সিটিং সার্ভিস : চার বছর ঝুলিয়ে আবার বন্ধের তোড়জোড়
২০১৭ সালের এপ্রিলে বেসরকারি সড়ক পরিবহন সংগঠনের পক্ষ থেকে রাজধানী ঢাকায় সিটিং সার্ভিস বাস বন্ধের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তাতে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) অভিযানও চালিয়েছিল। ওই অভিযানের পর কার্যত ধর্মঘটের পরিস্থিতি তৈরি হলে আবার চলতে শুরু করে সিটিং সার্ভিস।
বিআরটিএ ওইসময় সিটিং সার্ভিস বিষয়ক একটি কমিটি করেছিল। কমিটি ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে সরকারের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করেছিল। তাতে ২৬টি সুপারিশ ছিল। এসব সুপারিশের মধ্যে ছিল- রাজধানীর বিভিন্ন রুটে সীমিত আকারে সিটিং সার্ভিস বাস রাখতে হবে, প্রারম্ভিক ও শেষ স্টপেজের মধ্যে পুরো দূরত্বের ভাড়া আদায় করা যাবে না, এজন্য আলাদা ভাড়া নির্ধারণ করা হবে।
বিজ্ঞাপন
গত চার বছরে এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হয়নি। এরই মধ্যে আজ থেকে সিটিং সার্ভিস বন্ধ থাকবে বলে ঘোষণা দেয় ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। গত বুধবার সমিতি সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেয়। যদিও আজ রোববার সিটিং সার্ভিস বন্ধ হয়নি।
সিটিং সার্ভিসের বিষয়ে সুরাহার জন্য ২০১৭ সালের এপ্রিলে গঠিত কমিটির প্রধান ছিলেন বিআরটিএ-এর পরিচালক (সড়ক নিরাপত্তা) মাহবুবে রব্বানী। কমিটির সদস্য হিসেবে ছিলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত, ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার (ট্রাফিক, উত্তর), একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক পরিচালক (সংবাদ) ইশতিয়াক রেজা, দৈনিক ইত্তেফাকের বিশেষ প্রতিনিধি শ্যামল সরকার, বিআরটিএ-এর তৎকালীন ঢাকা বিভাগীয় উপ-পরিচালক মো. মাসুদ আলম, বাস মালিক প্রতিনিধি মাহবুবুর রহমান ও শ্রমিক প্রতিনিধি শাহজাহান বাবুল।
ওই কমিটির সদস্য বিশিষ্ট সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত আজ রোববার দুপুরে ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা যে সুপারিশগুলো তৈরি করেছিলাম তা সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং বিআরটিএ-এর কাছে দিয়েছি। কোনো সুপরিশ বাস্তবায়ন হয়নি। এ অবস্থায় আবার সিটিং সার্ভিস বন্ধ করার জন্য ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। তাতে কোনো কার্যকর ফল হবে কি না সন্দেহ আছে। কারণ পুরো ব্যবস্থাকেই নতুন করে সাজাতে হবে, সংস্কার করতে হবে।
ওই কমিটি তখন সুপারিশ করেছিল- একটি কোম্পানির সব বাস সিটিং সার্ভিসের আওতায় পরিচালনা না করে কিছু বাস সিটিংয়ের আওতায় পরিচালনা করা যায়। এছাড়া কোনো বাস কোম্পানির বাকি বাসগুলো নন-সিটিং হিসেবে পরিচালনা করতে হবে। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে কমিটি পর্যবেক্ষণে বলেছিল- সিটিং সার্ভিসের মাধ্যমে দীর্ঘদিন চলাচল করে যাত্রীরা অভ্যস্ত। মালিকরা সিটিং সার্ভিস পরিচালনায় স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করায় সিটিং সার্ভিস এখন সময়ের চাহিদা। কিন্তু কোন কোম্পানির কতগুলো গাড়ি সিটিং, কতগুলো নন-সিটিং হিসেবে চলাচল করবে তা ঠিক করতে পারে আঞ্চলিক পরিবহন কমিটি।
সরকার সিটিং সার্ভিসের ভাড়া নির্ধারণ করবে। একটা রুটকে কয়েকটা স্ল্যাবে ভাগ করে স্ল্যাবভিত্তিক ভাড়া নির্ধারণ করার সুপারিশ করেছিল কমিটি। এছাড়া কমিটি সিটিং সার্ভিসের বাসগুলোয় আলাদা রঙ দিয়ে চিহ্নিত করার সুপারিশ করেছিল। সিটিং সার্ভিস বাসের সীমিত স্টপেজ রাখার সুপারিশও করা হয়েছিল।
তবে এই সিটিং সার্ভিসের নামে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ২০১৭ সালেও এই অবস্থা ছিল। ওই বছরের ১৬ এপ্রিল থেকে সিটিং সার্ভিস বাস চালানো বন্ধের ঘোষণা দেয় ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। পরে বিআরটিএ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে। তাতে পরিবহন সংকট ও এক পর্যায়ে ধর্মঘট পরিস্থিতি হলে ওই বছরের ১৯ এপ্রিল অংশীজনদের সঙ্গে সভার পর সিটিং সার্ভিসের বিরুদ্ধে অভিযান স্থগিত করে বিআরটিএ।
২০১৭ সালে গঠিত কমিটি রুট পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে ঢাকায় বাসগুলোকে নির্দিষ্ট কয়েকটি কোম্পানির নিয়ন্ত্রণে চলাচলের ব্যবস্থা, রুট ফ্র্যাঞ্চাইজিং পদ্ধতিতে গণপরিবহন ব্যবস্থা প্রবর্তন করার সুপারিশ করেছিল। এছাড়া বিআরটিসির নতুন দ্বিতল বাস চালুর সুপারিশ করেছিল। এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হয়নি।
আগের সুপারিশ বাস্তবায়িত না হলেও নতুন করে সিটিং সার্ভিস বন্ধের এই উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটিএ-এর পরিচালক (সড়ক নিরাপত্তা) মাহবুবে রব্বানীর সঙ্গে কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বিআরটিএ-এর তখনকার ঢাকা বিভাগীয় উপ-পরিচালক মো. মাসুদ আলমের (বর্তমানে বিআরটিএ প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক) কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে পারবো না।
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েতউল্ল্যাহ রোববার সকালে ঢাকা পোস্টকে বলেন, আজ থেকে ঢাকায় সিটিং সার্ভিস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত কতটা কার্যকর হয়েছে তা পরিস্থিতি দেখে পরে বলব।
পিএসডি/এনএফ