আরও ৭২ ঘণ্টা গুরুত্বপূর্ণ আকিবের জন্য
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে (চমেক) ছাত্রলীগের সংঘর্ষে গুরুতর আহত হয়ে আইসিইউতে থাকা শিক্ষার্থী মাহাদী জে আকিব (২১) চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছেন। চিকিৎসকরা বলছেন, তার ‘সেন্সের মাত্রা’ এখন ১৫। অবস্থার উন্নতি আশা জাগালেও স্থিতিশীল অবস্থার জন্য আরও ৭২ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে।
সোমবার (১ নভেম্বর) দুপুরে চমেক হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক এস এম নোমান খালেদ চৌধুরী এসব কথা জানিয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
আকিবকে আজ মুখে খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আইসিইউতে থাকা আকিবের অবস্থা ধীরে ধীরে উন্নতির দিকে যাচ্ছে। আমি আকিবের সঙ্গে কথা বলছি। তিনি চিকিৎসকদের কথা অনুসারে রেসপন্স করতে পেরেছেন। আমি বলতে পারি, তার অবস্থা সন্তোষজনক পর্যায়ে উন্নতি হয়েছে।’
নোমান খালেদ চৌধুরী আরও বলেন, ‘আকিব অজ্ঞান ছিল। অজ্ঞান অবস্থায় থেকে তার অপরাশেন করা হয়েছে। এরপর আইসিইউতে দেওয়া হয়েছে। আইসিইউতে তার জ্ঞান ফিরেছে। তার অবস্থা উন্নতির দিকে যাচ্ছে। আমাদের ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে।’
আকিব শঙ্কামুক্ত কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আকিব জীবন সংকটে ছিলেন। এ ধরনের ক্ষেত্রে আমরা অনেক রোগীকেই হারাই। এ ধরনের রোগীর ক্ষেত্রে আরও ৭২ ঘণ্টা ধৈর্য ধরতে বলব। তবে যেহেতু উন্নতি হচ্ছে আমরা আশার আলো দেখছি। আকিব উন্নতির দিকে যাচ্ছেন। আমরা আশাবাদী, আকিব সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরবেন। রোগীর যতক্ষণ প্রয়োজন ততদিন আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেকোনো সার্জারির পরেই চ্যালেঞ্জ থাকে। ইনফেকশন যাতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হচ্ছে। রোগীর যেন খিঁচুনি না হয়। কারণ, এ ধরনের রোগীদের ক্ষেত্রে খিঁচুনি হয়। আকিবের যাতে খিঁচুনি না হয় সেজন্য যা ব্যবস্থা নেওয়া দরকার নিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘আকিব মস্তিষ্কের যেখানে আঘাত পেয়েছেন তা আমাদের অপরাশেন এরিয়ায় বাইরে। ফলে কিছু কিছু জায়গায় তার মাইক্রোস্কপিং ইনজুরি আছে। এই ইনজুরি থেকে রিকভার করাটাও চ্যালেঞ্জ।’
এই চিকিৎসক বলছেন, ‘আকিবের মাথার হাড় ভেঙে গেছে। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়েছে। এ অবস্থায় অপারেশন করে মাথার হাড়ের একটা অংশ খুলে আপাতত তার পেটের চামড়ার নিচে রাখা হয়েছে। কিছুটা উন্নতি হলে সেটি আবার আগের জায়গায় প্রতিস্থাপন করা হবে। এ কারণে মাথার ব্যান্ডেজে লিখে দেওয়া হয়েছে, ‘হাড় নেই, চাপ দেবেন না’। সঙ্গে এঁকে দেওয়া হয়েছে বিপজ্জনক চিহ্ন।’
প্রফেসর ডা. রঞ্জন কুমার নাথ বলেন, ‘আকিবের অবস্থা উন্নতির দিকে। আকিবকে আজকে মুখ দিয়ে খাবার দেওয়ার চেষ্টা করছি। আশা করছি তিনি উন্নতির দিকে যাবেন। তার মাথায় হাড় না থাকা নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। আকিব ভালো হওয়ার পরে অপরাশেন করে স্থাপন করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আকিবের শুভাকাঙ্ক্ষীদের অনুরোধ করব তারা যেন আইসিইউতে ভিড় না করেন। ভিড় করলে ইনফেকশনের সম্ভাবনা বেড়ে যায়, ইনফেকশন হয়ে গেলে ক্ষতি হবে রোগীর।’
আজকে আকিবের বাবা গোলাম ফারুক মজুমদার বলেন, ‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের চিকিৎসায় আমরা সন্তুষ্ট। তারা তাদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।’
আকিবের জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়ে তিনি বলেন, ‘আকিবের ঘটনাকে কেন্দ্র করে আর যেন কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে। সব ছাত্র যেন পড়ালেখা শেষ করে পিতামাতার কোলে ফিরে যাতে পারে।’
এর আগে চিকিৎসারা জানিয়েছিলেন, রোববার দুপুরের পরে আকিবের জ্ঞান ফিরেছে। কথাও বলেছেন। তাকে আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হবে।
আকিব আহত হওয়ার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার বাদী ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের পঞ্চম বর্ষের ছাত্র তৌফিকুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেছিলেন, ‘আজ তার লাইফ সাপোর্ট খুলে ফেলা হয়েছে। তার জ্ঞানও ফিরেছে। আকিবকে কোনো প্রশ্ন করলে উত্তর দিতে পারছেন। তবে তার পুরোপুরি সুস্থ হতে অনেক সময় লাগবে।’
এর আগে চমেক হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক এস এম নোমান খালেদ চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেছিলেন, ‘‘আকিবের মাথার যে অংশে অপারেশন করা হয়েছে সেখানে এখন হাড় নেই। ওখানে যদি কেউ চাপ দেয়, তাহলে ব্রেনের ক্ষতি হবে। তাই ব্যান্ডেজে লিখে রাখা হয়েছে, ‘হাড় নেই, চাপ দেবেন না’। সবাইকেই সতর্ক করা হয়েছে। আশা করছি, আকিব পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাবে।’’
গত শুক্রবার (২৯ অক্টোবর) রাতে ও শনিবার চমেক ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের জের ধরে চমেক অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর শিক্ষার্থীদের দ্রুত হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
সংঘর্ষে আকিবের আহত হওয়ার ঘটনায় ১৬ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। শনিবার (৩০ অক্টোবর) রাতে পাঁচলাইশ থানায় মামলাটি দায়ের করেন কলেজের পঞ্চম বর্ষের ছাত্র তৌফিকুর রহমান। এই ঘটনায় জড়িত দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, মারধরের একপর্যায়ে আকিবের মাথায় আঘাত করা হয়েছে। আকিবকে হকিস্টিক ও বোতল দিয়ে আসামিরা আঘাত করেছে।
চমেক সূত্রে জানা গেছে, সংঘর্ষে জড়ানো একটি পক্ষ চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন ও আরেকপক্ষ শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেয়। আহত আকিব মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী বলে জানা গেছে।
কেএম/এইচকে/