জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচার দাবি
সেনা ও বিমানবাহিনীর সদস্যদের অন্যায়ভাবে ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর ফাঁসি, কারাদণ্ড ও চাকরিচ্যুত করার অপরাধে জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচার দাবি করেছেন মৃতদের স্বজনরা। এছাড়া ওই দিন যাদের বিনাবিচারে ফাঁসি, কারাদণ্ড ও চাকুরিচ্যুত করা হয়েছিল তাদের নির্দোষ ঘোষণাসহ সাত দফা দাবি জানিয়েছেন তারা।
বুধবার (৩ নভেম্বর) জেল হত্যা দিবসে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে আসেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এ সময় স্বজনরা মন্ত্রীর কাছে এসব দাবি জানান।
বিজ্ঞাপন
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ বিষয়ে বলেন, ১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমান সেনা বিদ্রোহের নামে শত শত লোককে যে হত্যা করেছেন সেটিও একটি ন্যক্কারজনক ঘটনা। নিহতদের পরিবারের সদস্যরা এখনো আহাজারি করছেন। তারা জানতে চান কেন তাদের বাবা কিংবা স্বামীকে হত্যা করা হয়েছিল, তারা জানতে চান কীভাবে তাদের হত্যা করা হয়েছে। মৃতদের কবর কোথায় জানতে চান তারা। এই বিষয়ে একটি রিট আবেদন রয়েছে হাইকোর্টে। আমরা রিট আবেদনের রায়ের অপেক্ষা করছি। আমরা চাই সব দোষী ব্যক্তির যেন বিচার হয়।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাইলে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার সামরিক আদালতে করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের বিচার প্রচলিত বিচার ব্যবস্থায় হয়েছে এবং তাদের ফাঁসি হয়েছে। বিডিআর (বর্তমান বিজিবি) কাণ্ডের বিচার হয়েছে এবং আপিল করায় তা এখন উচ্চতর আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। কিন্তু ১৯৭৭ সালের বিদ্রোহের ঘটনায় যারা মারা গেছেন তাদের বিষয়ে এখনো কোনো কিছু হয়নি। এমনকি কোথায় তাদের দাফন করা হয়েছে তা এখনো কেউ জানে না। হত্যার পর তাদের মরদেহগুলো পরিবারের হাতে দেওয়া হয়নি। তাদের পরিবারের সদস্যরা আদালতে যে আপিল করেছেন সেখান থেকে একটি সুষ্ঠু দিকনির্দেশনা আসবে বলে আশাবাদী আমরা।
স্বজনদের সাত দফা দাবিগুলো হলো
# ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর সেনা ও বিমান বাহিনীর সদস্য যারা খুনি জিয়ার সামরিক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে অন্যায়ভাবে ফাঁসি, কারাদণ্ড ও চাকরিচ্যুত হয়েছেন তাদের নির্দোষ ঘোষণা করা।
# যারা খুনি জিয়ার সামরিক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে ফাঁসি- কারাদণ্ড ও চাকরিচ্যুত হয়েছেন তাদের প্রত্যেককে স্ব-স্ব পদে সর্বোচ্চ র্যাংকে পদোন্নতি দেখিয়ে বর্তমান স্কেলে বেতন-ভাতা ও পেনশনসহ সরকারি সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা প্রদান করা।
# সামরিক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে যেসব বীর মুক্তিযোদ্ধা, সেনা ও বিমান বাহিনী সদস্যদের অন্যায়ভাবে ফাঁসি হয়েছে তাদের শহীদ হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘোষণা করা এবং কবরস্থান চিহ্নিত করে কবরস্থানে নামসহ স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করা।
# যারা খুনি জিয়ার সামরিক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন সেসব সেনা ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের পুনর্বাসিত করার লক্ষ্যে তাদের পোষ্যদের যোগ্যতা অনুসারে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ প্রদান করা।
# যেসব সেনা ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের অন্যায়ভাবে ফাঁসি, কারাদণ্ড ও চাকরিচ্যুত হয়েছেন তাদের তালিকা প্রকাশ করা।
# যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন এবং এখনো আছেন কিন্তু পাকিস্তানি সামরিক জান্তা তাদের বিভিন্ন বন্দি শিবিরে আটক করে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেছে তাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ঘোষণা করা।
# অন্যায়ভাবে ফাঁসি, কারাদণ্ড ও চাকরিচ্যুত করার অপরাধে খুনি জেনারেল জিয়ার মরণোত্তর বিচার চাই।
এমএসি/এসকেডি