ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চাকরি করেন সাবিনা খাতুন। রাতে হঠাৎ করে কুষ্টিয়া থেকে খবর আসে তার শাশুড়ি মারা গেছেন। ব্যাগ গুছিয়ে শুক্রবার (৫ নভেম্বর) সকালে পরিবারের তিন সদস্যকে নিয়ে আসেন গাবতলী বাস টার্মিনালে, গন্তব্য কুষ্টিয়া।

কিন্তু ধর্মঘটে বাস চলাচল বন্ধ। বিষণ্ন মন নিয়ে কাউন্টারে-কাউন্টারে ঘুরতে দেখা যায় সাবিনাকে।

শুধু সাবিনা খাতুনই নন, পরিবহন ধর্মঘটে বিপাকে পড়েছেন তার মতো আরও অনেকেই। ঘর থেকে বের হওয়া দূরপাল্লার যাত্রীদের এখন শেষ ভরসা পিকআপ, কাভার্ড ভ্যান। নিকট দূরত্বের যাত্রীরা গন্তব্যে ছুটছেন সিএনজিচালিত অটোরিকশা বা রিকশা-ভ্যানে।

শুক্রবার সকালে গাবতলী বাস টার্মিনালের সামনে কথা হয় সাবিনা খাতুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, রাতেই শুনেছি পরিবহন ধর্মঘট। কিন্তু বাধ্য হয়েই এসেছি গাবতলী টার্মিনালে। শাশুড়ি মারা গেছে, এখন বাড়িতে তো যেতেই হবে। কিন্তু বাস যে একেবারেই চলবে না, এটা ভাবিনি।

তিনি বলেন, দেশে কোনো সমস্যা হলে সরকারি হস্তক্ষেপ ছাড়া সমাধান হয় না। দ্রব্যমূল্য বা গণপরিবহন সবকিছুতেই ভুগছে সাধারণ মানুষ। জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে, সেটার প্রতিবাদে পরিবহন মালিকরা ধর্মঘট ডেছে। আমরা তাহলে যাব কোথায়?

তিনি আরও বলেন, আজ আমি শাশুড়ির মৃত্যুতেও কুষ্টিয়া যেতে পারছি না। ভীষণ খারাপ লাগছে। অনেকেই এমন বিড়ম্বনায় পড়েছেন। একমাত্র সরকারই পারে এ ভোগান্তি থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষা করতে।

অসুস্থ স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য ঢাকায় এসেছিলেন বরিশালের সোহান। ডাক্তার দেখানো শেষে গাবতলীতে আসেন বাড়ি ফিরবেন বলে। কিন্তু বাস চলছে না। এখন অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে বাস ছাড়ার অপেক্ষায় বসে আছেন।

তিনি বলেন, খুব রাগ হচ্ছে, যদিও কিছু করার নেই। আগাম টিকিটও কিনেছিলাম। তবে ধর্মঘটের কারণে আজ বাস চলছে না। আমরা সাধারণ যাত্রীরাই সব সময় ভুক্তভোগী হই। কারণ গণপরিবহনই আমাদের একমাত্র ভরসা। এখন ধর্মঘট ছাড়ার অপেক্ষায় আছি।

জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে পূর্বঘোষিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শুক্রবার সকাল ছয়টা থেকে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের ডাকা ‘ধর্মঘট’ শুরু হয়।

সকাল ছয়টার দিকে ঢাকার বিভিন্ন সড়কে দেখা যায় কিছু বাস-ট্রাক শেষ গন্তব্যে পৌঁছানোর দৌড়ে ব্যস্ত। তবে রাতের ব্যস্ততার তুলনায় অনেকটাই ফাঁকা হয়ে এসেছে সড়ক। ছোট ছোট যান বিশেষ করে সিএনজি ও রিকশা চলতে দেখা গেছে সড়কে।

গাবতলীতে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন জেলা থেকে ছেড়ে আসা বাস ঢাকায় প্রবেশ করলেও ছেড়ে যাচ্ছে না। কাউন্টারগুলোর সামনে ও মূল সড়কে সারি সারি বাস দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু যাত্রী উঠছে না কোনো পরিবহনে।

গাবতলী বাস কাউন্টারের ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, বাসের হেলপার, কুলি ও শ্রমিকরা অলস সময় পার করছেন। কাউন্টার খোলা থাকলেও বিক্রি হচ্ছে না টিকিট।

তবে পিকআপ, কাভার্ড ভ্যানে চড়ে অনেককেই ঢাকা ছাড়তে দেখা যায়। সাভারের যাত্রীদের মোটরসাইকেল ও সিএনজি রিজার্ভ করে গন্তব্যে ফিরতে দেখা যায়। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় আজ রাজধানীর একমাত্র ভরসা বিআরটিসি বাস। তবে সেখানেও দেখা যায় প্রচুর ভিড়।

প্রথমে ট্রাক ও পণ্যবাহী পরিবহনের মালিকরা ধর্মঘটের ডাক দিলেও বৃহস্পতিবার সারাদিন বাস ধর্মঘটের বিষয়টি ধোঁয়াশায় ছিল। তবে রাতে এ বিষয়টি পরিষ্কার করে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। 

সংগঠনটি জানায়, পণ্যবাহী যানের পাশাপাশি শুক্রবার সকাল ছয়টা থেকে বাসও চালাবেন না মালিকরা।

তবে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি আনুষ্ঠানিকভাবে ধর্মঘটের ডাক দেয়নি। বৃহস্পতিবার রাতে সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, পরিবহন মালিকরা গাড়ি চালাবেন না। তাদের সিদ্ধান্ত বহাল রয়েছে। আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে কোনো ঘোষণা না দিলেও গাড়ি বন্ধ থাকবে শুক্রবার সকাল ছয়টা থেকে।

একই সুরে কথা বলেন বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সাধারণ সম্পাদক রাকেশ ঘোষ। তিনি বলেন, শুক্রবার সকাল থেকে সারা দেশে পরিবহন চলাচল বন্ধ থাকবে। আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে ধর্মঘটের ঘোষণা দিইনি। কিন্তু মালিকরা গাড়ি চালাবেন না। আঞ্চলিক কমিটিগুলো বিভিন্ন জেলায় বাস চলাচল বন্ধ রাখার ঘোষণা দিচ্ছে।

জেইউ/আইএসএইচ/এমএইচএস/জেএস