এনায়েত উল্লাহর সম্পদের খোঁজে শতাধিক প্রতিষ্ঠানে দুদকের চিঠি
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং এনা পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ, তার স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ের সম্পদের নথিপত্র চেয়ে সরকারি-বেসরকারি ৫৮টি ব্যাংকসহ শতাধিক প্রতিষ্ঠানে চিঠি পাঠিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সরকারি-বেসরকারি ৫৮টি ব্যাংক, ৩০টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিআরটিএ চেয়ারম্যান, নিবন্ধন অধিদফতর, জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতর, ডাক বিভাগ, ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ পাঁচ সিটি করপোরেশন, ময়মনসিংহ ও কক্সবাজার পৌরসভা এবং জাতীয় গৃহায়ণ অধিদফতরসহ শতাধিক প্রতিষ্ঠানে দেওয়া চিঠিতে এনায়েত উল্লাহ ও তার স্ত্রী নার্গিস সামসাদ, ছেলে রিদওয়ানুল আশিক নিলয় এবং মেয়ে চাশমে জাহান নিশির নামে থাকা হিসাব বিবরণীসহ সংশ্লিষ্ট নথিপত্র চাওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
সম্পদের তথ্য-উপাত্ত যাচাইয়ের জন্য দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে সংস্থাটির অনুসন্ধান কর্মকর্তা ও উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ফয়সাল গত ২৫ অক্টোবর চিঠিগুলো পাঠিয়েছেন। এরই মধ্যে তলব করা নথিপত্র আসতে শুরু করেছে বলে জানা গেছে।
এনায়েত উল্লাহর বিরুদ্ধে রাজধানীর আশপাশের বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী ১৫ হাজার বাস থেকে দৈনিক ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা চাঁদা আদায় এবং নামে-বেনামে শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে সোমবার (২৯ নভেম্বর) দুদক সচিব মু. আনোয়ারে হোসেন হাওলাদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।
দুদক আইনজীবী খুরশীদ আলম এ বিষয়ে ঢাকা পোস্টকে বলেন, তাকে সম্পদ বিবরণী নোটিশ দেওয়া হয়েছে। নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে সম্পদ বিবরণী জমা দিয়েছেন তিনি। যতটুকু জানি, তিনি যে বিবরণী দিয়েছেন এবং তার বিরুদ্ধে যেসব সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আছে তা যাচাই করার জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চিঠি দেওয়া হয়েছে। মূলত এটি এখন যাচাই-বাচাই পর্যায়ে রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, উৎসগুলো যাচাই-বাছাই করে অনুসন্ধান কর্মকর্তা যে প্রতিবেদন জমা দেবেন, সেখানে যদি জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ কিংবা সম্পদের তথ্য গোপনের প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। অনুসন্ধান কর্মকর্তা আইন মেনেই কঠোরভাবে যাচাই-বাছাই করছেন।
এ বিষয়ে সোমবার রাতে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করা হলেও খন্দকার এনায়েত উল্লাহর বক্তব্য নিতে পারেনি ঢাকা পোস্ট।
প্রথম নোটিশ যায় জুন মাসে
এর আগে অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ায় চলতি বছরের ১৪ জুন সম্পদের হিসাব চেয়ে এনায়েত উল্লাহকে নোটিশ পাঠায় দুদক। এরপর চলতি বছরের অক্টোবরে দুদক সচিব মু. আনোয়ার হোসেন হওলাদারের কাছে সম্পদের হিসাব জমা দেন এনায়েত উল্লাহ। দাখিলকৃত সম্পদের হিসাব যাচাই-বাছাইয়ে উপপরিচালক মোহাম্মদ ফয়সালকে অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ওই সময় ঢাকা পোস্টকে খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেছিলেন, দুদক চাইলে যেকোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ তদন্ত করতে পারে। তদন্ত হলে অভিযোগ সত্য নাকি মিথ্যা তা প্রমাণিত হবে।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ষড়যন্ত্রমূলক দাবি করে তিনি বলেছিলেন, বছরখানেক আগে সংগঠনের কয়েকজনকে চাঁদাবাজির অভিযোগে বের করে দেওয়া হয়েছিল। তারা আবার সংগঠনে ফিরতে চায়। তারাই বিভিন্ন সময় পত্র-পত্রিকায় অভিযোগ করে আসছিল আমার বিরুদ্ধে। ওইসব অভিযোগ শুনেই দুদকের অনুসন্ধান শুরু হতে পারে।
২০২০ সাল থেকে মাঠে দুদক
এনায়েত উল্লাহর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে অনুসন্ধানে নামে দুদক। অনুসন্ধানে অঢেল সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া গেছে বলে দুদক সূত্রে জানা গেছে। এজন্যই তাকে নোটিশ পাঠানো হয় বলে তখন জানিয়েছিলেন দুদক কর্মকর্তারা।
এর আগে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অনুসন্ধানে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটিসহ সরকারি বিভিন্ন দফতরে চিঠি দিয়েছিলেন দুদকের তৎকালীন অনুসন্ধান কর্মকর্তা উপপরিচালক নুরুল হুদা।
দুদকে পাঠানো কয়েকটি অভিযোগে বলা হয়েছে, সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ খন্দকার এনায়েত উল্লাহ রাজধানীর আশপাশের বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী ১৫ হাজার বাস থেকে দৈনিক ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা চাঁদা আদায়সহ নামে বেনামে শত শত কোটি টাকা অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন।
২০১৯ সালের ২৭ অক্টোবর পরিবহন শ্রমিক নেতা ইসমাইল হোসেন বাচ্চুর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। ওই সমিতির সভাপতি মশিউর রহমান রাঙ্গা তখন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সড়ক পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা আনতে সমিতি কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু এ খাতে নতুনভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে একটি চক্র মাঠে নেমেছে।
এরপর ‘বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য লীগ’ নামে একটি সংগঠনের ব্যানারে জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ইসমাইল হোসেন বাচ্চু দাবি করেন, সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ প্রতিদিন ঢাকার পরিবহন খাত থেকে প্রায় এক কোটি ৬৫ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেন।
আরএম/এসকেডি/জেএস