল ১৩ দশমিক ২৪ শতাংশ যা এখন হয়েছে ১৮ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, একই সময়ে ভারতে উৎপাদন খাতে প্রবৃদ্ধি ছিল ১৬ দশমিক ৬ শতাংশ, অথচ এখন কমে দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৯৬ শতাংশ। একইভাবে উৎপাদন খাতে পাকিস্তান পিছিয়ে যাচ্ছে। ৯০ দশকে এ খাতে পাকিস্তানের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ, এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
প্রতিবেদনে দেখা গেছে, নগরায়ণেও এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ৯০ দশকে বাংলাদেশের নগরায়ণের হার ছিল ১৯ দশমিক ৮১ শতাংশ, এখন বেড়ে হয়েছে ৩৪ দশমিক ১৭ শতাংশ। ভারতে একই সময়ে নগরায়ণের হার ছিল ২৫ দশমিক ৫৫ শতাংশ, এখন দাঁড়িয়েছে ৩৪ দশমিক ৯২ শতাংশ। পাকিস্তানের নগরায়ণের সেভাবে অগ্রগতি নেই ৯০ দশকে পাকিস্তানে এর হার ছিল ৩০ দশমিক ৫৮ শতাংশ যা এখন হয়েছে ৩৭ দশমিক ১৭ শতাংশ। ফলে ভারত ও পাকিস্তানের তুলনায় বাংলাদেশে নগরায়ণ বেড়েছে।
ভারত-পাকিস্তানকে বাংলাদেশ পেছনে ফেলার অন্যতম কারণ কর্মসংস্থানে নারীর উপস্থিতি। ৯০ দশকে বাংলাদেশে কর্মসংস্থানে নারী উপস্থিতির হার ছিল ২৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ অথচ এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ। একই সময়ে ভারতে নারীর উপস্থিতি ছিল ৩০ দশমিক ২৭ শতাংশ অথচ এখন কমে দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ৭৯ শতাংশ। অন্যদিকে ৯০ দশকে পাকিস্তানে কর্মক্ষেত্রে নারীর উপস্থিতি ছিল ১৪ দশমিক ৪ শতাংশ, এখন তা ২২ দশমিক ৬৩ শতাংশে পৌঁছেছে।
ড. বিনায়েক সেন বলেন, নানা সূচকে ভারত-পাকিস্তানের থেকে বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে। নগরায়ণ, নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে। এসব দেশে যেভাবে আঞ্চলিক বৈষম্য রয়েছে তা বাংলাদেশে নেই। তবে বাংলাদেশের সমতলে যেভাবে এগিয়ে গেছে উপকূল ও পাহাড়ি এলাকা সেভাবে এগিয়ে যায়নি। সরকার এসব এলাকা উন্নয়নে কাজ করছে। বাংলাদেশের সামাজিক সূচক অনেক ভালো।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, আমি হাওর ও গ্রামের ছেলে। গ্রামীণ উন্নয়নে আমি কাজ করছি। গ্রামীণ সড়ক উন্নয়ন, কমিনিউনিটি ক্লাব, হাওর উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন, দারিদ্র্য জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন প্রকল্পে আমি বেশি নজর দিয়ে থাকি। এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী আমাকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছেন। এসব কারণে বাংলাদেশ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।
এসআর/ওএফ