মিথ্যা তথ্য দিয়ে বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইনান্স করপোরেশন (বিএইচবিএফসি) থেকে ঋণ নিলে আগের চেয়ে বেশি সাজার বিধান রেখে বিদ্যমান আইন সংশোধনের প্রস্তাব জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৮ নভেম্বর) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ‘বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইনান্স করপোরেশন (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল- ২০২১’ সংসদে পাসের জন্য তোলেন। পরে সেটি কণ্ঠ ভোটে পাস হয়।

এর আগে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও বিএনপির সদস্যদের বিলটির জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে পাঠানো এবং সংশোধনী প্রস্তাবগুলোর নিষ্পত্তি করেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।

গত জুন মাসে বিলটি সংসদে তোলেন অর্থমন্ত্রী। পরে সেটি পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।

বর্তমান আইনে বলা আছে, করপোরেশনের কাছ থেকে কেউ যদি ঋণ গ্রহণে ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা বিবরণী দেন বা জেনে শুনে মিথ্যা বিবরণী ব্যবহার করেন বা করপোরেশনে যেকোনো ধরনের জামানত গ্রহণে প্রবৃত্ত করেন তাহলে দুই বছর কারাদণ্ড, দুই হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। বিলে সেটাকে বাড়িয়ে পাঁচ বছর কারাদণ্ড এবং পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হয়েছে।

লিখিত সম্মতি ছাড়া প্রসপেক্টাসে বা বিজ্ঞাপনে বিএইচবিএফসির নাম ব্যবহারের সাজা হিসেবে আগে ছয় মাসের কারাদণ্ড ও এক হাজার টাকা জরিমানা ছিল। জরিমানা বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে খসড়ায়।

বিদ্যমান আইনে অনুমোদিত মূলধন ১১০ কোটি আর পরিশোধিত মূলধন ছিল ১১০ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত আইনে এক হাজার কোটি টাকা হচ্ছে অনুমোদিত মূলধন আর ৫০০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের বিধান রাখা হয়েছে।

বিলে বলা হয়, পরিচালকের মেয়াদ সরকারের সন্তুষ্টিক্রমে দুই মেয়াদের অনূর্ধ্ব তিন বছর সময় পর্যন্ত বহাল থাকবে। করপোরেশন সরকারের কাছ থেকে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ নিতে পারবে।

বিলের উদ্দেশ ও কারণ সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, করপোরেশনের কার্যপরিধি বিস্তৃতির সাথে সাথে অনুমোদিত ও পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ বৃদ্ধি, পরিচালনা পর্ষদের গঠন সুনির্দিষ্টকরণ, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, তহবিল সংগ্রহের লক্ষ্যে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি সম্পাদনসহ ঋণ গ্রহণ, অপরাধের শাস্তির পরিমাণ বৃদ্ধি, অপরাধের আমলযোগ্যতা, জামিনযোগ্যতা, ফৌজদারি কার্যবিধির প্রয়োগ ও অর্থদণ্ড আরোপের ক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেটের বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগের বিধান সংযোজনসহ অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে সংগতি রেখে বিদ্যমান আইন সংশোধনের লক্ষ্যে বিলটি আনা হয়েছে।

বিলটির জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব ওঠানোর সময় জাপার সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী প্রথমবার ফ্ল্যাট নির্মাণকারীদের জন্য স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়ার দাবি করেন। তিনি আরও বলেন, মিথ্যা তথ্য দিয়ে ঋণ নেওয়ার চেষ্টা করলে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। তিনি দাবি করেন, যেসব কর্মকর্তা মিথ্যা তথ্য দেখেও ঋণ দেন তাদের শাস্তির বিধান রাখতে হবে। সংশোধনী প্রস্তাব ওঠানোর সময় তিনি শহর এলাকার সঙ্গে গ্রামেও গৃহঋণ দেওয়ার দাবি জানান।

জাপার আরেক সদস্য পীর ফজলুর রহমান বলেন, সরকারি কর্মকর্তারা পাঁচ শতাংশ সুদে ৭৫ লাখ টাকা পর্যন্ত গৃহঋণ পান। এ সুযোগ সবার জন্য উন্মুক্ত করা হোক।

বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ সহজ শর্তে স্বল্পআয়ের মানুষদের গৃহঋণ দেওয়ার দাবি করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির এ সদস্য অভিযোগ করেন, বিলটি নিয়ে আলোচনার জন্য সংসদীয় কমিটির বৈঠকের নোটিশ তিনি ঠিক সময়ে পাননি। নিয়ম অনুযায়ী কার্যপত্রও পাননি বলে অভিযোগ করেন তিনি।

তিনি বলেন, মাননীয় স্পিকার আপনি সংসদের সভাপতি, বিষয়টি আপনার অবগতির জন্য জানালাম। দুটো গুরুত্বপূর্ণ বিল। আমি নোটিশ পেলাম আগের দিন বিকেলে। বলল কার্যপত্র বৈঠকের দিন দুপুর ১২টার সময় পাঠাবেন। গৃহহীনদের বিনা সুদে ঋণ দেওয়ার দাবি করেন বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ।

সংশোধনী প্রস্তাব তোলার সময় জাপার ফখরুল ইমাম বলেন, অর্থমন্ত্রী এখন কম কবিতা বলেন। আগে তিনি এমন ছিলেন না। তিনি কথা বললে আমরা এডুকেটেড হই। তবে বিরোধী সংসদ সদস্যদের এসব কথার জবাবে অর্থমন্ত্রী কিছু বলেননি।

এইউএ/এসএসএইচ