বিআরটিএ মিরপুর সার্কেল অফিসের স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স কেন্দ্রে আগের মতো ভিড় নেই /ছবি- ঢাকা পোস্ট

দীর্ঘ জটিলতার পর বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহ শুরু করলেও গ্রাহক পর্যায়ে খুব একটা সাড়া মেলেনি। গ্রাহকদের মোবাইল ফোনে বিআরটিএ থেকে মেসেজ পাঠানো হলেও তার বিপরীতে সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। বিআরটিএর বিভিন্ন সার্কেল অফিস থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। বিআরটিএ কর্মকর্তাদের দাবি, মোবাইল ফোনের সিম বদল হওয়ায় বহু গ্রাহক মেসেজ না পাওয়ায় এ জটিলতা তৈরি হয়েছে।

মঙ্গলবার (২ নভেম্বর) বিআরটিএ মিরপুর কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে, গত ১০ অক্টোবর থেকে সেনাবাহিনীর মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) থেকে এখন পর্যন্ত মিরপুর অফিসে ৭ হাজার ৫৩৫টি ড্রাইভিং লাইসেন্স পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ৫ হাজার ৩৪০টি ড্রাইভিং লাইসেন্স এখনো রয়ে গেছে। এসব স্মার্ট কার্ড গ্রাহকরা নিতে আসেননি।

বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, দুই বছরের বেশি সময় ধরে আটকে ছিল ১২ লাখ ৪৫ হাজার স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স। গত ১০ অক্টোবর থেকে আটকে পড়া এসব লাইসেন্স গ্রাহককে দেওয়া শুরু হয়েছে। এ যাবত প্রায় ২৫ হাজার স্মার্ট কার্ড মুদ্রণ করেছে বিএমটিএফ। এ জন্য বিআরটিএ ও সেনাবাহিনীর বিএমটিএফ প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে মুদ্রণ শুরু করেছে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, করোনার মধ্যে শুধু আঙ্গুলের ছাপ না নেওয়ায় কমপক্ষে সাত লাখ আবেদনকারী বিপাকে পড়েন। তাদের আঙ্গুলের ছাপ নেওয়াও শুরু হয়েছে। রাজধানীর পল্লবীতে স্থাপিত এনরোলমেন্ট স্টেশনে আবেদনকারীদের আঙ্গুলের ছাপ নেওয়ার কার্যক্রম চলছে।

বিআরটিএ মিরপুর অফিসের উপ-পরিচালক শফিকুজ্জামান ভূঁইয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে বসে আছি। সংশ্লিষ্ট গ্রাহকদের মোবাইল ফোনে মেসেজ দেওয়া হলেও বেশিরভাগ গ্রাহক লাইসেন্স নিতে আসছেন না।

বিআরটিএ মিরপুর অফিসের দৃশ্য /ছবি- ঢাকা পোস্ট

কারণ জানতে চাইলে বিআরটিএ মিরপুর অফিসের লাইসেন্স শাখার সহকারী পরিচালক আবদুর রশিদ বলেন, বহু গ্রাহক মোবাইল ফোনের সিম পরিবর্তন করে ফেলেছেন। ফলে মেসেজ পাঠালেও তাদের কাছে তা পৌঁছাচ্ছে না। এ অবস্থায় আমরা নির্দিষ্ট নম্বরে বারবার ফোন দেওয়ার পর বন্ধ পাচ্ছি।

প্রসঙ্গত, আটকে পড়া ১২ লাখ ৪৫ হাজার লাইসেন্স মুদ্রণের জন্য গত ২৯ আগস্ট বিএমটিএফের সঙ্গে বিআরটিএ চুক্তি সই করে। এরপর গত ১০ অক্টোবর থেকে স্মার্ট কার্ড লাইসেন্স সরবরাহ শুরু করেছে বিআরটিএ। আগামী পাঁচ মাসের মধ্যে আটকে থাকা ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহ শেষ করবে বিআরটিএ।

প্রায় দুই বছর ধরে বিআরটিএ জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহ করতে পারছিল না। অন্তর্বর্তীকালীন প্রাপ্তি স্বীকার রশিদ মোটরযান চালানোর অস্থায়ী অনুমতিপত্র হিসেবে ব্যবহার করছিলেন চালকরা। লিখিত, মৌখিক ও ব্যবহারিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও ড্রাইভিং লাইসেন্স পাচ্ছিলেন না ১২ লাখ ৪৫ হাজার গাড়িচালক। তাদেরকে লাইসেন্স দেওয়া শুরু হয়েছে।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গত ৮ সেপ্টেম্বর বিআরটিএর প্রধান কার্যালয়ে মতবিনিময় সভায় বলেছিলেন, ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানে বিলম্ব আমাদের সব অর্জনকে ম্লান করে দিয়েছে। তাই কোনোভাবেই আর বিলম্ব করা যাবে না।

পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও ড্রাইভার্স ট্রেনিং সেন্টারের চেয়ারম্যান মো. নুর নবী শিমু ঢাকা পোস্টকে বলেন, কমপক্ষে দুই লাখ চালক লাইসেন্স না পাওয়ায় বিদেশে চাকরিতে যোগ দিতে পারেননি। আমার মনে হয়, সমন্বয় জোরদার করে লাইসেন্স সরবরাহের ব্যবস্থাপনায় আরও গতি আনা যায়।

এদিকে, নতুন আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ যাবত ৭০ হাজার স্মার্ট কার্ড লাইসেন্স তৈরি করে বিআরটিএর কাছে সরবরাহ করেছে মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স। ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহের জন্য বিআরটিএর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় এই প্রতিষ্ঠান। গত ৩১ ডিসেম্বর থেকে স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহের কথা ছিল প্রতিষ্ঠানটির। বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানটি দুই দফায় সময় বাড়িয়ে নেয়। এখন প্রতিষ্ঠানটি অবশ্য লাইসেন্স সরবরাহ করছে শুধু নতুন আবেদনকারীদেরকে। জানা গেছে, চুক্তি অনুসারে, মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স পাঁচ বছরে ৪০ লাখ স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহ করবে।

দেশে গাড়ি চালানোর ড্রাইভিং লাইসেন্সের স্বাভাবিক সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় ২০১৯ সালের আগস্ট মাস থেকে। টাইগার আইটি বাংলাদেশ লিমিটেডের সঙ্গে বিআরটিএ এর চুক্তি শেষ হয় গত ২২ জুন। চুক্তির মেয়াদ ২০২১ সালের ২২ জুন পর্যন্ত থাকলেও বিপুল চাহিদার ফলে চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স সরবরাহ শেষ হয় ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে। টাইগার আইটির ১৫ লাখ স্মার্ট কার্ড গত ২২ জুনের মধ্যে দেওয়ার সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল। অতিরিক্ত চাহিদার কারণে ২০১৯ সালের মার্চের মধ্যেই প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ১২ লাখ কার্ড বিতরণ শেষ করে।

পিএসডি/ওএফ