বিদেশ যেতে ইচ্ছুক নারীদের বিনা টাকায় বিদেশ পাঠানো, আকর্ষণীয় বেতনে বিভিন্ন পেশায় চাকরির প্রলোভন দেখানো হতো। শুধু তাই নয়, উল্টো নগদ টাকা হাতে ধরিয়ে, করোনা টেস্ট, ইমিগ্রেশনসহ সব কাজ করে দিত চক্রের সদস্যরা। কোনোরকম দুবাই পাঠিয়েই জিম্মি করে নারীদের ডিজে পার্টিতে দেহ ব্যবসাসহ বিভিন্ন অনৈতিক কাজে বাধ্য করা হতো। তবে বিদেশ গমনেচ্ছুক পুরুষদের একেকজনের কাছ থেকে নেওয়া হতো তিন থেকে চার লাখ টাকা। 

দুবাই পাচার চক্রের প্রধান জিয়া সেখানে অবস্থান করে পুরো সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে বলে মানবপাচারকারী চক্রের অন্যতম প্রধান মোহাম্মদ শামসুদ্দীনকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য জানিয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। এসময় তার (মোহাম্মদ শামসুদ্দীন) দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর উত্তরা থেকে পাচার হতে যাওয়া এক নারী ও তিন জন পুরুষকে উদ্ধার করা হয়।

পল্টন এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতারের পর সোমবার (২২ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজার মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন বলেন, মানবপাচারকারী চক্রের টার্গেট দরিদ্র মানুষ। পাচারকারীরা বিদেশে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে সহজ সরল মানুষকে ফাঁদে ফেলে নিয়ে যাচ্ছে অন্ধকার জগতে। পাচারকারীদের প্রলোভনের ফাঁদে অবৈধ পথে বিদেশ পাড়ি দিতে গিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছে অনেক মানুষ। যাদের অধিকাংশই নারী।

এসব নারীকে বিদেশে লোভনীয় ও আকর্ষণীয় বিভিন্ন পেশায় চাকরির কথা বলা হলেও তাদেরকে বিক্রি করে দেওয়া হয় এবং জোরপূর্বক সম্পৃক্ত করা হয় ডিজে পার্টি, দেহ ব্যবসাসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডে। জিয়ার নিয়ন্ত্রিত চক্রটি দুবাই, সিঙ্গাপুর এবং ভারতে নারী এবং পুরুষদের পাচার করে আসছে। এখন পর্যন্ত প্রায় শতাধিক নারী পুরুষকে পাচার করেছে চক্রটি। 

যেসব নারী বিদেশে যেতে ইচ্ছুক তাদের জনপ্রতি ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা করে দেওয়া হতো। আর পুরুষদের কাছ থেকে নেওয়া হতো জনপ্রতি তিন থেকে চার লাখ টাকা। দুবাই ড্যান্স ক্লাবে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে অনৈতিক কাজে বাধ্য করা হতো নারীদের। এ চক্রটি জাল এমপ্লয়মেন্ট কার্ড, বিএমইটি কার্ড তৈরি করেছে কোনো ফিঙ্গারপ্রিন্ট ছাড়াই।

আব্দুল্লাহ আল মোমেন বলেন, চক্রের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিদেশ যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করলে শেষ সময়ে যদি কেউ যেতে অপারগতা প্রকাশ করে তখন তাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করা হয়। টাকা দেওয়া সম্ভব না হলেও অনেকে বাধ্য হয়েই তাদের কথামতো বিদেশের পথে পাড়ি জমায়।

এই চক্রের মাধ্যমে যারা বিদেশে যাচ্ছে বিশেষ করে বাংলাদেশ বিমানবন্দর পার হওয়ার পর ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করে ভিডিও কলের মাধ্যমে জিয়ার সঙ্গে কথা বলে দেওয়া হয়। যাতে করে জিয়া নিশ্চিত হতে পারে সব প্রক্রিয়া শেষে নারী কিংবা পুরুষ প্লেনে উঠে দুবাই কিংবা সিঙ্গাপুর কিংবা ভারতে যাচ্ছে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে মোমেন জানান, বর্তমানে দুবাই অবস্থান করছে মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন (৩৭)। তার বাড়ি ফেনীতে। জিয়ার সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের যোগসাজশের প্রমাণ পাওয়া গেছে। বিভিন্ন কোম্পানি ও গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে এই প্রতারক চক্র মেয়েদেরকে বিদেশ যেতে প্রলুব্ধ করে। এর মাধ্যমে চক্রটি মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছে।

জেইউ/জেডএস