কী কারণে বাস বন্ধ জানেন না অধিকাংশ যাত্রী
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে বাসসহ ডিজেলচালিত সব যানবাহনের ভাড়া বাড়িয়েছে সরকার। যদিও ভাড়া বৃদ্ধির এ প্রক্রিয়া নিয়ে শুরু থেকেই সাধারণ যাত্রীদের অভিযোগ ছিল। সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হওয়ার পর থেকেই সিনজিচালিত সব যানবাহনও বাড়তি ভাড়া আদায় করছিল। এ নিয়ে প্রত্যেক দিন বাসে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে।
এদিকে বাড়তি ভাড়া আদায় নিয়ে মঙ্গলবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে মিরপুরে বাগবিতণ্ডায় জড়ান যাত্রী ও চালকরা। এরই জেরে দুপুর ২টার পর থেকে মিরপুর এলাকায় সব বাস চলাচল বন্ধ করে দেন চালকরা। হঠাৎ বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা।
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার (১৬ নভেম্বর) বিকেলে মিরপুর-১২, মিরপুর-১০, মিরপুর-১ নম্বর, মিরপুর ২ নম্বর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সব যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। অধিকাংশ বাসই রাস্তার পাশে পার্কিং করে রাখা। তবে বাসের আশায় রাস্তায় অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেছে যাত্রীদের। অধিকাংশ যাত্রী জানেন না কেন বাস চলাচল করছে না। তারা ধারণা করছেন, রাস্তায় হয়ত যানজট আছে তাই বাস আসছে না। পরবর্তীতে যখন জানতে পারছেন যে, বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে তখন চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
উত্তরাগামী যাত্রী রশিদ বলেন, জরুরি কাজে উত্তরা যাওয়া প্রয়োজন। বাসের জন্য অপেক্ষা করছি। কিন্তু দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও বাসের দেখা পাচ্ছি না। যে দুই একটা বাস আসছে সেগুলোও মিরপুর ১ ও ২ নম্বরের যাত্রী নিচ্ছে। কী কারণে বাস বন্ধ রয়েছে সেটাও জানি না।
তিনি বলেন, কয়েকজন যাত্রীর কাছ থেকে জানতে পারলাম বাসচালকরা ধর্মঘটে গেছেন। এজন্য বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। কিন্তু কবে থেকে তারা এ ধর্মঘট শুরু করেছেন সেটা তো আমারা জানতে পারলাম না। আসলে সব কিছুই তাদের ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। এখানে সব সময় যাত্রীদেরই ভোগান্তি পোহাতে হয়। চালক কিংবা বাস মালিকদের কোনো সমস্যা নেই।
মামুন নামে আরেক যাত্রী উত্তরায় যাওয়ার জন্য এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে দাঁড়িয়ে আছেন মিরপুর-১০ নম্বরে। কিন্তু এ সময়েও উত্তরা যাওয়ার জন্য কোনো বাস পাননি তিনি। ঠিক কী কারণে বাস যাচ্ছে না সেটাও জানেন না এ যাত্রী।
তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি উত্তরা হাউজ বিল্ডিং যাব। এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে মিরপুর-১০ নম্বরে অপেক্ষা করছি। কিন্তু কোনো বাস পেলাম না। সব বাসের হেলপার বলছে, মিরপুর-১২ নম্বর যাবে।
এক প্রশ্নের জবাবে মামুন বলেন, কী কারণে বাস যাচ্ছে না, সেটা আমি নিজেও জানি না। কেউ বলছে তেলের দাম না কমা পর্যন্ত বাস বন্ধ থাকবে। কেউ বলছে ভাড়া বৃদ্ধি সঠিকভাবে কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত বাস চলাচল বন্ধ থাকবে। একেকজন একেক কথা বলছে। আবাস না পেয়ে সিএনজি অটোরিকশায় যাওয়ার জন্য ভাড়া জিজ্ঞেস করেছিলাম। কিন্তু সিএনজিতে ৫০০ টাকা ভাড়া চেয়েছে। আশা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি, একটা গাড়ি পেলে কষ্ট করে চলে যাব।
অন্যদিকে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিরুদ্ধে। যাত্রীদের অভিযোগ, বাস চলাচল বন্ধ থাকার সুযোগে যাত্রীদের জিম্মি করে বাড়তি ভাড়া আদায় করছেন অটোরিকশা চালকরা।
বিকল্প পরিবহনের হেলপার শরিফ ঢাকা পোস্টকে বলেন, মালিক ফোনে জানিয়েছেন গাড়ি মিরপুর-১২ নম্বর নিয়ে পার্কিং করে রাখতে। এ সমস্যার সমাধান না হলে গাড়ি বের না করতে নির্দেশ দিয়েছেন মালিক। এজন্যই মিরপুর-১২ নম্বরের যাত্রী ডাকা হচ্ছে। পরবর্তী নির্দেশ না পেলে ১২ নম্বর থেকে গাড়ি বের করা হবে না।
প্রজাপতি পরিবহনের কন্ট্রাক্টর রিয়াজ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের গাড়ি মিরপুর-১ নম্বর নিয়ে পার্ক করব। ডিজেলের দাম বাড়ায় আমাদের ভাড়া বেড়েছে। কিন্তু বেশিরভাগ যাত্রী অতিরিক্ত ভাড়া দিতে চায় না। এজন্য সমস্যা তৈরি হয়েছে। হয় তেলের দাম কমাতে হবে অথবা যাত্রীদের নির্ধারিত ভাড়া দিতে হবে। এই সমস্যার সমাধান না হলে আমরা আর গাড়ি চালাব না।
এদিকে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভাড়া নিয়ে গণ্ডগোলের জেরে চালকদের একটি অংশ বাস চালানো বন্ধ রেখেছেন। আমরা সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি। হঠাৎ করে তেলের দাম বৃদ্ধিতে বাসের ভাড়া বেড়েছে। আমরা সরকার নির্ধারিত ভাড়াই যাত্রীদের কাছ থেকে নিচ্ছি। তারপরও অনেক যাত্রী এটা মানতে পারছে না।
এর আগে, দুপুর ১টার দিকে মিরপুরের কালশীতে কয়েকজন যাত্রী একটি বাসের দুই কর্মচারীকে মারপিট করেন বলে জানান ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক তপন মাহমুদ। এর প্রতিবাদে চালকরা বাস চালানো বন্ধ করে দেন। কালশীতে পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
গত রোববার (১৪ নভেম্বর) থেকে রাজধানীতে কোনো ধরনের সিটিং সার্ভিস অথবা গেট লক সার্ভিস বাস থাকবে না বলে জানিয়েছিলেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ। ১০ নভেম্বর দুপুরে রাজধানীর কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউয়ে সংগঠনটির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ ঘোষণা দিয়েছিলেন।
তখন এনায়েত উল্যাহ বলেছিলেন, সিটিং সার্ভিসে কোনো নিয়মনীতি নেই। বাসগুলো নিজের মতো করে যাত্রী পরিবহন করে। এতে ভোগান্তি হয় যাত্রীদের। তাই ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় সিটিং সার্ভিস এবং গেট লক সার্ভিস থাকবে না।
বাসভাড়া পুনঃনির্ধারণ ও বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বাস-মিনিবাসের ভাড়া পুনঃনির্ধারণ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে, ঢাকা ও দূরপাল্লার বাস-মিনিবাসের ৮০-৯০ শতাংশ সিএনজিচালিত। সিএনজিচালিত বাসে বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করা হয়। কিন্তু ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় ১২০টি পরিবহন কোম্পানির মধ্যে মাত্র ১৩ কোম্পানির বাস সিএনজিচালিত। যা সংখ্যায় মাত্র ১৯৬টি। এটি মোট গণপরিবহনের মাত্র ৩ দশমিক ২৬ শতাংশ।
এসআর/এসকেডি