ঢামেকে প্রথম টিকা নিচ্ছেন ডা. ফরহাদ
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে টিকা কার্যক্রম শুরু হচ্ছে ২৮ জানুয়ারি থেকে। এই কেন্দ্রটিতে সর্বপ্রথম টিকা নিচ্ছেন ডা. ফরহাদ উদ্দিন হাসান চৌধুরী নামের এক চিকিৎসক। তিনি হাসপাতালটিতে মেডিসিন অ্যান্ড ইনফেকশন বিশেষজ্ঞ হিসেবে কর্মরত আছেন।
মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারি) সকালে ঢাকা পোস্টকে তিনি নিজেই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ডা. ফরহাদ উদ্দিন বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৮ জানুয়ারি থেকে টিকা কার্যক্রমের উদ্বোধন হবে। এখন পর্যন্ত টিকা নেওয়ার তালিকায় আমিই প্রথমে আছি। সবকিছু যদি ঠিক থাকে, আমি যদি ফিট থাকি, তাহলে আমিই ঢামেকে সবার আগে টিকা নিচ্ছি।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, আপনারা জানেন, টিকা গ্রহণ নিয়ে জনমনে একটা আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। মূলত এটা দূর করতে চিকিৎসক-নার্সসহ যারা ফ্রন্টলাইনার রয়েছে, তারা প্রথম টিকা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমাদের এই উদ্যোগটা মূলত সাধারণ মানুষকে সচেতন করার জন্যই। এটা সাকসেসফুল হলে আশা করি পরে বাংলাদেশের মানুষ উৎসবমুখর পরিবেশে এই টিকা নেবেন।
বিভিন্ন দেশে টিকা নেওয়ার পর বিভিন্ন রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে, এ অবস্থায় আপনি প্রথমে নিতে এগিয়ে এলেন কেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আসলে ভয়ের কিছু না। এটাকে মেডিকেলের ভাষার ভ্যাকসিন হ্যাজিটেন্সি বলে। এটা শুধু বাংলাদেশে না, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই হয়েছে। ভ্যাকসিনটি যেহেতু সম্পূর্ণ নতুন একটি বিষয়, সেহেতু জনমনে এটা নিয়ে একধরনের আতঙ্ক থাকবেই। আশা করছি, চিকিৎসকরা শুরুতেই টিকা নিলে এবং সারাদেশে কার্যক্রম শুরু হলে সাধারণ মানুষজন এমনিতেই আগ্রহের সঙ্গে টিকা নেবে।
সাধারণ মানুষকে দোষারোপ করে লাভ নেই, বরং এই টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার বিষয়টি প্রচার না করে এর উপকারিতা উল্লেখ করতে হবে। ইতালিতে টিকা কার্যক্রম শুরু হওয়ার পরে হাসপাতালে ভর্তির হার ৬০ শতাংশ কমে গেছে। আমি আশা করছি বাংলাদেশেও এটা সফল হবে, বলেন তিনি।
শুরুতে টিকা নেওয়ার তালিকায় নিজেই আগ্রহী ছিলেন, নাকি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তালিকা করেছে জানতে চাইলে এই চিকিৎসক বলেন, এখনও তো সুরক্ষা অ্যাপের মাধ্যমে দেশে রেজিস্ট্রেশন শুরু হয়নি, আমরা যারা প্রথম থেকেই কোভিড চিকিৎসায় জড়িত ছিলাম, তাদেরকেই তালিকায় অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। তবে আমিই মূলত প্রথমে নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করি।
এক নজরে ডা. ফরহাদ উদ্দিন
পুরো নাম ডা. ফরহাদ উদ্দিন হাসান চৌধুরী। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেজিস্ট্রার হিসাবে কর্মরত আছেন। একইসঙ্গে ঢামেকের মেডিসিন অ্যান্ড ইনফেকশন রোগ বিশেষজ্ঞ হিসাবেও চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছেন। তিনি সিলেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৪১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। ডা. ফরহাদ উদ্দিনের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলায়।
টিকা কার্যক্রম
আগামী ২৮ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা টিকা দেওয়া শুরুর সব প্রস্তুতি শেষ করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
গত শনিবার (২৩ জানুয়ারি) বিকেলে ঢামেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক সাংবাদিকদের জানান, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী আশা করি ২৮ জানুয়ারি উৎসবমুখর পরিবেশে টিকা দেওয়ার কাজ শুরু করবো ইনশাল্লাহ।
প্রথমে চিকিংসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের টিকা দেওয়া হবে। এছাড়াও হাসপাতালের নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকা আনসারদের দেওয়া হবে ধারাবাহিকভাবে।
ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আন্ডারগ্রাউন্ডে টিকা দেওয়ার স্থান আগেই নির্ধারণ করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সেখানেই আগামী ২৮ জানুয়ারি সকাল থেকে টিকার কার্যক্রম শুরু হবে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
এছাড়া পরিচালক আরও জানান, আনন্দমুখর পরিবেশে আমরা টিকার কার্যক্রম উদ্বোধন করব এবং সবাইকে ধীরে ধীরে টিকা নেওয়ার জন্য আমরা উদ্বুদ্ধ করব। এছাড়া তিনি জানান, টিকা দেওয়ার সময় নার্স, স্বেচ্ছাসেবী এবং আমাদের চিকিৎসকরা উপস্থিত থাকবেন। টিকা দেওয়ার পরে ওই ব্যক্তিকে আধাঘণ্টা অবজারভেশনে রাখা হবে।
টিআই/এইচকে