ছবি : ওয়াটারএইড

কোভিড-১৯ মহামারি পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জীবিকার ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলেছে। ফলে তাদের অনেকেই অতিরিক্ত সময় ধরে কাজ করছেন বা কোনো ক্ষতিপূরণ ছাড়াই অতিরিক্ত ঝুঁকি নিচ্ছেন।

ওয়াটারএইডের ‘স্যানিটেশন ওয়ার্কার্স : দ্য ফরগটেন ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কার্স ডিউরিং দ্য কোভিড-১৯ প্যান্ডেমিকস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। শনিবার গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ মহামারিতে দেশব্যাপী লকডাউন চলাকালে অনেক পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিরাপদ পানি, যথাযথ স্যানিটেশন এবং উন্নত স্বাস্থ্যসুবিধা ছাড়াই হাসপাতাল, কোয়ারেন্টাইন সেন্টার এবং সামাজিক পর্যায়ে ফ্রন্টলাইনে কাজ করেছেন।

ভাইরাসের হুমকি ছাড়াও পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে নানা বিপদ রয়েছে। পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের নানা স্বাস্থ্যবিষয়ক সমস্যা ও রোগের সংস্পর্শে আসার ঝুঁকি থাকে এবং তাদের প্রায়শই মনুষ্য-বর্জ্যের সরাসরি সংস্পর্শে আসতে হয়।

গর্তবিশিষ্ট টয়লেটের ধারালো অংশবিশেষ ও দুর্বল অবকাঠামোর ফলে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারেন। এ থেকে নির্গত বিষাক্ত গ্যাসের ফলে তারা জ্ঞান হারাতে পারেন, এমনকি এতে মৃত্যুঝুঁকিও রয়েছে।

প্রতিবেদনে ৫৫ বছর বয়সী কমলেশ টাঙ্ক নামে এক পরিচ্ছন্নকর্মীর কথা তুলে ধরা হয়েছে, যিনি গত ৩৫ বছর ধরে ভারতের রাজধানী দিল্লির কাছাকাছি একটি শহরে শুকনো টয়লেট পরিষ্কার করছেন। দুর্গন্ধের জন্য তিনি সাধারণত তার নাক ও মুখ ঢেকে রাখেন, কিন্তু এর জন্য কখনো বাড়তি কোনো সুরক্ষামূলক পোশাক ব্যবহার করেননি। মহামারি চলাকালে তিনি সামাজিক দূরত্বের বিষয়েও তেমন গুরুত্ব দেননি।

৩৪ বছর বয়সী বাংলাদেশি নারী কনা নাগমনি। তিনি সড়কের ঝাড়ুদার হিসেবে কাজ করেন। নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি বলেন, ঝাড়ু দেওয়ার সময় কখনো কখনো আমাকে মানুষের মলও পরিষ্কার করতে হয়। কিন্তু এ সময় মোছার জন্য একটি কাপড় ছাড়া আর কিছু থাকে না। আমি যেখানে কাজ করি, সেখানে আশেপাশে হাত ধোয়ার মতো কোনো জায়গা নেই। তাই হাত ধোয়ার জন্য আমাকে অফিসে ফিরে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।

প্রতিবেদনের ফলে দক্ষিণ এশিয়া, বুর্কিনা ফাসো ও নাইজেরিয়ার কেসগুলোকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরা হয়েছে। এ বিষয়ে ওয়াটারএইডের প্রধান নির্বাহী টিম ওয়েনরাইট বলেন, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ওয়াশ পরিষেবা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। চলমান ও ভবিষ্যৎ মহামারি থেকে সুরক্ষিত থাকতেও এটি অত্যাবশ্যকীয়। কিন্তু, পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের ছাড়া এটি চলমান থাকা সম্ভব নয়। সবার জন্য স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ও উন্নত ভবিষ্যৎ নিশ্চিতের লক্ষ্যে জনস্বাস্থ্যের পাশাপাশি অর্থনৈতিক দিকও বিবেচনায় রেখে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য বিনিয়োগ করা ও তাদের সমর্থন দেওয়া প্রয়োজন।

ওয়াটারএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান বলেন, সমাজে স্যানিটেশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মীদের পেশার কোনো স্বীকৃতি নেই। তারা সামাজিক অবজ্ঞা ও অর্থনৈতিক দুরাবস্থার সম্মুখীন হন, সেইসঙ্গে তারা স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন, যদিও তারাই অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় কাজ করার কারণে সবচেয়ে বেশি অসুস্থতার ঝুঁকিতে থাকেন। তাদের যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা এবং নিরাপদ কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করার সময় এসেছে।

তিনি আরও বলেন, বর্জ্য শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য পরিচালনা এবং বিমা ও সামাজিক সুরক্ষার প্রচারের জন্য সরকারি-বেসরকারি খাত, উন্নয়ন সংস্থা এবং কমিউনিটি পার্টনারদের একসঙ্গে কাজ করা উচিত।

বিশ্ব টয়লেট দিবসে সরকার, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ, নিয়োগকর্তা ও সাধারণ জনগণের প্রতি মহামারিকালের নীরব যোদ্ধা এই পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সুরক্ষা, সম্মান, সমর্থন এবং তাদের স্বার্থে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছে ওয়াটারএইড।

দেশের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের অধিকার নিশ্চিত করতে সরকার এবং এর প্রধান প্রধান অংশীদারদের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে ওয়াটারএইড। এ লক্ষ্যে তাদের সর্বশেষ উদ্যোগ ছিল কোভিড-১৯ টিকাদানের ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের অগ্রাধিকার দেওয়া।

টিকাদান কর্মসূচিতে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা যেন উপেক্ষিত না হন, তা নিশ্চিতে সারাদেশে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বেশ কয়েকটি নিবন্ধন পয়েন্ট স্থাপন করা হয়েছিল। সেইসঙ্গে মোবাইল রেজিস্ট্রেশন বুথ এবং ফলোআপের মাধ্যমে টিকাদান পরিচালনাও নিশ্চিত করা হয়েছিল।

আরএইচ