সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যাদের করোনার টিকা দেবে তাদের তালিকা সংসদে প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

বুধবার (২৭ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তরে টাঙ্গাইল-১ আসনে আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য আহসানুল ইসলামের (টিটু) এ সংক্রান্ত একটি প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ তথ্য জানান।

এরইমধ্যে ২০ লাখ ভারতের উপহার ও সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে কেনা ৫০ লাখ টিকা দেশে পৌঁছানোর প্রসঙ্গ টেনে ওই সংসদ সদস্যের প্রশ্নের জবাবে সরকার প্রধান বলেন, সেরামের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী আগামী ৬ মাসের মধ্যে সব টিকার সরবরাহ পাওয়া যাবে। এর বাইরে প্রয়োজন অনুযায়ী আরও টিকা কেনার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে।

আহসানুল ইসলামের প্রশ্নের জবাবে যথাসময়ে করোনাভাইরাসের টিকা পাওয়ার বিষয়ে সরকার শুরু থেকেই উদ্যোগ নিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সরকার ইতোমধ্যে সেরাম ইনস্টিটিউট এবং বেক্সিমকোর মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের ৩ কোটি বা তার বেশি ডোজ ভ্যাকসিন ক্রয় করার ব্যবস্থা সম্পন্ন করেছে। এই ভ্যাকসিন চলতি জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহেই বাংলাদেশে আসবে বলে আশা করা যায়।

প্রধানমন্ত্রীর উপস্থাপিত তথ্য অনুযায়ী যারা পাবেন টিকা
কোভিড-১৯ স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত চার লাখ ৫২ হাজার ২৭ জন স্বাস্থ্যকর্মী, অনুমোদিত ছয় লাখ বেসরকারি ও প্রাইভেট স্বাস্থ্যকর্মী, দুই লাখ ১০ হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধা, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাঁচ লাখ ৪৬ হাজার ৬২০ জন সদস্য, সামরিক ও বেসামরিক প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্য তিন লাখ ৬০ হাজার ৯১৩ জন, রাষ্ট্র পরিচালনায় অপরিহার্য ৫০ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী, ৫০ হাজার গণমাধ্যমকর্মী, এক লাখ ৭৮ হাজার ২৯৮ জন জনপ্রতিনিধি, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার দেড় লাখ কর্মচারী, পাঁচ লাখ ৪১ হাজার ধর্মীয় প্রতিনিধি, মরদেহ সৎকারে নিয়োজিত ৭৫ হাজার ব্যক্তি, জরুরি সেবার (পানি, গ্যাস, পয়ঃনিষ্কাশন, বিদ্যুৎ, ফায়ার সার্ভিস, পরিবহন কর্মী) চার লাখ কর্মী, স্থল, নৌ ও বিমান বন্দরের দেড় লাখ কর্মী, এক লাখ ২০ হাজার প্রবাসী অদক্ষ শ্রমিক, জেলা-উপজেলায় কর্মরত চার লাখ জরুরি সেবায় নিয়োজিত সরকারি কর্মচারী, এক লাখ ৯৭ হাজার ৬২১ জন ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারী, স্বল্প রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার (যক্ষ্মা, এইডস, ক্যান্সার) ছয় লাখ ২৫ হাজার জনগোষ্ঠী, ৬৪ থেকে ৭৯ বছর বয়সী এক কোটি তিন লাখ ২৬ হাজার ৬৫৮ জন্য ব্যক্তি, ৮০ বছর ও তদূর্ধ্ব ১৩ লাখ ১২ হাজার ৯৭৩ জন জনগোষ্ঠী, জাতীয় দলের খেলোয়াড় ২১ হাজার ৮৬৩ জন এবং বাফার, ইমারজেন্সি, আউটব্রেক ১ লাখ ৭০ হাজার জন।

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মসিউর রহমান রাঙার প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, বিভিন্ন দেশ, বহুপক্ষীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এমডিবি) ও জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা থেকে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় এক হাজার ৮১৭ মিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ঋণ সুবিধা এক হাজার ৬৪০ ডলার এবং অনুদান ১৭৭ দশমিক ৩৬ মিলিয়ন। এসব প্রতিশ্রুতির মধ্যে এক হাজার ৫২০ দশমিক ৬৬ মিলিয়ন ডলার অর্থ ছাড় হয়েছে। কোভিড-১৯ মোকাবিলায় আগামীতে বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও ফ্রান্স থেকে এক হাজার ৯১৮ মিলিয়ন ডলার সহায়তা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও করোনা টিকার অর্থায়নসহ আরও বৈদেশিক সহায়তা পাওয়ার লক্ষ্যে কাজ চলছে।

ধামরাইয়ের সংসদ সদস্য বেনজীর আহমেদের প্রশ্নের জবাবে সরকার প্রধান জানান, ঢাকা শহরে যানজট নিরসনে ২৫০ কিলোমিটার সাবওয়ে বা আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রো নির্মাণে ৩২১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে সম্ভব্যতা সমীক্ষা চলছে। এ প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৬০ শতাংশ। সম্ভব্যতা সমীক্ষার মাধ্যমে অ্যালাইনমেন্ট চূড়ান্ত করে যথাসময়ে এর বাস্তবায়ন শুরু করা সম্ভব হবে।

ভ্যাকসিন বিষয়ক সম্ভাব্য পরিকল্পনা
বাংলাদেশ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোভ্যাক্স ফ্যাসিলিটি থেকে বিশ্বের ৯২টি দেশের মতো দেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ২০ শতাংশ জনগোষ্ঠীর তথা ৩ কোটি ৪০ লাখ মানুষের জন্য ৬ কোটি ৮০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন পাবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সায়েন্টিফিকি অ্যাডভাইজরি গ্রুপ অব এক্সপার্টসের নির্দেশনা ও দেশের প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন দেওয়ার অগ্রাধিকার তালিকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

ভ্যাকসিন বিতরণের ১ম পর্যায়ে দেশের জনসংখ্যার মোট ১ কোটি ৫০ লাখ মানুষকে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে মোট ২ ডোজ করে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে।

দেশের ৬৪টি জেলা ইপিআই স্টোর এবং ৪৮৩টি উপজেলা ইপিআই স্টোরে এই ভ্যাকসিন সংরক্ষণ করা হবে।

চুক্তি অনুযায়ী সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে পাওয়া ৩ কোটি বা তার বেশি ডোজ ভ্যাকসিন ৬ ধাপে সরাসরি বাংলাদেশের নির্ধারিত জেলার ইপিআই সেন্টারে রাখার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

এইউএ/জেডএস