অহেতুক হয়রানি নয়, প্রয়োজন হলেই আসামি গ্রেফতার
অহেতুক হয়রানি না করে, যখনই প্রয়োজন তখনই আসামি গ্রেফতার করা হবে বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মঈনউদ্দিন আবদুল্লাহ।
রোববার (২১ নভেম্বর) বিকেলে দুদকের ১৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সংস্থাটির আয়োজিত সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
দুর্নীতি মামলার আসামিদের কেন গ্রেফতার করা হয় না, এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, দুদক অযথা কাউকে হয়রানি করতে চায় না। দুদক কাজ করছে, এটা দেখানোর জন্য যদি গ্রেফতার করে, সেটা কাঙ্ক্ষিত হবে না। যখনই গ্রেফতার করার প্রয়োজন হবে, তখনই যেকোনো আসামিকে গ্রেফতার করা হবে।
মঈনউদ্দিন আবদুল্লাহ বলেন, জনগণের উদ্দেশে একটাই মেসেজ দুর্নীতি করবেন না, দুর্নীতি যারা করে তাদের বর্জন করবেন। তাদেরকে ঘৃণা করেন। আমরা নিজেরাই নিজেদের জিজ্ঞাসা করি আমি দুর্নীতিমুক্ত কি না। দুর্নীতির টাকা দিয়ে স্ত্রী-সন্তানকে খাওয়াবেন না। বাচ্চাদেরকে বলব, তোমরা দুর্নীতিবাজ পিতার সন্তান হয়ে থাকবে কি না চিন্তা করে দেখ। স্ত্রীদের বলব, আপনারা দুর্নীতিবাজ স্বামীর অর্থে চলবেন কি না চিন্তা করে দেখবেন। আর যারা চাকরি করছেন, তাদের বলব আপনারা দুর্নীতিবাজ নিয়োগদাতার চাকরি করবেন কি না ভাবুন। জনশ্রুতি আছে এমন দুর্নীতিবাজদের সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে।
সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দুদক ও সাংবাদিকদের মধ্যে কেনো দূরত্ব নেই। খোলা মন নিয়ে আলোচনা করলে সব সমস্যাই সমাধান সম্ভব। আমরা আপনাদের সঙ্গেই কাজ করতে চাই। আমরা আশা করি আপনারা আমাদের সাহায্য করবেন।
দুদক কর্মকর্তাদের দুর্নীতি প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে সংস্থাটির চেয়ারম্যান বলেন, দুদকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতির বিষয়ে অভ্যন্তরীণ কমিটি গঠিত হয়েছে। এই কমিটি ইতোমধ্যে দুটি সভা করেছে। আমরা অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান করছি। খুব শিগগিরই বিষয়টি শনাক্ত করব। দুর্নীতি দমনের ক্ষেত্রে ছোট-বড় বিষয় নেই, সবগুলো সমান চোখে দেখি।
আসামি পালিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আসামি বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে দুদকের কী করার আছে। আমরা আদালতের অনুমতি নিয়ে সংশ্লিষ্ট সব জায়গায় চিঠি দেই। এরপরও যদি পালিয়ে যায়, তাহলে যেখান থেকে পালিয়ে যাচ্ছে তাদের কাছে জানতে চাইতে পারেন।
বেসিক ব্যাংকের মামলা অনন্তকাল ধরে চলবে কি না এক প্রশ্নের জবাবে মঈনউদ্দিন আবদুল্লাহ বলেন, অনন্তকাল কোনো কিছুই চলতে পারে না। অবশ্যই এর পরিসমাপ্তি হবে। আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত শেষ করার জন্য।
অন্যদিকে দুদক কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হক বলেন, দুদক আইন অত্যন্ত শক্তিশালী। আইন সাহসিকতা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে মানতে হবে। লোভী মানুষ দিয়ে দুর্নীতি বন্ধ করা যাবে না। লোভী মানুষের মেরুদণ্ড দুর্বল। দুর্বল মানুষদের দিয়ে সবল কিছু আশা করা যায় না।
তিনি বলেন, মানিলন্ডারিং নিয়ে দুদককে দোষ দিয়ে লাভ নেই। দুদকের এ বিষয়ে কিছু করার নেই। অতি অল্প বিষয় রয়েছে দুদকের কাছে রয়েছে। এটা আপনাদের বলতে হবে, মানিল্ডারিংয়ের বড় অংশ সরকার আইন করে দুদকের কাছ থেকে নিয়ে গেছে। বেসরকারি পর্যায়ে হাজার হাজার নয়, লাখ লাখ কোটি টাকা মানিলন্ডারিং হয়। দুদকের কি করার আছে? কিছু করার নেই।
অনুষ্ঠানে দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) মো. মোজাম্মেল হক খান ও দুদক সচিব মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদারসহ সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠান শেষে দুদক বিটের সংগঠন র্যাকের পক্ষ থেকে সেরা রিপোর্টার অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়েছে। এবার মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের কাওসার সোহেলি, যুগান্তরের সিরাজুল ইসলাম ও বাংলা ট্রিবিউনের নুরুজ্জামান লাবু সেরা রিপোর্টার হিসাবে পুরস্কার পেয়েছেন।
আরএম/জেডএস