বিএনপির অস্তিত্ব টিকে থাকবে কি না সন্দেহ প্রধানমন্ত্রীর
অবৈধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের সাজা হয়েছে। এ অবস্থায় রাজনৈতিক দল হিসেবে ভবিষ্যতে বিএনপির অস্তিত্ব টিকে থাকবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, অস্ত্র চোরাচালান, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, এতিমদের অর্থ আত্মসাৎ মামলায় সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামির নেতৃত্বে একটি রাজনৈতিক দল টিকে থাকবে কীভাবে?
রোববার (৭ নভেম্বর) যুক্তরাজ্যের কুইন এলিজাবেথ সেন্টারে দেশটিতে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেওয়া এক নাগরিক সংবর্ধনায় ভাষণদানকালে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। লন্ডনে তার বর্তমান নিবাস (সফর সময়ের) থেকে ভার্চুয়ালি এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশ নেন শেখ হাসিনা।
বিজ্ঞাপন
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ দলের শীর্ষ নেতৃত্ব অস্ত্র চোরাচালান ও দুর্নীতির পাশাপাশি হত্যা মামলায়ও সাজাপ্রাপ্ত হয়েছে। তিনি বলেন, কেবল আমাদের সরকারের নয়, খালেদা জিয়ার ছেলেদের করা এ দুর্নীতি আমেরিকার এফবিআইয়ের করা তদন্তেও উঠে এসেছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা (সরকার) বিদেশ থেকে তাদের পাচার করা কিছু অর্থ দেশে ফেরত আনতে সক্ষম হয়েছি।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, তাদের (খালেদা জিয়া ও তার ছেলেদের) কোনো দেশপ্রেম ছিল না, বরং তাদের চিন্তা ছিল ক্ষমতা ভোগ ও লুটপাট করা।
শেখ হাসিনা লন্ডনে তাদের (তারেক রহমান) বিলাসবহুল জীবন যাপন ও আয়ের উৎস নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি (খালেদা জিয়া) ক্ষমতায় এসে হাওয়া ভবন চালুর মাধ্যমে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম এবং লুটেপুটে খাওয়া-দাওয়া শুরু করে। দেশের জনগণের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে। ঐ সময় বাংলাদেশ দুর্নীতিতে পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়।
তিনি আরো বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবে, জনগণ সামনের দিকে অগ্রসর হতে চায়, আমি কখনো জনগণকে পেছনের দিকে যেতে দেখিনি। কিন্তু তারা সেটাই করেছে।’
সরকার প্রধান বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যার পর বাংলাদেশ অন্ধকার যুগে নিমজ্জিত হয়। তিনি বলেন, কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশের জনগণ সরকারের সেবা পেতে শুরু করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করায় দেশের ভাগ্যের চাকা সামনের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে। আওয়ামী লীগ সর্বদা দেশের জনগণের পাশে থাকে এবং জনগণের কল্যাণের চিন্তা করে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন আর ভিক্ষাবৃত্তি করে চলে না, আজকের বাংলাদেশ নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখেছে। আমাদের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের ৯০ শতাংশ অর্থায়ন আমাদের নিজস্ব সম্পদ থেকে আসে এবং আমরা সক্ষমতা অর্জন করেছি।
পদ্মা সেতুর ব্যাপারে শেখ হাসিনা বলেন, একটি কুচক্রীমহল এ সরকারকে বিশেষকরে প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর পরিবারকে দুর্নীতির অভিযোগ এনে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করেছিল। এ ব্যাপারে আমি বিশ্ব ব্যাংককে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলে তারা তা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। পদ্মা সেতুতে কোনো দুর্নীতি হয়নি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ দুর্নীতি করে নিজের ভাগ্য গড়তে ক্ষমতায় আসেনি। তিনি বলেন, আমরা জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে ক্ষমতায় এসেছি। এটিই আমাদের লক্ষ্য। আর এই লক্ষ্য অর্জনে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।
তিনি ১শ’টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি আহ্বান জানান। সারা দেশে এসব অর্থনৈতিক জোন গড়ে তোলা হচ্ছে।
তিনি বলেন, আপনারা (প্রবাসীরা) বিনিয়োগ করতে চাইলে, বিশেষ সুযোগ-সুবিধা পাবেন। আমরা তা করব।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, তাঁর সরকার প্রবাসীদের সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি দেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রবাসীরা কোনো ধরনের সমস্যায় পড়লে সে ব্যাপারে তাঁকে অবহিত করতে প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানান এবং আশ্বাস দেন যেকোনো সমস্যার সমাধান তিনি করবেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশিরা যাতে অন্য দেশেও বিনিয়োগ করতে পারে সরকার সেটিরও পথ সুগম করবে।
সরকার প্রধান বলেন, আমার পিতা পাকিস্তানিদের কাছ থেকে এই দেশ স্বাধীন করেছেন এবং আমি জানি কীভাবে বাংলাদেশের উন্নতি করতে হয়।
৭ নভেম্বরের প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেন এবং ১৯৭৫ সালের পর ১৯ বার সামরিক অভ্যুত্থান ঘটানো হয়।
তিনি বলেন, প্রতি বার অভ্যুত্থানের সময় জিয়াউর রহমান সশস্ত্র বাহিনী, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর হাজার হাজার কর্মকর্তা ও সৈন্যকে নির্মমভাবে হত্যা করেন। তিনি আরো বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে ৭ নভেম্বর হচ্ছে সৈনিক হত্যা দিবস।’
যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরিফ এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
সূত্র: বাসস
এসএসএইচ/জেএস