পেছনের দরজার আদেশ আইন বিভাগের জন্য স্বস্তিদায়ক নয় : এমপি শামীম
দায়িত্বপালন থেকে বিরত থাকার জন্য বিচারক বেগম মোছা. কামরুন্নাহারকে দেওয়া চিঠির সমালোচনা করেছেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী।
তিনি বলেন, বিচারক বেগম মোছা. কামরুন্নাহারকে দায়িত্ব পালনে বিরত থাকার জন্য আইনমন্ত্রী আনিসুল হক প্রধান বিচারপতিকে যে চিঠি লিখেছেন তা ব্যাক ডোরের নির্বাহী আদেশ। এ ধরনের আদেশ বিচার বিভাগের জন্য স্বস্তিদায়ক নয়।
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার (১৬ নভেম্বর) একাদশ জাতীয় সংসদের পঞ্চদশ অধিবেশনে পাসের জন্য উত্থাপিত বিরোধীদলীয় নেতা ও উপনেতা (পারিতোষিক ও বিশেষাধিকার) বিল-২০২১টি বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাবের ওপর আলোচনাকালে তিনি কথা বলেন। জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এ অধিবেশন শুরু হয়।
আলোচনায় শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, সংবিধানর ১১৬ (এ) অনুযায়ী বিচার বিভাগ অধস্তন আদালত ও ম্যাজিস্ট্রেট স্বাধীনভাবে কাজ করবে। মন্ত্রী (আইনমন্ত্রী) মহোদয় তিন-চার দিন আগে প্রধান বিচারপতির কাছে চিঠি দিয়েছেন, একজন নারী বিচারপতিকে বদলি করার ব্যাপারে। উনি যে চিঠিটা দিয়েছেন, সেটা কি উনি রায় পাওয়ার পর দিয়েছেন। কারণ রায়তো এখনও লেখা হওয়ার কথা না। করলে তো পত্রিকার রিপোর্টের ভিত্তিতেই করেছেন।
তিনি বলেন, আইনমন্ত্রী এমন নির্দেশনা দিতে পারেন কি-না? যে একজন বিচারককে এখান থেকে সরিয়ে ওখানে দেওয়ার অনুরোধ করছি। এটাতো অনুরোধ থাকে না। এটাতো পেছনের দরজা দিয়ে নির্বাহী আদেশ। এ ধরনের পেছনের দরজার আদেশতো আইন বিভাগের জন্য স্বস্তিদায়ক না।
এমপি শামীম বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি সাবেক প্রধান বিচারপতির বিচার হচ্ছে। বিচারককে বদলি করা হচ্ছে। তিনজন বিচারপতিকে এজলাসের বাইরে রাখা হচ্ছে। একটা উইংয়ের ওপর অনেক বেশি বিচার করা হচ্ছে। অন্যান্য উইংয়ের হচ্ছে না। সচিবদেরতো বিচার হচ্ছে না। অনেক মন্ত্রী-এমপিদেরও হচ্ছে না। এর মাধ্যমে বিচারকদের আরও দুর্বল করার চেষ্টা হচ্ছে।
তবে বিচারকের বিচারিক ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ায় আইনমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান জাপা সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম, পীর ফজলুর রহমান।
শামীম হায়দার পাটোয়ারীর বক্তব্যের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, আমি কিন্তু বিচারিক রায়ের বিষয়ে কোনো কথা বলিনি। আমি বলেছি উনি বিচার যা করেছেন, ওনার ব্যাপার। সেটা আপিলে সিদ্ধান্ত হবে। আমার আপত্তিটা হলো, উনি বলেছিলেন কোনো ধর্ষণ মামলা ৭২ ঘণ্টা পরে নেওয়া যাবে না। ফৌজদারি মামলা কোনো দিন-সময় দ্বারা বাড়িত হয় না। যদি সেটা হতো তাহলে আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার বিচার করতে পারতাম না।
তিনি বলেন, আমি বিচার বিভাগের প্রধানের কাছে চিঠি লিখেছি। মাননীয় প্রধান বিচারপতি এ ব্যাপারটা আপনি একটু দেখবেন। আমি জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে এটা করেছি। অন্যায় করেছি? ওনার যদি বলেন, অন্যায় করেছি। সেটা বলতে পারেন। কিন্তু জনগণের চোখে আমি অন্যায় করি নাই।
রাজধানীর বনানীতে রেইনট্রি হোটেলে দুই নারীকে ধর্ষণের বহুল আলোচিত মামলায় গত বৃহস্পতিবার পাঁচ আসামির সবাইকে খালাস দিয়ে রায় দেন ঢাকার ৭ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক কামরুন্নাহার। এর রায়ের পর্যবেক্ষণ নিয়ে দেশজুড়ে সমালোচনা হয়। পরে এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ওই বিচারককে আইন মন্ত্রণালয়ে আইন ও বিচার বিভাগে সংযুক্ত করা হয়।
এইউএ/এসএম