বঙ্গবন্ধু সেতু ও মুক্তারপর সেতুতে নতুন টোলহার কার্যকর হচ্ছে এক সপ্তাহের মধ্যে। এ সংক্রান্ত সফটওয়্যার হালনাগাদসহ অন্যান্য প্রস্তুতির পর নতুন হারে টোল আদায় শুরু হবে বলে সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। এখন সফটওয়্যার হালনাগাদের কাজ চলছে। 

সেতু বিভাগ সূত্রে আরও জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু সেতুর টোল ১০ বছর পর বাড়ানো হয়েছে। এবার সেতুর টোল ১৭ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। বঙ্গবন্ধু সেতু যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয় ১৯৯৮ সালের জুন মাসে। চালুর পর ২০১১ সালে সেপ্টেম্বর থেকে টোল বাড়ানো হয়।

>> গত অর্থ বছরে বঙ্গবন্ধু সেতুতে সর্বোচ্চ টোল আদায়
>> পরিবহন নেতারা ক্ষুব্ধ, চিঠি যাচ্ছে সরকারের কাছে
>> ১০ বছর পর বাড়ল বঙ্গবন্ধু সেতুর টোল

এদিকে, বাড়তি টোল আদায়ের সিদ্ধান্ত জানার পর পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতারা ঢাকা পোস্টকে বলেছেন, এই টোল বাড়ানোর ক্ষেত্রে তাদের মতামত নেওয়া হয়নি। করোনাকালে পরিবহন খাতে ব্যবসায় মন্দাবস্থা চলছে। তাই টোল বাড়ানো হলে তা যৌক্তিক হবে না। এ কারণে তারা সরকারের কাছে টোল বৃদ্ধির প্রতিবাদে চিঠি দেবেন।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, দুই সেতুতে টোল বাড়ানোর বিষয়ে অংশীজন হিসেবে আমাদের সঙ্গে কোনো বৈঠক করা হয়নি। এ বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। যখন পরিবহন খাতে করোনার প্রভাবে করুণ অবস্থা চলছে তখন এই টোল বাড়ানোর কোনো যুক্তি দেখি না। সরকারের কাছে টোল না বাড়ানোর দাবি জানাব, চিঠি দেবো।

বাংলাদেশ ট্রাক কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রুস্তম আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনার সংক্রমণের কারণে পণ্য পরিবহন বাণিজ্যে মন্দা চলছে। পরিবহন খাত সেবা খাত। এ অবস্থায় পণ্য পরিবহনের টোল বেশি নেওয়ার বিষয়টি আমরা মানতে পারছি না। সংগঠনের পক্ষ থেকে টোল কমানোর দাবি জানিয়ে সরকারের কাছে চিঠি দেবো।

টোল বাড়ানোর বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বলেন, হুট করে টোল বাড়ানো হচ্ছে। তাতে পরিবহন চালকরা বিপদে পড়বেন। কারণ তারা তো যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে পারবেন না।

এদিকে, বাংলাদেশ সেতু বিভাগের সচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীক জানিয়েছেন, টোল আদায়ের বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সর্বসাধারণকে অবহিত করা হবে।

বাংলাদেশ সেতু বিভাগ থেকে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থ বছরে বঙ্গবন্ধু সেতুতে টোল আদায় হয়েছে ৬৫৪ কোটি ৮২ লাখ টাকার। তার আগের অর্থবছরে এই সেতুতে টোল আদায় করা হয় ৫৬০ কোটি ২৮ লাখ টাকা। গত অর্থ বছরে এ ই সেতুতে টোল আদায় হয়েছে সর্বোচ্চ। এবার টোল হার বাড়ানোয় টোল থেকে আরও বেশি আয় করবে সরকার।

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (২ নভেম্বর) দুই সেতুতে টোল বাড়ানোর বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ)। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, নতুন টোলের হার অবিলম্বে করা কার্যকর হবে।

জারি করা প্রজ্ঞাপন থেকে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু সেতুতে মোটর সাইকেলের টোল ৪০ টাকা থেকে বেড়ে হচ্ছে ৫০ টাকা। কার ও জিপে টোল ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৫৫০ টাকা করা আদায় করা হবে। মাইক্রোবাস ও পিকআপের (দেড় টনের কম) টোল ১০০ টাকা বাড়িয়ে ৬০০ টাকা করা হয়েছে। ছোট বাসের (সর্বোচ্চ ৩১ আসন) টোল ১০০ থেকে বাড়িয়ে ৭৫০ টাকা, বড় বাসের (৩২ আসন ও তার বেশি) টোল ১০০ টাকা বাড়িয়ে এক হাজার টাকা করা হয়েছে। এছাড়া ছোট ট্রাকে (দেড় থেকে ৫ টন) টোল ৮৫০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা বাড়িয়ে এক হাজার টাকা করা হয়েছে।  মাঝারি ট্রাকের (৫ থেকে ৮ টন) টোল এক হাজার ২৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন তা আদায় হচ্ছে এক হাজার ১০০ টাকা। বড় ট্রাকে (৮ থেকে ১১ টন) টোল ৪০০ টাকা বাড়িয়ে এক হাজার ৬০০ টাকা করা হয়েছে।

এছাড়াও ট্রাক (৩ এক্সেল) দুই হাজার , ট্রেইলার (৪ এক্সেল) তিন হাজার, ট্রেইলার (৪ এক্সেলের অধিক) চার হাজার টাকা এবং সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন চলাচলের জন্য প্রতি বছর এক কোটি টাকা টোল আদায় করা হবে।

প্রজ্ঞাপন থেকে জানা গেছে, মুক্তারপুর সেতুতে ভ্যান (তিন চাকা বিশিষ্ট) ও মোটরসাইকেলের টোল ১৫ টাকা করা হয়েছে। সিএনজি অটোরিকশার টোল ৩০ টাকা, কার, টেম্পো, জিপ, মাইক্রো ও পিকআপের টোল ৫০ টাকা, ছোট বাসে ৫০ টাকা বাড়িয়ে ১৫০ টাকা, বড় বাসে ৫০ টাকা বাড়িয়ে ২৫০ টাকা, ছোট ট্রাকে ৫০ টাকা বাড়িয়ে ২০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। মাঝারি ট্রাকে টোলও ৫০ টাকা বাড়িয়ে ২৫০ টাকা, বড় ট্রাকে টোল ১০০ টাকা বাড়িয়ে ৬০০ টাকা করা হয়েছে।

পিএসডি/ওএফ