বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত লি জ্যাং কিউন।

বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) কসমস ফাউন্ডেশন আয়োজিত অ্যাম্বাসেডর লেকচার সিরিজের ‘বাংলাদেশ-দক্ষিণ কোরিয়া সম্পর্ক : ভবিষ্যতের পূর্বাভাস’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সংলাপে এ কথা বলেন রাষ্ট্রদূত।

রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের দক্ষতার ওপর গুরুত্ব দিয়ে দুই দেশের দৃঢ় সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে চাই। বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যার অধিকাংশ জনসংখ্যাই বয়সে তরুণ, যারা এ বিষয়গুলোতে মনোযোগ পাওয়ার যোগ্য।’

অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন কসমস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এনায়েতুল্লাহ খান। প্রখ্যাত কূটনীতিক এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন।

আলোচক প্যানেলে আরও ছিলেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশিষ্ট ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, ইয়াংওয়ান কর্পোরেশন এবং কেইপিজেড কর্পোরেশন (বিডি) লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও সিইও কিহাক সুং, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও মোহাম্মদী গ্রুপের চেয়ারপারসন ড. রুবানা হক, দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত ইফতিখারুল করিম এবং রিসার্চ ফেলো ও বাংলাদেশ সেন্টার ফর টেররিজম রিসার্চের (বিসিটিআর) প্রধান শাফকাত মুনীর।

এনায়েতুল্লাহ খান বলেন, বাংলাদেশ-কোরিয়া সম্পর্ক বেশ চমৎকার এবং ভবিষ্যতে আরও উজ্জ্বল হবে। আমি আশা করি, আমাদের সম্পর্ক আরও গভীর এবং বিস্তৃত হবে। আমরা বাংলাদেশ ও কোরিয়ার মধ্যে সম্পর্কের একটি কৌশলগত অংশীদারত্ব উপভোগ করব। বাংলাদেশ-কোরিয়া সম্পর্কের অন্যতম ভিত্তি হলো ইয়াংওয়ান কর্পোরেশন যা গত চার দশকে বাংলাদেশে সবচেয়ে সফল গুরুত্বপূর্ণ বিদেশি কোম্পানি। তারা বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পে সবচেয়ে বড় বিদেশি বিনিয়োগকারী। বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ১.৬ ডলারের কাছাকাছি এবং আশা করছি শিগগিরই তা দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পরিণত হবে।

ড. ইফতেখার চৌধুরী বলেন, কোরিয়া এশিয়া অঞ্চলে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে যা উন্নয়ন অর্থনীতিতে ‘ফ্লাইং গিজ প্যারাডাইম’ হিসাবে পরিচিত এবং কোরিয়ান মডেলটি অনুকরণের জন্য অত্যন্ত যোগ্য। কোরিয়ার বৈশ্বিক ভূমিকা তার অর্থনৈতিক উত্থানের সাথে সাথেই বৃদ্ধি পেয়েছে। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি-মুনের নেতৃত্ব তার একটি উদাহরণ। বাংলাদেশ ও কোরিয়ার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ক্রমান্বয়ে বেড়েছে এবং পারস্পরিকভাবে সবচেয়ে বেশি ফলপ্রসূ হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কগুলো আরও শক্তিশালী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের বন্ধনগুলো কীভাবে দুটি দেশের মধ্যে ইতিবাচক সহযোগিতাকে কার্যকরভাবে পরিচালনা করতে পারে তার একটি ভালো উদাহরণ।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, বাংলাদেশ শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজারে প্রবেশের পরও দক্ষিণ কোরিয়ার বাজারের পূর্ণ সুবিধা নিতে পারেনি এবং পোশাক ও চামড়ার বাইরে পণ্যের ক্ষেত্রে কোনো বৈচিত্র্য আনতে পারেনি যেটা একজন অর্থনীতিবিদ হিসেবে আমার জন্য খুবই বেদনার বিষয়। কোরিয়ান বিনিয়োগ নন-গার্মেন্টস, আইটি, টেকনোলজিক্যাল আপগ্রেডেশন এবং অন্যান্য সব বিষয়েও বৈচিত্র্য এনেছে, যেটা খুবই চমৎকার। আমি আশা করি এফডিআইয়ের এ প্রক্রিয়া আরও গতি পাবে।

কিহাক সুং বলেন, চট্টগ্রামের কোরিয়ান ইপিজেডের টেক্সটাইল জোনটি বাংলাদেশে একটি ‘টেক্সটাইল হাব’ হয়ে উঠবে যা ব্যবসাকে আরও তরান্বিত করবে। বাংলাদেশকে আরও ম্যানমেইড ফাইবার (এমএমএফ) উৎপাদন ও সরবরাহের জন্য অনেক প্রচেষ্টা করতে হবে যাতে এই ধরনের একটি সাপ্লাই চেইন এখানে সফলভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়।

রুবানা হক বলেন, বাংলাদেশ কোরিয়ায় ৩২৩ মিলিয়ন ডলারের পোশাক সরবরাহ করে, যেখানে কোরিয়া অন্যান্য দেশ থেকে মাত্র ৯ বিলিয়ন ডলারের পোশাক আমদানি করে। তারা কী সরবরাহ করে এবং কোরিয়া কী কিনছে তার মধ্যে অমিল রয়েছে। আমাদের আরও ভালো বাজার ক্র্যাক করতে হবে এবং আমাদের মূল্য সংযোজন পণ্যগুলোতে আপনাদের সমর্থন প্রয়োজন। আমরা কোরিয়ার সঙ্গে আরও ভালো করছি এবং আমরা আরও বেশি কিছু করতে চাই।

ইফতিখারুল করিম বলেন, প্রথমেই দ্বিপক্ষীয়, আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক পর্যায়ে সার্বভৌমত্ব,পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহযোগিতার ওপর জোর দিয়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়মিত, পর্যায়ক্রমিক দ্বিপক্ষীয় সংলাপের মাধ্যমে রাজনৈতিক সম্পর্ককে লালন ও শক্তিশালী করতে হবে। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের অর্থনীতির ভঙ্গুরতা ও চাহিদা বিবেচনায় রেখে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ককে অগ্রাধিকার দিতে হবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের ওপর ফোকাস করা একটি অগ্রাধিকার বিবেচ্য হতে পারে। তৃতীয়ত, পারস্পরিক আস্থা তৈরি এবং তথ্যের নির্বিঘ্ন আদান-প্রদানের জন্য বাণিজ্য সংস্থা ও উদ্যোক্তাদের মধ্যে মিথস্ক্রিয়া বৃদ্ধি ও জোরদার করার জন্য সচেতন এবং সুচিন্তিত নীতি থাকতে হবে।

এনআই/এসকেডি