টানা তৃতীয় দিনের মতো দেশজুড়ে চলছে অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘট। এতে রাজধানীসহ সারাদেশ কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। টানা এ ধর্মঘটে নগরবাসীর জন্য কিছুটা স্বস্তি রাজধানীর বিভিন্ন রোডে চলছে বিআরটিসি বাস। ধর্মঘটেও গণপরিবহনে শুধুমাত্র বিআরটিসির বাস এখন রাস্তায় দেখা যাচ্ছে।

এদিকে রাস্তায় অন্য কোনো গণপরিবহন নেই। আরেকদিকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও রিকশার ভাড়া কয়েক গুণ বেড়েছে। তাই অফিসগামী মানুষের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে বিআরটিসি বাসে। তবে বিআরটিসি বাস চলাচল করলেও তা সংখ্যায় খুবই কম। ঘণ্টা দুই ঘণ্টা দাঁড়িয়েও দেখা মেলে না বাসের।

দীর্ঘসময় অপেক্ষার পর হঠাৎ বিআরটিসি বাসের দেখা মিললেই হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন যাত্রীরা। একেকটি বিআরটিসি বাস যেন একেকটি সোনার হরিণ। বাসের ভেতরটা যাত্রীতে ঠাসা। অনেকে বাদুড় ঝোলা হয়ে যাতায়াত করছেন। গেটের বাইরেও ঝুলে থাকতে দেখা গেছে অনেককে। এভাবে ঝুঁকি নিয়ে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার আশংকার মধ্যেই যাতায়াত করছেন যাত্রীরা।

রোববার (৭ নভেম্বর) রাজধানীর রামপুরা, শান্তিনগর, মালিবাগ ও বাড্ডা এলাকা ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।

রাজধানীর লিংক রোড এলাকায় মোহাম্মদপুরগামী বিআরটিসির একটি দোতলা বাসের গেটে হাজার চেষ্টা করেও ঝুলতে পারেননি মো. মিঠুন। আসাদগেটগামী এ যাত্রী এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার পর বাস পেয়েছিলেন। তিনি বলেন, ঘণ্টা দাঁড়িয়ে বাসের দেখা পেয়েছিলাম, কিন্তু ভেতরে ও গেটে এত যাত্রী, কোনোভাবে ঝুলে থাকার জায়গাও পাইনি। সিএনজি আর বাইক চালকরা এত বেশি ভাড়া চাইছেন যে পকেটে এত টাকাও নেই। এত বেশি ভাড়া দিয়ে কীভাবে আমরা বাইকে বা সিএনজিতে যাব, আমরা স্বল্পআয়ের মানুষ।

মিঠুনের মতো আরও অনেক যাত্রীই এভাবে বিআরটিসি বাসের জন্য রাজধানীর বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন। কিন্তু একাধিকবার চেষ্টা করেও ভেতর অতিরিক্ত যাত্রী থাকায় তারা বাসে উঠতে পারছেন না।

সিএনজিচালিত বাস নেই কেন রাস্তায়

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় গণপরিবহনের মালিকরা ধর্মঘট পালন করছেন। কিন্তু রাজধানীতে এমন অনেক পরিবহনের বাস রয়েছে, যারা সিএনজিতে গাড়ি চালায়। এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন যাত্রীরা। তারা বলছেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় মালিকপক্ষ ধর্মঘট পালন করছে, সেটা যৌক্তিক। কিন্তু যাদের বাসে গ্যাসে চলে তাদের গাড়ি কোথায়?

রামপুরা ব্রিজের ওপর বিআরটিসি বাসের জন্য অপেক্ষমাণ যাত্রী মো. সাইদুর বলেন, পরিবহন ধর্মঘট শুরু হওয়ার পর থেকে বিআরটিসির বাস ছাড়া আমরা রাজধানীতে আর কোনো বাস চলাচল করতে দেখিনি। তাহলে এতদিন যে বিভিন্ন পরিবহনের সিএনজিচালিত বাস ছিল, এগুলো এখন কোথায় চলে গেছে। আসল বিষয়টি হচ্ছে, সব কর্তৃপক্ষ সাধারণ মানুষদের নিয়ে খেলছে। জ্বালানি তেলের দাম কমবে না, এ কারণে পরিবহন কর্তৃপক্ষ ভাড়া বাড়াবে। সে ভাড়া জায়েজ করার জন্য আমাদের এ ভোগান্তি দিয়ে শিক্ষা দিচ্ছে।

ধর্মঘটেও যানজট

পরিবহন ধর্মঘট চললেও রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র যানজট। রাস্তায় গণপরিবহনের জায়গা দখল করেছে ব্যক্তিগত পরিবহন ও সিএনজি অটোরিকশা এবং রিকশা। এতে যাত্রীদের ভোগান্তি আরও বেড়েছে।‌

রোববার দুপুরে থেকে রামপুরা এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। যানজট সৃষ্টি হওয়ার একমাত্র কারণ- রাস্তায় প্রচুর পরিমাণে সিএনজি অটোরিকশা, রিকশা ও প্রাইভেটকারের উপস্থিতি। এসব পরিবহন রাস্তায় জায়গা দখল করলেও কিন্তু উল্লেখযোগ্য সংখ্যক যাত্রীদের পারাপার করতে পারছে না সিট স্বল্পতায়। এছাড়া পরিবহন সংকট থাকায় যাত্রীরা রাস্তায় লম্বা সরি ধরে হেঁটে যাচ্ছেন। ফলে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।

এমএসি/এসএসএইচ