প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জলবায়ু ইস্যুতে আমি বিশ্ব নেতাদের একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে পাঁচ দফা প্রস্তাব উত্থাপন করেছি।

বুধবার (১৭ নভেম্বর) সরকারি বাসভবন গণভবনে সাম্প্রতিক জলবায়ু সম্মেলন ও ফ্রান্স সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৬ লন্ডন এবং ফ্রান্সে দুই সপ্তাহের সফর শেষে গত ১৪ নভেম্বর সকালে দেশে ফিরি। কপ-২৬ সম্মেলনের মূল অংশ ওয়ার্ল্ড লিডার্স সামিট ও সাইড ইভেন্ট মিলিয়ে দুই দিনে আমি ৬টি বহুপাক্ষিক সভা ও ৫টি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশ নিই। কোভিড-পরবর্তী বিশ্ব ব্যবস্থায় ৪৮টি দেশের সংগঠন ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম-সিডিএফের বর্তমান সভাপতি হিসেবে কপ-২৬ শীর্ষ সম্মেলনে আমার অংশগ্রহণ বাংলাদেশ এবং সিডিএফ সদস্য দেশগুলোর স্বার্থ সংরক্ষণে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

তিনি বলেন, সম্মেলনের প্রথম দিন ২ নভেম্বর সকালে আমি সিভিএফের চেয়ার হিসেবে বাংলাদেশ ও কমনওয়েলথের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত দ্য সিভিএফ কমনওয়েলথ হাই লেভেল প্যানেল ডিসকাশন শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করি। আমি কমনওয়েলথ ও সিভিএফের মধ্যে কার্যকর অংশীদারত্ব গড়ে তুলতে পরামর্শ প্রদান করি।

তিনি বলেন, সম্প্রতি ইউনিএফসিসিসির নিকট হালনাগাদকৃত ন্যাশনাল ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশন প্রদান, মুজিব ক্লাইমেট প্রোসপারিটি প্ল্যান ও বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ডসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন উদ্যোগের বিষয় অবহিত করি। পাশাপাশি, সিডিএফের সভাপতি হিসেবে আমি একটি ক্লাইমেট ইমার্জেন্সি প্যাক্ট গঠনের প্রয়াসের কথা বিশ্ব নেতাদের সমানে তুলে ধরি।

সরকার প্রধান বলেন, আমার বক্তব্যে আমি বিশ্ব নেতৃত্বকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে পাঁচ দফা প্রস্তাব উত্থাপন করি। এগুলো হচ্ছে; কার্বন নির্গমনকারী দেশসমূহকে উচ্চাভিলাষী, এনডিসি প্রণয়ন, উন্নত দেশগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অভিযোজন ও প্রশমনের জন্য ৫০:৫০ অনুপাতে বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুত অর্থায়ন নিশ্চিত করা, পরিবেশবান্ধব উন্নত প্রযুক্তিতে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর প্রবেশাধিকার লস অ্যান্ড ম্যানেজমেন্টসহ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট উদ্বাস্তু সমস্যার সমাধানে একযোগে কাজ করা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে তোলা।

তিনি বলেন, শীর্ষ সম্মেলনের পর যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের আমন্ত্রণে আমি অ্যাকশন অ্যান্ড সলিডারিটি-দ্য ক্রিটিক্যাল ডিকেড- শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণ করি। বৈঠকটি যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ও ইতালির প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাঘির যৌথ সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে প্রায় ৩০টি দেশের রাষ্ট্র বা সরকার প্রধান উপস্থিত ছিলেন। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশের গৃহীত পদক্ষেপসমূহ এবং প্যারিস চুক্তির লক্ষ্যসমূহ বাস্তবায়নে চলমান কপ-২৬ এ কী ধরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন তার ওপর আমি আলোকপাত করি।

শেখ হাসিনা বলেন, বিকেলে বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের কো-চেয়ার বিল গেটস আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। আমি বিল গেটসকে বাংলাদেশের স্থানীয় অভিযোজন মডেলগুলোয় গেটস ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঝুঁকিপূর্ণ অন্যান্য দেশসমূহে কাজে লাগানোর আহ্বান জানাই। কপ-২৬ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন ২ নভেম্বর সকালে সম্মেলনের সভাপতি অলোক শর্মার সঙ্গে আমার দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়। অলোক শৰ্মা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য রুশনারা আলী ও লর্ড নিতেশ গারিয়ার আমন্ত্রণে একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। ওই অনুষ্ঠানে ‘বাংলাদেশ অ্যাট ৫০, আ রেসিলিয়েন্ট ডেলটা’ শীর্ষক একটি কি-নোট উপস্থাপন করেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

পিএসডি/এইউএ/এসকেডি