ঢাকা থেকে ছাড়ছে না বাস, বিপাকে দূরপাল্লার যাত্রীরা
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের ডাকা ধর্মঘট শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে শুরু হয়েছে। ফলে সকালে রাজধানী থেকে দূরপাল্লার বাস ছাড়েনি। বাস না চলায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা।
সকালে রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, দূরপাল্লার বাস টার্মিনালে প্রবেশ করলেও ঢাকা থেকে কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। কাউন্টারগুলোর সামনে ও মূল সড়কে সারি সারি বাস দাঁড়িয়ে থাকলেও কোনো বাসেই যাত্রী নেওয়া হচ্ছে না।
বিজ্ঞাপন
গাবতলী বাস কাউন্টারের ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, বাসের কুলি-হেলপারসহ শ্রমিকরা অলস সময় পার করছেন। কাউন্টার খোলা থাকলেও টিকিট বিক্রি হচ্ছে না।
পরিবহন ধর্মঘটের জানতেন না সাতক্ষীরা যেতে চাওয়া শামসুল হুদা। গাবতলী চার্মিনালে গিয়ে জানতে পারেন বাস চলছে না। তিনি বলেন, ‘বিপাকে পড়ছি, বাড়ি যেতেই হবে। পারিবারিক সমস্যা। কিন্তু বাস চলছে না। আগে জানলে বিকল্প ব্যবস্থা করতাম। এখন ভেঙে ভেঙে যেতে হবে।’
স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে কাউন্টার থেকে কাউন্টারে ঘুরতে দেখা যায় বরিশাল যেতে চাওয়া আব্দুল মতিনকে। তিনি বলেন, ‘কোনো বাস চলছে না। বাড়িতে আজ রাতে একটা বিয়ের অনুষ্ঠান আছে। সেখানে অংশ নিতেই বের হয়েছিলাম, কিন্তু কোনো বাস চলছে না। এখন সদরঘাটে যাব, লঞ্চে করে হলেও বাড়ি যেতে হবে।’
গাবতলী বাস টার্মিনালের হানিফ কাউন্টারের ম্যানেজার জাকির মল্লিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘সরকার হঠাৎ ডিজেলের দাম বৃদ্ধি করেছেন। এর আগে গ্যাসের দামও বৃদ্ধি করা হয়েছে। তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে গাড়িপ্রতি যেখানে খরচ হতো ২০ হাজার সেখানে এখন খরচ হবে ২৫ হাজার টাকা। লোকসান করে তো আর বাস চালানো যায় না। তাই ফেডারেশন ধর্মঘট ডেকেছে। তেলের দাম বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষও যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, তেমনি পরিবহনখাতও ক্ষতিগ্রস্ত। দাম কমানো না হলে বাস চালানো সম্ভব না।’
ফরিদপুর-বরিশাল-গোপালগঞ্জ-কুয়াকাটা রুটে চলাচল করা গোল্ডেন লাইন বাসের গাবতলী কাউন্টারমাস্টার মিজানুর রহমান বলেন, ‘তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতারা ধর্মঘট ডেকেছেন, তাই বাস চলছে না। কাউন্টারে যাত্রীরা আসছেন, কিন্তু টিকিট বিক্রি হচ্ছে না, ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যদি কোনো সিদ্ধান্ত হয়, তাহলে হয়তো দুপুরে ফের শুরু হবে বাস চলাচল।’
ট্রাক ও পণ্যবাহী পরিবহনের মালিকরা ধর্মঘটের ডাক দিলেও বৃহস্পতিবার সারাদিন বাস ধর্মঘটের বিষয়টি ধোঁয়াশা ছিল। তবে রাতে এ বিষয়টি পরিষ্কার করে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। সংগঠনটি জানায়, পণ্যবাহী যানের পাশাপাশি শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে বাস চলাচলও বন্ধ রাখবেন মালিকরা।
তবে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি আনুষ্ঠানিকভাবে ধর্মঘটের ডাক দেয়নি। বৃহস্পতিবার রাতে সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘পরিবহন মালিকরা গাড়ি চালাবেন না। তাদের সিদ্ধান্ত বহাল রয়েছে। আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে কোনো ঘোষণা না দিলেও গাড়ি বন্ধ থাকবে শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে।’
একই সুরে কথা বলেন বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সাধারণ সম্পাদক রাকেশ ঘোষ। তিনি বলেন, ‘শুক্রবার সকাল থেকে সারাদেশে পরিবহন চলাচল বন্ধ থাকবে। আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে ধর্মঘটের ঘোষণা দেইনি। কিন্তু মালিকরা গাড়ি চালাবেন না। আঞ্চলিক কমিটিগুলো বিভিন্ন জেলায় বাস চলাচল বন্ধ রাখার ঘোষণা দিচ্ছে।’
তবে বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁও কার্যালয় থেকে অনেকটা আনুষ্ঠানিকভাবেই ধর্মঘটের ডাক দেন বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান ও ট্যাংক লরি-প্রাইম মুভার মালিক শ্রমিক সমন্বয় পরিষদের আহ্বায়ক রুস্তম আলী খান।
বুধবার মধ্যরাত থেকে ডিজেলের মূল্য লিটারপ্রতি ১৫ টাকা বাড়িয়েছে সরকার। নতুন মূল্য কার্যকর হওয়ার পর বৃহস্পতিবার সভা করেছে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন। অতিরিক্ত দামে ডিজেল কিনে পরিবহন চালাতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন মালিকরা। সেক্ষেত্রে ভাড়া সমন্বয়ের দাবি ওঠে। ডিজেলের দাম কমানো, নতুবা ভাড়া সমন্বয়ের দাবি ওঠে সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে। দাবি পূরণ না হলে পরিবহন চালানো সম্ভব নয় বলে জানান তারা। তাদের সঙ্গে একমত হন পরিবহন শ্রমিক নেতারা।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বলেন, ‘যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী গাড়ির মালিকরা শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে গাড়ি চালানো বন্ধ রাখবেন বলে জানিয়েছেন। পরিবহন শ্রমিকরা তাতে সহায়তা করবেন। জ্বালানি তেলের বাড়ানো দাম কমাতে হবে বা পরিবহন ভাড়া সমন্বয় করতে হবে। তা না করা পর্যন্ত গাড়ি চালানো বন্ধ থাকবে।’
বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সাধারণ সম্পাদক রাকেশ ঘোষ বলেন, ‘ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় বৃহস্পতিবার আমাদের সংগঠনের বাস মালিকদের সঙ্গে সভা করেছি। তারপর দফায় দফায় সভা হয়েছে। বাস ভাড়া বাড়ানোর একটি প্রস্তাব তৈরি করা হচ্ছে। এই প্রস্তাব সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হবে।’
বাস ভাড়া ৫০ শতাংশ বাড়ানোর দাবি
রাকেশ ঘোষ বলেন, ‘ডিজেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। একইসঙ্গে চাকাসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশের দাম বেড়েছে। ২০১৯ সালে বাস ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হলেও প্রজ্ঞাপন জারি করে তা কার্যকর করা হয়নি। ফলে বাস ভাড়া ৫০ শতাংশ বাড়ানো উচিত।’
জেইউ/ওএফ