পদ্মাপাড়ে সম্ভাবনার নতুন দ্বার খোলার অপেক্ষা
ছোট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন একটি শহর। অনেকটা পেন্সিলে আঁকা ছবির মতো। শহরের বাড়িগুলো আকাশছোঁয়া নয়। প্রতিটি সড়কই যেন আলাদা আলাদাভাবে সাজানো। শহরটির নাম রাজশাহী। পদ্মা নদীর পাড়ে এর অবস্থান।
রাজশাহীকে অনেকে বলে থাকেন ‘শান্তির শহর’। এ শহরের পশ্চিম প্রান্তে পদ্মার তীর ঘেঁষে চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। নির্মাণ করা হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্ক। এখানে বিভিন্ন পর্যায়ে কাজের অগ্রগতি এখন দৃশ্যমান।
বিজ্ঞাপন
পদ্মাপাড়ের হাই-টেক পার্কে প্রায় ১৪ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, এ পার্কের কাজ শেষ হলে খুলে যাবে সম্ভাবনার নতুন দ্বার। দেশি-বিদেশি প্রযুক্তিগত নানা প্রতিষ্ঠান এখানে এসে স্থান নেবে। উন্মোচিত হবে উন্নয়নের নতুন দিগন্ত
পদ্মাপাড়ের হাই-টেক পার্কে প্রায় ১৪ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, এ পার্কের কাজ শেষ হলে খুলে যাবে সম্ভাবনার নতুন দ্বার। দেশি-বিদেশি প্রযুক্তিগত নানা প্রতিষ্ঠান এখানে এসে স্থান নেবে। উন্মোচিত হবে উন্নয়নের নতুন দিগন্ত।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজশাহীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্কের প্রধান দুই অংশের মধ্যে শেখ কামাল আইটি ইনকিউবেশন অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারের কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। সজীব ওয়াজেদ জয় সিলিকন টাওয়ারের কাজ প্রায় শেষের দিকে।
কথা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্ক প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এ এম ফজলুল হকের সঙ্গে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, এর বাস্তবায়ন হলে রাজশাহীতে জ্ঞানভিত্তিক আইটি ইন্ডাস্ট্রি স্থাপন করা হবে, যা জাতীয় অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখবে। আমরা দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের প্রাধান্য দিচ্ছি। তাদের আকৃষ্ট করার জন্য এখানে ব্যবসায়িক পরিবেশ সৃষ্টি করব।
‘আমাদের লক্ষ্য এ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে নতুন আইটি উদ্যোক্তাদের সুযোগ ও কর্মস্থান সৃষ্টি করা। এখানে কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে প্রায় ১৪ হাজার মানুষের। তবে আমার হিসাবে এ সংখ্যা আরও বাড়বে।’
যাত্রা শুরু যেভাবে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১১ সালের ২৪ নভেম্বর রাজশাহীতে একটি আইটি ভিলেজ স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদন পায়। ২০১৭ সালের ১১ মার্চ প্রকল্পটির অনুকূলে সরকারি আদেশ জারি হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৭ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্ক, রাজশাহী প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এরপর থেকে চলতে থাকে কাজ। বর্তমানে প্রকল্পটির অগ্রগতি প্রায় ৭০ শতাংশ।
প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় (দ্বিতীয় সংশোধিত) ৩৩৫ কোটি ৫০ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। করোনা পরিস্থিতির জন্য প্রকল্প শেষের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে।
যা যা থাকছে হাই-টেক পার্কে
প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এ এম ফজলুল হক জানান, প্রকল্পটির জন্য বরাদ্দ দেওয়া জমির পরিমাণ প্রায় ৩১ একর। এর আওতায় প্রায় তিন লাখ বর্গফুট আয়তনের দুটি বেজমেন্টসহ ১০তলা বিশিষ্ট জয় সিলিকন টাওয়ার হচ্ছে। এটি একটি মাল্টিপারপাস ভবন।
এখানে থাকবে অত্যাধুনিক সিনেপ্লেক্স, স্থাপন করা হবে বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল মিউজিয়াম। এতে সাব-স্টেশন, জেনারেটর বসানো হবে। এছাড়া আনুষঙ্গিক ব্যবস্থাও থাকছে এ টাওয়ারে। পুরো প্রকল্প এলাকা ঘিরে থাকবে সীমানা প্রাচীর। এছাড়া ব্যারাকও নির্মাণ করা হবে
এখানে থাকবে অত্যাধুনিক সিনেপ্লেক্স, স্থাপন করা হবে বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল মিউজিয়াম। এতে সাব-স্টেশন, জেনারেটর বসানো হবে। এছাড়া আনুষঙ্গিক ব্যবস্থাও থাকছে এ টাওয়ারে। পুরো প্রকল্প এলাকা ঘিরে থাকবে সীমানা প্রাচীর। এছাড়া ব্যারাকও নির্মাণ করা হবে।
থাকছে অত্যাধুনিক পানি সরবরাহ ব্যবস্থা, রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং, দৃষ্টিনন্দন জলধারা। প্রকল্প এলাকাজুড়ে গড়ে তোলা হবে সবুজায়ন। ফাইবার কানেকটিভিটিসহ উচ্চগতির ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবস্থাও রাখা হবে। এছাড়া এখানে স্থাপন করা হচ্ছে ইন্টারনেট অব থিংকস (আইওটি) ল্যাব।
যা বলছেন সংশ্লিষ্টরা
রাজশাহীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্কের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এ এম ফজলুল হক বলেন, প্রকল্পটির বাস্তবায়ন হলে দুই লাখ বর্গফুট পরিমাণ জায়গা ভাড়া দেওয়া যাবে। আইটি প্রতিষ্ঠানগুলো এ স্পেস ভাড়া পাবে। পাঁচ শতাধিক প্রতিষ্ঠান এখানে কাজ করতে পারবে।
তিনি বলেন, এখানে সাতটি প্লট রয়েছে। একেকটির আকার দেড় একর থেকে আড়াই একর পর্যন্ত। বিদেশি কোম্পানি যারা হার্ডওয়ার ইন্ড্রাস্টি গড়ে তুলতে চায়, তাদের আমরা প্লট দেব। হাই-টেক পার্কটি দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।
বাংলাদেশ হাই-টেক পার্কের প্রকল্প পরিচালক (যুগ্ম সচিব) সৈয়দ জহুরুল ইসলাম বলেন, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরির জন্য হাই-টেক পার্কগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে। একটি জমিতে ইন্ডাস্ট্রি করতে রেজিস্ট্রেশন, বিদ্যুৎ, গ্যাস পানিসহ যা যা সুবিধা লাগে সবই আমরা দিচ্ছি। এতে বিনিয়োগকারীরা আগ্রহী হচ্ছেন।
হাই-টেক পার্ক অথরিটির অপর প্রকল্প পরিচালক (যুগ্ম সচিব) এ এন এম শফিকুল ইসলাম বলেন, তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর শিল্পের বিকাশ ও উন্নয়নের মাধ্যমে আর্থসামাজিক সমৃদ্ধি অর্জন ত্বরান্বিত করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বঙ্গবন্ধু হাই-টেক পার্ক এ শিল্পের উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করবে।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের ঘোষণা ছিল। এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সরকার দেশে হাই-টেক পার্ক, সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক ও আইটি সেন্টার নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। এমন অনেক উদ্যোগ ইতোমধ্যে দৃশ্যমান, বাকিগুলোর কাজ এগিয়ে চলছে।
এএসএস/আরএইচ