রোহিঙ্গা রেজুলেশন মিয়ানমারের ওপর রাজনৈতিক চাপ বাড়াবে
জাতিসংঘে প্রথমবারের মতো সর্বসম্মতিক্রমে রোহিঙ্গা রেজুলেশন গৃহীত হওয়ায় রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে মিয়ানমারের ওপর রাজনৈতিক চাপ বাড়াবে। তবে সিকিউরিটি কাউন্সিলে রোহিঙ্গা রেজুলেশন পাশ করার ক্ষেত্রে খুব একটা ভূমিকা রাখবে না বলে মনে করছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
বৃহস্পতিবার (১৮ নভেম্বর) রাজধানীর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজে (বিআইআইএসএস) ‘বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক’ শীর্ষক এক সেমিনারে শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
বিজ্ঞাপন
ড. মোমেন বলেন, ‘আমাদের জন্য সুখবর হচ্ছে, জাতিসংঘে সর্বসম্মতিক্রমে রোহিঙ্গা রেজুলেশন গৃহীত হয়েছে। আমাদের অনেক দিনের চেষ্টার পর এটা সম্ভব হয়েছে। আমরা খুব খুশি। এই রেজুলেশন পাস হওয়ায় রাজনৈতিক একটা উপকার পাওয়া যাবে। এটা মিয়ানমারের ওপর চাপ বাড়াবে। আমরা সিকিউরিটি কাউন্সিলে এটা এখনো পাস করাতে পারিনি। আমরা আশাবাদী, আগামীতে এটা পারব।’
বুধবার জাতিসংঘে ‘মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিমসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানবাধিকার পরিস্থিতি’ শীর্ষক রেজুলেশনটি গৃহীত হয়। রেজুলেশনটি যৌথভাবে উত্থাপন করে ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।
জাতিসংঘে পাস হওয়া রোহিঙ্গা রেজুলেশন নিরাপত্তা পরিষদে পাস করতে ভূমিকা রাখবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে মোমেন বলেন, ‘সিকিউরিটি কাউন্সিলে রেজুলেশন পাস করাটা খুব জরুরি। সিকিউরিটি কাউন্সিলে পাস করোনোর ক্ষেত্রে এটা আসলে বেশি ভূমিকা রাখবে না। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে রেজুলেশন পাস হয় সিকিউরিটি কাউন্সিলের আগ্রহে। পাঁচ সদস্য এক না হলে এটা হয় না।’
রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘে অতীতে কোনো রেজুলেশন পাস করার ক্ষেত্রে বরাবরই ভেটো দিয়েছে চীন ও রাশিয়া। তবে এবারের রেজুলেশনে তারা কোনো ভেটো দেয়নি। বিষয়টি ইতিবাচক আখ্যা দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যারা আগে বাধা দিত, চীন-রাশিয়া এবার বাধা দেয়নি। তারা এবার চুপ ছিল। এটা আমাদের জন্য সুখবর। তারাও চায় রোহিঙ্গাদের সমস্যা দূর হোক। রাশিয়ার সঙ্গে আমার আলাপ হয়েছে, চায়নাও কিছু ইনিশিয়েটিভ নিয়েছে; রোহিঙ্গারা দেশে ফেরত যাবে তাদের ভালো ভবিষ্যতের জন্য।’
এ সময় মোমেন জাতিসংঘে পাস হওয়া রেজুলেশনে বাংলাদেশের সংগ্রামের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘বিগত রেজুলেশনে জাতিসংঘে রোহিঙ্গা ইস্যুতে যে রেজুলেশন পাস হয় সেখানে তাদের প্রত্যাবাসনের কোনো বিষয় যুক্ত ছিল না। আমরা অনেক দিন ধরে চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমরা আমাদের বক্তব্য জোরালোভাবে তুলে ধরেছি। আমরা বলি, ১১ লাখ রোহিঙ্গার ফেরত নেওয়ার কথা উঠে নাই। আমরা জাতিসংঘ এবং জেনেভায় এটা নিয়ে কাজ করি, কথা বলি। এটা হয়েছে, এতে আমরা খুব খুশি।’
জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন জানায়, বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও মানবিক সহায়তা প্রদান এবং করোনা টিকাদান কর্মসূচিতে তাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে বাংলাদেশ যে উদারতা ও মানবিকতা প্রদর্শন করেছে, রেজুলেশনটিতে তার ভূয়সী প্রশংসা করা হয়। কক্সবাজারের অত্যন্ত জনাকীর্ণ আশ্রয় ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের একটি অংশকে ভাসানচরে স্থানান্তর এবং এ লক্ষ্যে এখানে অবকাঠামোসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা তৈরির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রচেষ্টা ও বিনিয়োগেরও স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ও জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের মধ্যকার সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরকে স্বাগত জানানো হয়।
রেজুলেশনটিতে প্রাথমিকভাবে দৃষ্টি দেওয়া হয়েছে, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানবাধিকার পরিস্থিতি এবং চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারে জরুরি অবস্থা জারির প্রেক্ষাপটের মতো বিষয়গুলোর প্রতি। রোহিঙ্গা সমস্যার মূল কারণ খুঁজে বের করা, বাংলাদেশের সঙ্গে স্বাক্ষরিত দ্বি-পাক্ষিক চুক্তির বাধ্যবাধকতাগুলো পূরণ করা এবং মিয়ানমারে নিযুক্ত জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূতসহ জাতিসংঘের সকল মানবাধিকার ব্যবস্থাপনাকে পূর্ণ সহযোগিতা প্রদান করতে এবারের রেজুলেশনে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। চলমান বিচার ও দায়বদ্ধতা নিরূপণ প্রক্রিয়ার ওপর রেজুলেশনটিতে সজাগ দৃষ্টি বজায় রাখার কথা বলা হয়েছে।
এতে মিয়ানমারে নবনিযুক্ত জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূতকে স্বাগত জানানো হয়েছে এবং মিয়ানমারকে সম্পৃক্ত করে তার জন্য একটি কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণের কথাও বলা হয়েছে। রাখাইন রাজ্যে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টির ক্ষেত্রে মিয়ানমার, ইউএনএইচসিআর ও ইউএনডিপির মধ্যে স্বাক্ষরিত ত্রি-পাক্ষিক সমঝোতা স্মারকটি নবায়ন ও এর কার্যকর বাস্তবায়নের কথা উল্লেখ করা হয়েছে রেজুলেশনটিতে।
এনআই/ওএফ