চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে (চমেক) ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় ৩০ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছে কলেজ ছাত্রলীগের একাংশ। মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) রাতে চমেক ছাত্রলীগের সাত নেতা এক বিজ্ঞপ্তিতে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের একাডেমিক কাউন্সিল কর্তৃক ২৯ ও ৩০ অক্টোবর সংঘটিত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ সিদ্ধান্তে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ১৬ জনের মধ্যে মাত্র ৭ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পাশাপাশি ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট নয় এমন ২৩ জনকে কোনো ধরনের সাক্ষ্য প্রমাণ ছাড়াই বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রলীগ এ বিতর্কিত সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে এবং সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, চমেক ছাত্রলীগের রাজনীতি সমূলে উৎপাটন ও ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িতদের হেনস্তা করতে  ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এমন বিতর্কিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। 

এতে আরও বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের এক নেতা ও বিএমএ চট্টগ্রাম শাখার এক চিকিৎসক নেতার তালিকা অনুযায়ী চমেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. সাহেনা আকতার, অধ্যাপক ডা. মনোয়ারুল হক শামীম ও ডা. প্রণয় দত্তের প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে একাডেমিক কাউন্সিল এ ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চমেক শাখা ছাত্রলীগ অনতিবিলম্বে এই এক পাক্ষিক ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছে।  সেই সঙ্গে সঠিক তদন্ত করে উপযুক্ত তথ্য প্রমাণাদি সাপেক্ষে দোষীদের বিচারের আওতায় আনার জোর দাবি জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তি পাঠানো সাত ছাত্রলীগ নেতা হলেন- তৌফিকুর রহমান ইয়ন, খোরশেদুল ইসলাম, মো. ফয়েজ উল্লাহ, মোহাম্মদ সাইফ উল্লাহ, কে এম তানভীর, অভিজিৎ দাশ ও সাজেদুল ইসলাম হৃদয়। তারা ক্যাম্পাসে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

উল্লেখ্য, গত ২৯ অক্টোবর রাত ও ৩০ অক্টোবর চমেক ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এরপর অনির্দিষ্টকালের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হল বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। এরপর মঙ্গলবার চমেক একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় বিভিন্ন মেয়াদে ৩১ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া ২৭ নভেম্বর প্রতিষ্ঠানটি খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। 

মঙ্গলবার ঢাকা পোস্টকে বহিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চমেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. সাহেনা আক্তার। তিনি বলেন, ৩০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করা হয়েছে। এরমধ্যে ৮ জনকে দুই বছর, দুজনকে দেড় বছর ও ২১ জনকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। তারা কলেজের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করেছে। সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ থাকলেও তারা তা করেছে। এছাড়া নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়িয়েছে। এসব কারণে তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, কলেজে সভা-সমাবেশও নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কেউ আইন ভাঙলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ছাত্রীদের হল খুলে দেওয়া হবে। ছাত্রদের হল বন্ধ থাকবে। এছাড়া ছেলেদের হলের সিট বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে। নতুন করে সিট বরাদ্দ দিয়ে হল খোলা হবে। এর জন্য আবেদন করতে হবে। কলেজ খোলা থাকলেও ছেলেদের হল বন্ধ থাকবে।

কেএম/ওএফ