গালিবের গ্রেফতারে অনলাইনে জঙ্গিবাদ প্রচারণা ৮০ শতাংশ কমবে
অনলাইনে জঙ্গিবাদ প্রচারণার কথিত ত্রিরত্ন খ্যাতর একজন হাসিবুর রহমান ওরফে আযযাম আল গালিব (২১)। তিনি নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের অনলাইন দাওয়াহ শাখার প্রধান। রোববার (১৪ নভেম্বর) রাজধানীর উত্তরা পূর্ব থানা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করেছে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)।
সিটিটিসির দাবি, হাসিবুর রহমানকে গ্রেফতার করায় অনলাইনে জঙ্গিবাদ প্রচারণা ৮০ শতাংশ কমে আসবে।
বিজ্ঞাপন
সিটিটিসি সূত্রে জানা যায়, হাসিবুর রহমান অত্যন্ত মেধাবী শিক্ষার্থী। তিনি ২০১৬ সালে এসএসসি পাস করেন। ঢাকা অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ার সময় সে সহিংস উগ্রবাদ তথা জঙ্গিবাদের আদর্শে দীক্ষিত হয়। এ সময় প্রচুর পরিমাণে উগ্রবাদী বই পড়তে শুরু করে। সে প্রাথমিকভাবে ফেসবুকের মাধ্যমে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন আনসার আল ইসলাম ও আন্তর্জাতিক সহিংস উগ্রবাদী সংগঠন আল কায়েদার আদর্শ ও মতবাদ প্রচারকারী জামিল হাসান ও মো. জামসেদ হোসাইন নামের দুটি আইডির সঙ্গে যুক্ত হয়। এই আইডিগুলোতে তালেবান ও আল কায়েদা বিষয়ে বিভিন্ন লেখালেখি হতো ও তাদের বিভিন্ন সংবাদ প্রচার করত।
সোমবার (১৫ নভেম্বর) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিটিটিসির প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, রোববার (১৪ নভেম্বর) রাজধানীর উত্তরা পূর্ব থানা এলাকা থেকে হাসিবুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। তার বাড়ি পটুয়াখালীর মহিপুর এলাকায়। বাবার নাম হাবিবুর রহমান। সে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির এলএলবির শিক্ষার্থী।
হাসিবুর রহমান ওরফে আযযাম আল গালিবকে গ্রেফতারের আগে ত্রিরত্নের বাকি দুই সদস্য আল আমিন সিদ্দিকী ও জোবায়দা সিদ্দিকী নাবিলাকে গ্রেফতার করে সিটিটিসি।
মো. আসাদুজ্জামান বলেন, বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে আনসার আল ইসলামের মতাদর্শের বিভিন্ন বক্তব্য প্রচার ও দ্রুত শরীয়া আইন চালু করেতে এই ত্রিরত্ন বিভিন্ন প্রচারণা চালাত। হাসিবুর রহমান নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের অনলাইন দাওয়াহ শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিল।
তিনি বলেন, ২০১৯ সালের দিকে হাসিবুর রহমান আল কায়েদা ও আনসার আল ইসলামের মতাদর্শে বিশ্বাসী হয়ে নিজেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখালেখি শুরু করে। এসব লেখা লেখির জন্য সে ‘আযযাম আল গালিব’ নামে ফেসবুক আইডি খুলে। এই নামে সে একটি টেলিগ্রাম চ্যানেল খুলে ফেসবুক ও টেলিগ্রামে আনসার আল ইসলাম ও আল কায়েদার সমর্থনে লেখালেখি শুরু করে। পাশাপাশি ফেসবুকে ‘মুয়াহিদ মুসলিম’ নামে আরও একটি পেজ ওপেন করে। সেখানে সে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করে সদস্য সংগ্রহ করতে থাকে। এই পেজটি থেকে উগ্র-মতবাদ ছড়ানোর অভিযোগে তার পেজটি ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বন্ধ করে রাখে।
সিটিটিসি প্রধান বলেন, সর্বশেষ সে আব্দুল্লাহ গালিব আযযাম নামে একটি ফেসবুক আইডি ব্যবহার করতো। কারাগারে আটক আনসার আল ইসলামের সদস্যদের জামিনের জন্য সে গোপনে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহেরও কাজ করত।
গ্রেফতারকৃত হাসিবুর রহমানের সঙ্গে টেলিগ্রামে একই মতাদর্শ প্রচারের ‘জায়েদ ইবনে আলী’ ও ‘শাফায়েত মুসান্ন ইসা’ আইডির যোগাযোগ হয়। তারা একত্রে সংগঠনের প্রচার প্রচারণা, সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু করে। হাসিবুর রহমান ‘জায়েদ ইবনে আলী’ ও ‘শাফায়েত মুসান্না ইসার’ সঙ্গে আনসার আল ইসলামের মতাদর্শ প্রচারের তথাকথিত ত্রিরত্নর প্রধান হিসেবে অনলাইন র্যাডিক্যালাইজেশনের নেতৃত্ব প্রদান করে। গ্রেফতার হাসিবুর রহমানের কাছ থেকে জব্দকৃত মোবাইল পরীক্ষা করে প্রাথমিকভাবে ফেসবুক, মেসেঞ্জার, টেলিগ্রাম অ্যাপসসহ বিভিন্ন উগ্রবাদী কন্টেন্ট পাওয়া যায়। ‘জায়েদ ইবনে আলী’ ও ‘শাফায়েত মুসান্না ইসা’ আইডি পরিচালনাকারী আল আমিন ও নারী জঙ্গি জোবায়দা সিদ্দিকা নাবিলা এর আগে সিটিটিসির হাতে গ্রেফতার হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান বলেন, গ্রেফতার হাসিবের ফেসবুক আইডিতে জিহাদসহ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হয় এমন সব কন্টেন্ট ছিল, যার কারণে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ তার আইডিটি বন্ধ করে দেয়। এর আগেও গ্রেফতার হওয়া জঙ্গি সংগঠনের নেতাদের জামিনের চেষ্টা করেছে হাসিব। বিভিন্ন জায়গা থেকে টাকা সংগ্রহ করে সে তাদের পরিবারকে টাকা দিয়ে সাহায্য করে জামিনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল।
হাসিবের গ্রেফতারের পর আনসার আল ইসলামের দাওয়াহ শাখার নেতৃত্ব দিবে কে- এ প্রসঙ্গে কোনো তথ্য পাওয়া সম্ভব হয়েছে কি না জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান বলেন, গ্রেফতার হাসিব জঙ্গিবাদ বিষয়ে প্রচুর পড়াশোনা করে নিজেকে বিশেষজ্ঞ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এ ধরনের বিশেষজ্ঞ আর কারা কারা রয়েছে সে বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
এমএসি/এইচকে/