নিরাপদ সড়ক আন্দোলন
‘ইন্ধন-সূত্র’ খুঁজতে ছাত্রী ও বাবাকে থানায় নিয়ে গেছে পুলিশ
নিরাপদ সড়কের দাবিতে দিনভর রাজধানীর ধানমন্ডি ২৭ এলাকায় আন্দোলনে অংশ নেওয়া এক ছাত্রীকে তার বাবাসহ থানায় নিয়ে গেছে পুলিশ।
রোববার (২৮ নভেম্বর) সন্ধ্যায় বাসা থেকে তাদের থানায় নিয়ে যায় মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মোহাম্মদপুর থানার ওসি আব্দুল লতিফ।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, আজ ধানমন্ডি ২৭ এলাকায় সকাল থেকে আন্দোলন করছিল একদল শিক্ষার্থী। দুপুরে ওই ছাত্রী সেখানে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মাঝে খাবার পরিবেশন করে। একই সময়ে আরেকটি ছেলে ওই ছাত্রীর কাছে বিকাশ নম্বর চায় এবং টাকা পাঠানোর কথা জানায়।
বিষয়টি পুলিশের গোয়েন্দা নজরদারিতে এসেছে। এই নিরাপদ সড়ক আন্দোলন ঘিরে অন্য কারো সংশ্লিষ্টতা বা লেনদেনের বিষয়টি রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখতেই ওই ছাত্রীকে তার বাবাসহ থানায় ডেকে নেওয়া হয়েছে। আন্দোলনে অন্য কারো ইন্ধন কিংবা যোগসাজশ রয়েছে কি না এ ব্যাপারে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের মোহাম্মদপুর জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মৃত্যুঞ্জয় দে সজল ঢাকা পোস্টকে বলেন, আজকে ধানমন্ডি ২৭ এলাকায় নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মাঝখান থেকে এক অছাত্রকে আটক করা হয়েছে। তার নাম হাফিজুর রহমান। তার কাছ থেকে কিছু ইনজেকশন ও জাল টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। হাফিজুর রহমানকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
এর আগে গতকালও হাফিজুরকে ধানমন্ডি ২৭ এলাকায় দেখা গেছে। তখন সে শিক্ষার্থী ও পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে নিজেকে ডাক্তার হিসেবে পরিচয় দিয়েছিল। আজ ঘটনাস্থল থেকে আটকের সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা হাফিজুর রহমানকে ঘিরে ধরে। এ সময় হাফিজুর রহমান আন্দোলনরত অধরা নামে শিক্ষার্থীর কাছ থেকে বারবার বিকাশ নাম্বার চাচ্ছিল। অধরার পূর্ব পরিচিত, নাকি তাকে ব্লাকমেইল করতে চাচ্ছিল, নাকি আন্দোলন ঘিরে আটক হাফিজুরের অন্যকোনো উদ্দেশ্য ছিল? সেটি খতিয়ে দেখতেই অধরাকে থানায় ডেকে নেওয়া হয়েছে।
এখানে উল্লেখ্য যে, গতকালই অধরা নামেই ছাত্রী নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনকারীদের পক্ষে ৯ দফা দাবি উত্থাপন করে বক্তব্য ও বিবৃতি পাঠ করেছিল।
উল্লেখ্য যে, বাসের ধাক্কায় কিংবা চাপা পড়ে যখনই আন্দোলনে গেছে শিক্ষার্থীরা, ততবারই আশ্বাসের বাণী শুনতে হয়েছে। কিছুদিন ভালো যায়। আবারো সড়কে রক্ত ঝড়ে, শিক্ষার্থীরা মারা যায়, ফেরে না সড়কে শৃঙ্খলা, অব্যবস্থাপনা কাটে না গণপরিবহনে। তাই কোনো আশ্বাস নয় আর বিশ্বাসও নয়।
রোববার (২৮ নভেম্বর) বেলা ১১টা থেকে নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থীর মৃত্যুর প্রতিবাদে, নিরাপদ সড়কের দাবি ও শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া নিশ্চিতের দাবিতে রাজধানীর ধানমন্ডি-২৭ এলাকার সড়ক অবরোধ করে ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর ও লালমাটিয়া এলাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
বিকেল পৌনে ৩টার দিকে সড়ক ছাড়লেও একই দাবিতে আগামীকাল সোমবার (২৯ নভেম্বর) সড়কে নামবেন তারা।
দুপুর থেকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ট্রাফিক পুলিশ সদস্যের সঙ্গে সড়কশৃঙ্খলায় নেমে পড়ে। রাস্তায় একপাশ আটকে আরেক পাশে যান চলাচলে সুযোগ করে দেয়। এই সময় যানবাহন ধরে ধরে কাগজপত্র দেখতে চায় শিক্ষার্থীরা।
চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলে পুলিশ ডেকে মামলার তোড়জোড় করতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে। এ সময় বিভিন্ন সরকারি দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, পুলিশ সাংবাদিক এমনকি মোটরসাইকেল নিয়ে বের হওয়া শিক্ষার্থীকেও ছাড়েনি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। লাইসেন্স না থাকলেই মামলা করতে হচ্ছিল ট্রাফিক সার্জেন্টকে।
শিক্ষার্থীদের রাস্তায় অবস্থানের কারণে মিরপুর-নিউমার্কেটগামী সড়কে যান চলাচল সীমিত করা হয়। মানিকমিয়া এভিনিউ মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের গাড়ি ডাইভারসন করতে দেখা যায়।
জেইউ/এআর//