রাজধানীর বাড্ডায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা/ ঢাকা পোস্ট

‘অপ্রাপ্ত বয়স্ক চালক, লাইসেন্সহীন চালক আর ফিটনেসবিহীন গাড়ি সড়কে আমাদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। আমরা এগুলো বরদাস্ত করব না। দাবি একটাই, আমাদের সোনার বাংলায় নিরাপদ সড়ক চাই।’

রাজধানীর রামপুরা ব্রিজ এলাকায় আজ বুধবার (১ ডিসেম্বর) বেলা ১১টা থেকে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। নিরাপদ সড়ক ও সারাদেশে শিক্ষার্থীদের জন্য ‘হাফ পাসের’ (অর্ধেক ভাড়া) দাবিতে চলা এই আন্দোলন থেকে মহিবুল হক নামের এক শিক্ষার্থী এসব কথা বলেন। 

আরেক শিক্ষার্থী এনামুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, রামপুরায় যেখানে দুই দিন আগে বাস চাপায় শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে, সেখানে কোনো ফুট ওভারব্রিজ নেই। জেব্রা ক্রসিং ছিল, তবে তার দাগ মুছে গেছে সড়কে প্রাণ হারানো শত শত মানুষের স্মৃতির মতো, মানুষতো মরবেই।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর রামপুরা ব্রিজ এলাকায় চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স ও গাড়ির ফিটনেস সনদ যাচাই করছেন শিক্ষার্থীরা। লাইসেন্স ও ফিটনেস সনদ দেখাতে না পারলে ট্রাফিক পুলিশকে মামলা দিতে বলছেন তারা। তবে মঙ্গলবারের মতো আজও শিক্ষার্থীরা জরুরি সেবার পরিবহনকে প্রমাণসাপেক্ষে ছেড়ে দিচ্ছেন। 

যেসব বাসের চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স ও গাড়ির ফিটনেস সনদ নেই সেসব বাস থেকে যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সেসব বাস রাস্তার দুই পাশে দাঁড় করিয়ে রেখেছেন শিক্ষার্থীরা। ফলে ওই সড়কে যানজট দেখা দিয়েছে, যার প্রভাব পড়েছে আশপাশের সড়কে। রামপুরা ব্রিজ থেকে শাহজাদপুর ও মালিবাগ আবুল হোটেল পর্যন্ত গাড়ির সারি দেখা গেছে। কর্মস্থলমুখী অনেক মানুষকে গাড়ি থেকে নেমে হাঁটতে দেখা গেছে। কেউ কেউ বেছে নিয়েছেন রিকশাকে। 

ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করছেন এক শিক্ষার্থী 

খিলক্ষেত থেকে বেইলি রোডে যাওয়ার সময় বাড্ডায় বাসে আটকে আছেন নজরুল ইসলাম নামের এক যাত্রী। তিনি বলেন, আমি সকাল ১০টায় খিলক্ষেত থেকে বাসে উঠেছি। আমি ভিক্টর ক্লাসিক পরিবহনের যে বাসে বসে আছি এর চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। শিক্ষার্থীরা বাস আটকে দিয়েছে। এখন বিপাকে পড়েছি। 

বাড্ডা সড়কে আটকে আছে গাড়ি 

রামপুরা থানার অফিসার ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম বলেন, আগে থেকেই ঘোষণা ছিল শিক্ষার্থীরা আজও সড়কে আন্দোলন করবেন। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত রয়েছে।

তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা বাস চালকদের লাইসেন্স ও ফিটনেস সনদ দেখছে। আমরা তাদের সহযোগিতা করছি। ইতোমধ্যে কয়েকটি গাড়ির ব্যাপারে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা সবসময়ই চাই যেন সড়কে মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। 

প্রসঙ্গত, ২৯ নভেম্বর (সোমবার) রাত পৌনে ১১টার দিকে রাজধানীর রামপুরা এলাকায় গ্রিন অনাবিল পরিবহনের বাসের চাপায় মাইনুদ্দিন নামের এক  শিক্ষার্থী নিহত হন। এ ঘটনায় রাতে সড়ক অবরোধ করে উত্তেজিত জনতা। এ সময় ঘাতক বাসসহ আটটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। ভাঙচুর করা হয় আরও চারটি বাস। এ ঘটনায় বাসচালক সোহেলকে (৩৫) গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে স্থানীয়রা। পরে তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসা হয়। আহত সোহেলের পুলিশি পাহারায় ঢামেক হাসপাতালের ১০০ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসা চলছে। মঙ্গলবার সকালে ঘাতক বাসের হেলপারকেও আটক করেছে র‍্যাব। ওইদিন সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে সরব হন।  

এমআই/এইচকে