চট্টগ্রামে আগুনে দগ্ধ সাজেদা বেগমের মৃত্যু, বাড়ির মালিক গ্রেফতার
চট্টগ্রাম নগরীর উত্তর কাট্টলী এলাকায় গ্যাস লাইনের লিকেজ থেকে আগুনে দগ্ধ সাজেদা বেগমের (৪৮) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। দগ্ধ একই পরিবারের আরও চার জন বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এছাড়া অগ্নিদগ্ধের ঘটনায় বাড়ির মালিক মমতাজ মিয়াকে (৫৭) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় দুই জনকে আসামি করে নগরীর আকবর শাহ থানায় মামলা দায়ের করেছেন সাজেদা বেগমের স্বামী মোহাম্মদ জামাল শেখ।
মঙ্গলবার (২ নভেম্বর) রাতে ঢাকা পোস্টকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন আকবর শাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জহির হোসেন।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, আগুনের ঘটনায় দগ্ধ সাজেদা বেগম ( ৪৮) চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যা ৭টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা গেছেন। বাকি চার জন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আর দিলরুবা বেগমকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় বাড়ির মালিক মো. মমতাজ মিয়া সওদাগরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর আগে বাড়ির মালিক মমতাজ মিয়া ও মালিকের শ্যালক বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী বিরুদ্ধে মামলা করেছেন সাজেদা বেগমের স্বামী মোহাম্মদ জামাল শেখ। পলাতক বখতিয়ারকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
এর আগে সোমবার রাতে এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় ছয় জন দগ্ধ হয়েছিলেন। চট্টগ্রাম নগরীর উত্তর কাট্টলী কমিউনিটি সেন্টার রোডে মরিয়ম ভিলার ষষ্ঠ তলায় ভাড়াটিয়া জামাল শেখের বাসায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। জামাল স্থানীয় হাক্কানি আয়রন মার্টের নিরাপত্তাকর্মী। পুলিশ জানিয়েছে, তার বাড়ি জামালপুরে।
আগুনে দগ্ধরা হলেন- মা সাজেদা বেগম (৪৮), ছেলে সানি (২৯), স্বাধীন (১৭) ও জীবন (১৫), মেয়ে মাহি (১০) এবং বড় ছেলের স্ত্রী দিলরুবা (২৪)। এর মধ্যে সাজেদা বেগম মারা গেছেন। আর দিলরুবাকে চিকিৎসা শেষে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। সোমবার রাত ১২টার দিকে তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে নেওয়া হয়। বাকি পাঁচ জনের অবস্থাই আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছিলেন চিকিৎসক।
দগ্ধদের পরিবারের অভিযোগ, গ্যাসের লাইনে লিকেজের বিষয়টি একাধিকবার ভবনের কেয়ারটেকারকে জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। একটু সচেতন হলেই এড়ানো যেত এ দুর্ঘটনা। জানা গেছে, গত বছরও একই ভবনে গ্যাস লাইন লিকেজের কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছিল। আগুনে দগ্ধ হয়েছিলেন দুই পরিবারের ৯ জন। এতে প্রাণ হারিয়েছিলেন দুই জন।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের বিভাগীয় প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. রফিক উদ্দিন আহমদ ঢাকা পোস্টকে বলেছিলেন, সোমবার রাতে দগ্ধ হওয়া ছয় জনের মধ্যে পাঁচ জনেরই শ্বাসনালী পুড়ে গেছে, অবস্থা আশঙ্কাজনক। দগ্ধদের শরীরের সাত শতাংশ থেকে ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত পুড়ে গেছে।
দগ্ধদের মধ্যে মারা যাওয়া সাজেদা বেগমের শরীরের ৮৫ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। আর তার ছেলে স্বাধীনের ৪২ শতাংশ ও জীবনের ৪০ শতাংশ এবং মেয়ে মাহিয়ার ৩৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। এছাড়া সানির ২০ শতাংশ ও তার স্ত্রী দিলরুবার শরীরের ৭ শতাংশ পুড়ে গেছে।
সাজেদা বেগমের মেজো ছেলে লিমন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এক সপ্তাহ আগে বাসায় গ্যাসের গন্ধ পেয়ে বাড়ির কেয়ারটেকারকে বিষয়টি জানিয়েছি। তাকে বাসায় এসে গ্যাসের লিকেজের বিষয়টি দেখার অনুরোধ করি। কেয়ারটেকার এসে দেখে বলেন, এটি কোনো সমস্যা নয়।
তিনি বলেন, দুর্ঘটনার দুই দিন আগে কেয়ারটেকারকে গ্যাস লিকেজ হওয়ার বিষয়টি আবারও জানিয়েছি। তাকে বলেছি, গ্যাসের গন্ধটা আরও বেশি হচ্ছে। কেয়ারটেকার আবারও আমাদের অভিযোগকে গুরুত্ব না দিয়ে ‘সমস্যা নেই’ বলে চলে যান। গতকাল (সোমবার) রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঘটনার সময় সবাই গল্প করছিল। এ সময় আমি বাথরুমে থাকায় বেঁচে যাই।
তিনি আরও বলেন, আমার ছোটবোন মশা মারার ব্যাট দিয়ে মশা মারছিল। সে সময় দরজা-জানালা সব বন্ধ ছিল। যে কারণে লিকেজের গ্যাস বাসা থেকে বের হতে পারেনি। মশা মারার সময় ব্যাট থেকে যে আগুনটা হয় তাতেই পুরো ঘর জ্বলে গেছে। যাদের অবহেলার কারণে আমার পরিবারের ছয় জন দগ্ধ হলেন আমি তাদের বিচার চাই।
সাজেদা বেগমের স্বামী মোহাম্মদ জামাল শেখ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘটনার সময় আমি বাইরে থাকায় বেঁচে গেছি। আমার হাসিখুশি পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালের বেডে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। বাড়ির কেয়ারটেকারকে আমিও বাসায় গ্যাসের গন্ধ পাওয়ার বিষয়টি জানিয়েছিলাম। তখন তিনি বলেছিলেন, বাইরের গ্যাসের গন্ধ। বিষয়টি নিয়ে আমরা ভবন মালিকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি। সে সময় ব্যবস্থা নিলে আমার পরিবার রক্ষা পেত।
তিনি বলেন, আমি চিকিৎসার টাকা জোগাড় করা নিয়ে টেনশনে আছি। বাড়ির মালিকরা রাতে এসে আমার পরিবারের দগ্ধদের দেখে গিয়েছিল। আর খোঁজ নেয়নি।
চট্টগ্রামের আকবর শাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহির হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, দগ্ধদের পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলেছি। তারা বলেছেন গ্যাস লিকেজ থেকে এ ঘটনা ঘটেছে।
কেএম/এসএসএইচ