ঢাকা পোস্টের নিউজে সাড়া
অবশেষে যাত্রা করছে দুদকের নতুন ১৪ কার্যালয়
নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে অবশেষে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নতুন ১৪টি সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের যাত্রা শুরু হতে যাচ্ছে।
২০১৮ সালের ডিসেম্বরে দুদকের পরিসর বৃদ্ধির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলেও এতদিন তা ফাইলবন্দি ছিল। দীর্ঘ প্রায় তিন বছর পর গত ২৮ অক্টোবর কমিশন সভায় দুদকের জেলা কার্যালয়গুলো চালু করার সিদ্ধান্ত হয়। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ১ জুলাই ১৪টি কার্যালয় স্থাপন ও চালুর কার্যক্রম শুরুর অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
দুদক সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার সই করা চিঠির সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জেলা কার্যালয়গুলো হলো
১. নারায়ণগঞ্জ, ২. গাজীপুর, ৩. মাদারীপুর, ৪. গোপালগঞ্জ, ৫. নওগাঁ, ৬. কিশোরগঞ্জ, ৭. জামালপুর, ৮. কুড়িগ্রাম, ৯. ঠাকুরগাঁও, ১০. কুড়িগ্রাম ১১. চাঁদপুর, ১২. ঝিনাইদহ, ১৩. পিরোজপুর ও ১৪ হবিগঞ্জ। এছাড়া দুদকের কক্সবাজার সমন্বিত জেলা কার্যালয় চালুর সিদ্ধান্ত আগেই নেওয়া হয়েছিল। যার কার্যক্রম চলছে বলে জানা গেছে।
গত ১ নভেম্বর ইস্যু করা চিঠিতে কার্যালয় স্থাপনের পাশাপাশি লোকবল নিয়োগ ও পদোন্নতিসহ যাবতীয় কার্যক্রম গ্রহণ করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যার অনুলিপি মন্ত্রিপরিষদ সচিবসহ সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে দেওয়া হয়েছে।
এর আগে গত ২৬ সেপ্টেম্বর দেশের শীর্ষ অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্টে ‘১৪ জেলায় দুদক কার্যালয় : নথি চালাচালিতে পার ৩ বছর!’ শীর্ষক সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর বিষয়টি দুদকের নজরে আসে। এর পরপরই কমিশন বৈঠকে আলোচনা হওয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব নতুন কার্যালয়গুলো চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয় বলে জানা গেছে।
দুর্নীতির লাগাম টানতে ২০০৪ সালের ২১ নভেম্বর দুর্নীতি দমন ব্যুরো থেকে স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে সারা দেশে ২২টি সমন্বিত জেলা কার্যালয়কে কেন্দ্র করে চলছে দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধের কার্যক্রম।
অল্প সংখ্যক কার্যালয় ও মাত্র ৯৮৫ লোকবল নিয়ে ১৬ কোটির বেশি জনসংখ্যার বাংলাদেশে জনপ্রত্যাশা পূরণে প্রতিষ্ঠানটি প্রতিনিয়ত হিমশিম খাচ্ছে। যে কারণে কমিশনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানটির পরিসর বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রায় দ্বিগুণ লোকবল নিয়ে দুদকের আরও ১৪টি সমন্বিত জেলা কার্যালয় স্থাপনের কথা ছিল। কিন্তু ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে নেওয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়নি।
দুদকের বর্তমান অবকাঠোমো ও জনবল
২০০৪ সালের আগে দুর্নীতি দমন ব্যুরোর সময় দেশের ৬৪ জেলাতে ছিল কার্যালয়। দুদক প্রতিষ্ঠার পর তা গুটিয়ে ২২টি করা হয়। প্রধান কার্যালয়ের ছয়টি অনুবিভাগের আওতায় চলে দুদকের পুরো কার্যক্রম। এগুলো হলো- প্রশাসন, সংস্থাপন ও অর্থ অনুবিভাগ, অনুসন্ধান ও তদন্ত অনুবিভাগ, বিশেষ অনুসন্ধান ও তদন্ত অনুবিভাগ, প্রতিরোধ ও গবেষণা অনুবিভাগ, লিগ্যাল ও প্রসিকিউশন অনুবিভাগ এবং মানি লন্ডারিং অনুবিভাগ। তবে অনুমোদিত কাঠামোতে প্রশিক্ষণ ও তথ্যপ্রযুক্তি অনুবিভাগ এবং অনুসন্ধান ও তদন্ত- ২ অনুবিভাগ যোগ করা হয়েছে।
প্রধান কার্যালয় ছাড়া সারা দেশে দুদকের ২২টি জেলা কার্যালয় রয়েছে। এগুলো হলো- সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা- ১, সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা- ২, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়- ১, চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়- ২, রাঙ্গামাটি, কুমিল্লা, নোয়াখালী, সিলেট, হবিগঞ্জ, বরিশাল, পাবনা, বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুর, খুলনা, যশোর, কুমিল্লা, বরিশাল ও পটুয়াখালী সমন্বিত জেলা কার্যালয়। যেখানে একজন চেয়ারম্যান, দুই কমিশনার, একজন সচিবসহ এক হাজার ২৭৪টি পদ রয়েছে। যদিও সেখানে কর্মরত আছেন ৯৮৫ জন। তবে অনুমোদিত জনবলে সেই সংখ্যা প্রায় দিগুণ করে দুই হাজার ১৪৬টি করা হয়েছে।
অনুমোদিত নতুন কার্যালয় ও জনবল
দেশজুড়ে দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রম আরও গতিশীল করতে ১৪টি নতুন সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের অনুমোদন দেওয়া হয় ২০১৮ সালে। ওই বছরের ২৯ অক্টোবর অনুষ্ঠিত কমিশনের বৈঠকে দুদকের নতুন সাংগঠনিক কাঠামোগত পরিবর্তন ও লোকবল নিয়োগের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। অনুমোদিত কার্যালয়গুলো হলো- ১. নারায়ণগঞ্জ, ২. গাজীপুর, ৩. মাদারীপুর, ৪. গোপালগঞ্জ, ৫. নওগাঁ, ৬. কিশোরগঞ্জ, ৭. জামালপুর, ৮. কুড়িগ্রাম, ৯. ঠাকুরগাঁও, ১০. চাঁদপুর, ১১. কক্সবাজার, ১২. ঝিনাইদহ, ১৩. পিরোজপুর ও ১৪. হবিগঞ্জ। এর মধ্যে শুধু কক্সবাজার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ ও ভবন নির্মাণের বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
নতুন সাংগঠনিক কাঠামো অনুযায়ী আগের ছয়টি অনুবিভাগের সঙ্গে নতুন প্রশিক্ষণ ও তথ্যপ্রযুক্তি অনুবিভাগ এবং অনুসন্ধান ও তদন্ত- ২ অনুবিভাগ যোগ হয়েছে। এছাড়া দুদকের বিভিন্ন পদে এক হাজার ৬৮ জনের নিয়োগ পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। পদভেদে জনসংখ্যার কাঠামো হলো- মহাপরিচালক পদে তিনজন, পরিচালক ১৮ জন, সিস্টেম অ্যানালিস্ট একজন, প্রোগ্রামার একজন, উপপরিচালক ১১০ জন, মেইনটেনেন্স ইঞ্জিনিয়ার একজন, সহকারী প্রোগ্রামার চারজন, সহকারী মেইনটেনেন্স ইঞ্জিনিয়ার দুজন, সহকারী পরিচালক ১৯৮ জন, মেডিকেল অফিসার একজন, প্রোটোকল অফিসার একজন, সহকারী পরিচালক (ইলেকট্রিক্যাল) দুজন, উপ-সহকারী পরিচালক ২৩৩ জন, কোর্ট পরিদর্শক ২৫ জন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা একজন, তৃতীয় শ্রেণির পদে ৩০৩ জন এবং চতুর্থ শ্রেণির পদে ১৬৪ জন।
নতুন কাঠামো পাস হওয়ার পর তিন ধরনের পদে ২৮৭ জনের নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়। এর মধ্যে সহকারী পরিচালক পদে ১৩২ জন, উপ-সহকারী পরিচালক পদে ১৪৭ জন এবং কোর্ট পরিদর্শক পদে ১৪৭ জনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এসব নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
আরএম/এনএফ