ট্রাক ধর্মঘট স্থগিত
ধর্মঘট স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও পণ্যবাহী যানবাহনের মালিক-শ্রমিকরা।
সোমবার (৮ নভেম্বর) রাতে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বৈঠক শেষে তারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।
এর আগে রাত সোয়া ৮টায় বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব আনিছুর রহমান, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার, বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান, ট্যাংক-লরি ও প্রাইমমুভার মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক রুস্তম আলী খানসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জ্বালানি মন্ত্রণালয় ডিজেলের দাম বৃদ্ধি করেছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের সব পরিবহনে এটার প্রভাব পড়েছে। ইতোমধ্যে বাস যারা চালান, তাদের সঙ্গে বিআরটিএর একটি সমঝোতা হয়েছে। নৌ-মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলে একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আজকে পণ্য পরিবহন এবং প্রাইমমুভার, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, ট্রাক-লরি এ ধরনের পরিবহনের মালিক-শ্রমিক নেতারা এখানে এসেছিলেন, তাদের দাবি নিয়ে। তাদের প্রথম দাবি ছিল এই মূল্য (তেলের মূল্য) কমাতে হবে, বৃদ্ধি করা যাবে না।
মন্ত্রী বলেন, তাদের এ দাবি আমরা মনে করেছি যৌক্তিক। সে জন্য আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি সেটা হলো, আমরা তাদের এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, এফবিসিসিআই, যাদের তারা সেবা দেন, তাদের আমরা অনুরোধ করব, যৌক্তিকভাবে পণ্য পরিবহনের ভাড়া যেন বৃদ্ধি করে দেন।
আজকের আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, নেতারা (মালিক-শ্রমিক) এখানে বসে আছেন। তারা আমাদের সঙ্গে একমত হয়েছেন, আজকে থেকে তারা এ ধর্মঘট স্থগিত করছেন। পরবর্তীতে একটা ফলপ্রসূ আলোচনা করে চূড়ান্তভাবে এ ধর্মঘট প্রত্যাহার করবেন।
মন্ত্রীর বক্তব্য শেষে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বলেন, দীর্ঘক্ষণ ফলপ্রসূ আলোচনা হয়। সেই আলোচনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিজিএমইএ, বিকেএমইএসহ সংশ্লিষ্ট কয়েকটি ব্যবসায়িক সংগঠনের সঙ্গে যৌক্তিক ভাড়া নিয়ে আলোচনার পরই ধর্মঘট চূড়ান্তভাবে প্রত্যাহার করা হবে।
তিনি বলেন, মালিকরা গাড়ি বন্ধ রেখেছিলেন, সেটা এখন থেকে স্থগিত করা হলো। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত পণ্য পরিবহন চলবে। এটা নিয়ে আমাদের সরকারের সঙ্গে আলোচনা হবে। মালিক-শ্রমিকরা আবারও চূড়ান্তভাবে বসব। কীভাবে এগুলো বাস্তবায়ন করা যায়।
ওসমান আলী আরও বলেন, জ্বালানি সচিব মহোদয় ডিজেলের দাম বাড়ানোর যৌক্তিকতা তুলে ধরেছেন। আমরা বলেছি তেলের দাম বাড়ালে আমাদের ভাড়া ৩০ শতাংশ বাড়াতে হবে।
বাংলাদেশ কাভার্ড ভ্যান-ট্রাক প্রাইম মুভার পণ্য পরিবহন মালিক অ্যাসোসিয়েশন মহাসচিব চৌধুরী জাফর আহমদ বলেন, আমাদের দাবি ছিল ভাড়া ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি করা।
গত ৩ নভেম্বর রাতে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় সরকার। লিটারপ্রতি ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ানো হয় ১৫ টাকা করে। ফলে ৬৫ টাকা থেকে এক লাফে ডিজেলের লিটারপ্রতি দাম হয় ৮০ টাকা। বাড়তি দামে ডিজেল কিনতে হলে বর্তমান ভাড়ায় গাড়ি চালানো সম্ভব নয়- এমন যুক্তি দেখিয়ে বৃহস্পতিবার থেকে প্রথমে পণ্যবাহী পরিবহন ধর্মঘটে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। পরে বাস মালিকরাও গাড়ি চালানো বন্ধ করে দেন।
সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির পক্ষ থেকে বিআরটিএর কাছে ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয় বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) বিকেলে। বিআরটিএ বৃহস্পতি, শুক্র, শনিবার তিনদিন কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে মালিক সমিতির সঙ্গে বৈঠক ডাকে রোববার (৭ নভেম্বর)। বাস মালিকরা ভাড়া না বাড়ানো পর্যন্ত রাস্তায় গাড়ি না নামানোর সিদ্ধান্তে অটল থাকেন।
অবশেষে রোববারসহ প্রায় চারদিনের ভোগান্তি শেষে মালিকপক্ষের দাবি মেনে বাসের ভাড়া বাড়ানোর ঘোষণা দেয় বিআরটিএ। বৈঠক থেকে বেরিয়ে ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ।
তবে ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান মালিকরা বৈঠকে ডাক পাননি। ফলে তারা ধর্মঘটও প্রত্যাহার করেননি। এর মধ্যে ডাক পেয়ে সোমবার রাতে তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।
এসএইচআর/জেডএস