চোরাই ট্রাকে দলবেঁধে গাবতলীর তিন মার্কেটে ডাকাতি
বগুড়ার গাবতলীতে তিন মার্কেটের নিরাপত্তায় নিয়োজিত নৈশ প্রহরীদের হাত পা বেঁধে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনায় পাঁচজনকে আটক করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সদস্যরা।
সোমবার (২২ নভেম্বর) দুপুরে কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
বিজ্ঞাপন
খন্দকার আল মঈন জানান, এই দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনায় জড়িতরা বিভিন্ন জেলার মানুষ। তাদের পেশা ভিন্নভিন্ন হলেও ডাকাতিই তাদের মূল পেশা। গত ৬ নভেম্বর দিবাগত রাতে চোরাই করা ট্রাকে চড়ে দলবেঁধে বগুড়ার গাবতলী থানার দুর্গাহাটা বাজারে তিন মার্কেটে ডাকাতি করেন তারা।
মার্কেটের মুন্সি সুপার মার্কেট, পুকুর পাড় মার্কেট ও মসজিদ মার্কেটে অস্ত্রের মুখে নৈশ প্রহরীদের হাত পা ও মুখ বেঁধে মার্কেটগুলোর তালা কেটে ৯টি দোকানে দুধর্ষ ডাকাতি করে।
সংঘবদ্ধ এই ডাকাত চক্রটি স্বর্ণালংকার, ইলেকট্রনিক সামগ্রী, কাপড়, মোবাইলসহ প্রায় ২০ লাখ টাকার মালামাল ও নগদ অর্থ লুট করে। এ ঘটনায় দোকানের মালিকদের পক্ষ থেকে ঘটনার পরদিন গাবতলী থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি ডাকাতি মামলা করা হয়।
ঘটনাস্থলে প্রাথমিক তদন্ত, সিসিটিভি ফুটেজ ও নৈশ প্রহরীদের জিজ্ঞাসাবাদের সূত্র ধরেই সংঘবদ্ধ ডাকাত দলকে শনাক্ত করে। এরই ধারাবাহিকতায় রোববার (২১ নভেম্বর) রাতে র্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১২ আশুলিয়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ডাকাত দলের দলনেতা দেলোয়ার হোসেন (৩৫), মো. আব্দুল হালিম মিয়া জুয়েল (২৮), আলী হোসেন (৫৬), মো. সুমন মুন্সি (২০) ও মো. হুমায়ুন কবিরকে (৩৫) আটক করা হয়।
অভিযানে ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত একটি ম্যাগাজিনসহ পিস্তল, চার রাউন্ড গুলি, একটি বোল্ট কাটার, দুটি রাম দা, তিনটি শাবল, দুটি ছুরি, একটি কাঁচি, দশটি লাঠি, একটি হাতুড়ি ও একটি টর্চ লাইট ও একটি ট্রাক উদ্ধার করা হয়।
এ সময় তাদের কাছ থেকে দুর্গাহাটা বাজারে ডাকাতির সময় লুণ্ঠিত মালামালের মধ্যে স্বর্ণের ৩টি রুলির বালা, ৩টি নাকফুল, ১৫টি রুপার নূপুর, দুটি পিতলের বেঙ্গল চুড়ি, ইমিটেশনের ৩টি গলার হার, ৪টি গলার চেইন, ৩ জোড়া কানের দুল, ১টি বড় আংটি, ১টি ছোট আংটি ও ৩ জোড়া হাতের চুড়ি উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও তাদের কাছ থেকে লুণ্ঠনকৃত বিপুল পরিমাণ বস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
মঈন আরও বলেন, বিভিন্ন পেশার আড়ালে ডাকাতিই তাদের মূল পেশা। তাদের স্থায়ী নিবাস বিভিন্ন জেলায় হলেও সাভার ও এর আশেপাশের এলাকায় বসবাস করে এবং এ সংঘবদ্ধ আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সদস্য সংখ্যা ১২ থেকে ১৫ জন। সংঘবদ্ধ দলটি ট্রাকে করে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে ডাকাতি করে থাকে তারা। ইতোপূর্বে তারা ঢাকা, মানিকগঞ্জ, কালামপুর, বগুড়া, টাঙ্গাইল, সিংগাইর ও সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন জায়গায় দলবদ্ধভাবে ডাকাতি করেছে বলে জানায়।
গত ৭ নভেম্বর বগুড়ার গাবতলীতে ডাকাতির ঘটনায় বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, ডাকাত দলের সরদার দেলোয়ারের নির্দেশে তার দলের দুজন সহযোগী আটক হালিম এবং সুমন গত ২৬ ও ২৭ অক্টোবর দুর্গাহাটা বাজারে যায়। এসময় তারা মূল্যবান সামগ্রীসহ দোকান, রাত্রিকালে নৈশ প্রহরীর সংখ্যা ও অবস্থানের তথ্য সংগ্রহ করে। প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ শেষে দেলোয়ার ও কবির ডাকাতির বিস্তারিত পরিকল্পনা করে। দেলোয়ার ও কবির ডাকাত দলের অন্যান্য সদস্যদের একত্রিত করে ও পরিকল্পনা মোতাবেক ডাকাত দলের ৯ জন ঘটনার আগের দিন বিকেলে সাভারের নবীনগরে একত্রিত হয়ে বগুড়ার গাবতলীর উদ্দেশে ট্রাকে করে যাত্রা করে।
ডাকাতদের একটি দল বাজারে পাহারারত তিনজন নৈশ প্রহরীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাদের হাত-পা বেঁধে ফেলে। এসময় অপর দলটি আগে থেকে রেকি করা তিনটি মার্কেটের নয়টি দোকানের তালা ভেঙে দোকানের ভেতর রক্ষিত মূল্যবান দ্রব্য সামগ্রী লুট করে।
ডাকাতি করে সাভারের নবীনগরে আসার সময় লুণ্ঠনকরা মালামালের মধ্যে গার্মেন্টসের কাপড়ের আইটেমগুলো একটি মার্কেটে বিক্রি করে। ডাকাতিকালে টিভি, মোবাইল ও অর্থ তারা নিজেরা ভাগাভাগি করে নেয়। এছাড়াও বেশকিছু স্বর্ণালংকার তারা ঘটনার পরদিন অন্য দুটি মার্কেটের জুয়েলার্সের দোকানে বিক্রি করে বলে জানায়।
আটক দেলোয়ার হোসেন এই ডাকাত দলের সরদার। জিজ্ঞাসাবাদে দেলোয়ার স্বীকার করে যে গত ৬ থেকে ৭ বছর ধরে সে ডাকাতি করছে। ডাকাতির আগে সে তার দলের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ও পরিকল্পনা মোতাবেক বিভিন্ন জায়গায় ডাকাতি করে। ইতোপূর্বেও তারা মানিকগঞ্জ, কালামপুর, বগুড়া, টাঙ্গাইল, সিংগাইর, ঢাকা ও সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন জায়গায় দলবদ্ধভাবে ডাকাতি করেছে। তার নামে টাঙ্গাইলের বিভিন্ন থানায় চারটি ডাকাতিসহ চুরি ও মাদকের মামলা রয়েছে। ডাকাত দল ও লুণ্ঠনকরা মালামাল পরিবহনে আটক হুমায়ুন কবির একটি ট্রাক সরবরাহ করে ডাকাতিতে অংশগ্রহণ করে।
জিজ্ঞাসাবাদে কবির স্বীকার করে, ডাকাতির কাজে ব্যবহার করার উদ্দেশ্যেই সে এই ট্রাকটি চুরি করে ও আগেও এই ট্রাক দিয়ে তারা ডাকাতি করেছে। তার নামে ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা থানায় ডাকাতির একটি মামলা রয়েছে।
আটক আলী হোসেন, আব্দুল হালিম ও সুমন মুন্সি দুর্গাহাটা বাজারে সংগঠিত ডাকাতিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। ডাকাতিকালে বিভিন্ন দোকানের তালা ভাঙ্গা, মালামাল বস্তায় লোড ও সর্বশেষ ট্রাক লোডের কাজে সহায়তা করে।
জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, ডাকাতদলের সরদার দেলোয়ারের নেতৃত্বে আগেও তারা একাধিক স্থানে ডাকাতি করেছে। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ডাকাতি ও চুরির একাধিক মামলা রয়েছে। আন্তঃজেলা ডাকাত দলের পলাতক অন্যান্য সদস্যদের আটক ও লুণ্ঠনকরা অবশিষ্ট মালামাল উদ্ধারে অভিযান চলমান রয়েছে।
জেইউ/