চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের এল.এ শাখা থেকে প্রতারণার মাধ্যমে ২ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের একটি চেক উত্তোলনের চেষ্টা করেছে প্রতারক চক্র। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে এল.এ শাখার চেইনম্যান নেজামুল করিমসহ তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সোমবার ( ৮ নভেম্বর) বিকেল ৫টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।

ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন।

তিনি বলেন, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের পক্ষ থেকে এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এরপর অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। 

চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানার এসআই মোহাম্মদ মমিনুল হাসান বলেন, রোববার রাতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি মামলা দায়ের করা হয়। এরপর কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে জোহুরাকে কক্সবাজার থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরে তার বাবা ওসমান গনি ও এল.এ শাখার চেইনম্যান নেজামুল করিমকে গ্রেফতার করা হয়। 

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গ্রেফতার জোহুরা একটি রেজিস্টার্ড পাওয়ার অব এটর্নি মূলে এল.এ. শাখা থেকে ২ কোটি ৮৬ লাখ টাকার চেক অবৈধভাবে উত্তোলনের আবেদন করেন। ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা পাওয়ার দাতাদের পরিচয় ও তার সঙ্গে ওই ব্যক্তিদের সম্পর্কের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এতে জোহুরা অসংলগ্ন উত্তর দেন। পাওয়ার অব এটর্নি দাতাদের জোহুরা চেনেন না বলে জানান। একপর্যায়ে জোহুরা বেগম বলেন, তার স্বামী তার পক্ষে পাওয়ার অব এটর্নি দলিল সম্পাদন করেছেন। এ সময় জোহুরা বেগমের স্বামীর সঙ্গে কথা বলতে চান এল.এ শাখার কর্মকর্তারা। উত্তরে জোহুরা জানান, তার স্বামী প্রবাসী এবং দুই মাস ধরে তার সঙ্গে যোগাযোগ নেই। 

এরপর জেলা প্রশাসকের নির্দেশে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের তত্ত্বাবধানে পাওয়ার দাতাদের ঠিকানায় অনুসন্ধান করা হয়। পাওয়ার অব এটর্নি দলিলে বর্ণিত ঠিকানায় আবুল কালাম শামসুদ্দিন ও আবু হেনা মোস্তফা কামাল নামে দুইজনের সন্ধান পাওয়া যায়। তখন আবুল কালাম শামসুদ্দিন ও আবু হেনা মোস্তফা কামাল উভয়েই জানান, তারা জোহুরা বা অন্য কাউকেই তাদের জমির ক্ষতিপূরণ উত্তোলনের জন্য ক্ষমতা অর্পণ করেননি। 

তিনি আরও জানান, অধিকতর অনুসন্ধানের জন্য আবুল কালাম শামসুদ্দিন ও আবু হেনা মোস্তফা কামালকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ডেকে আনা হয়। তখন পাওয়ার অব এটর্নি দলিলটি দেখে তারা বলেন, দলিলে তাদের নামের বিপরীতে যে জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর দেওয়া হয়েছে সে নম্বর দুটি তাদের পরিচয়পত্রের নম্বর নয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তারা প্রতারণার ঘটনায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ক্ষতিপূরণের আবেদনকারী জোহুরা একটি প্রতারক সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুক্ত। ভুয়া লোকদের আবুল কালাম শামসুদ্দিন ও আবু হেনা মোস্তফা কামাল সাজিয়ে এ প্রতারক সিন্ডিকেট পাওয়ার অব এটর্নি দলিলটি চট্টগ্রামের সদর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে রেজিস্ট্রি করে। এরপর সে দলিলমূলে ক্ষতিপূরণের আবেদন করে প্রতারক চক্র। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোতোয়ালি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। 

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান বলেন, এ প্রতারণার সঙ্গে যারাই যুক্ত তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। এর আগেও জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে অভিযান চালিয়ে দালাল চক্রের চারজনকে আটক করে শাস্তি দেওয়া হয়েছিল। 

কেএম/এসকেডি