গ্রেফতার আসামিদের একজন

চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার চাঁনপুর বাজার পুরান ঘাট এলাকা থেকে শাহ আলম নামের এক ব্যক্তির বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধারের ঘটনায় হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা শহিদুল ইসলাম কায়সার ওরফে বেলালসহ দুজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। 

রোববার (৩১ অক্টোবর) সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানান পিবিআই চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান। 

তিনি বলেন, শুক্রবার (২৯ অক্টোবর) বিকেলে বাঁশখালীর চাঁনপুর বাজার পুরান ঘাট এলাকার রাস্তার পাশের জমি থেকে শাহ আলমের  মরদেহ উদ্ধার করা হয়। লাশ উদ্ধারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করেছে পিবিআই। সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ ও প্রযুক্তির সহায়তায় আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন আসামি বেলাল। এছাড়া ঘটনায় জড়িত বাকি আসামিদের গ্রেফতারে জোর প্রচেষ্টা চলছে। 

তিনি আরও বলেন, আসামি শহিদুল ইসলাম কায়সার ওরফে বেলাল প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন যে, তার সঙ্গে ভিকটিম শাহ আলমের স্বর্ণের বার বহন করার টাকা ভাগবাটোয়ারা নিয়ে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। তারপর থেকেই বেলাল ভিকটিম শাহ আলমকে হত্যা করার পরিকল্পনা করেন এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটান। 

মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের এসআই মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, মামলার তদন্তে নেমে প্রথমেই চট্টগ্রাম শাহ আমানত সেতু এবং বাঁশখালী থানার তৈলার দ্বীপ ব্রিজের সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করি। পর্যালোচনাকালে দেখা যায় যে, ভিকটিম শাহ আলম তার গাড়ি নিয়ে গত ২৬ অক্টোবর সকালে চট্টগ্রাম শহর থেকে বের হয়ে বিকেলে ফেরত আসেন। ফুটেজে দেখা যায়, ২৭ অক্টোবর বিকেলে গ্রেফতার আসামি শহিদুল ইসলাম কায়সার ওরফে বেলাল ভিকটিম শাহ আলমের গাড়িটি চালিয়ে নাম্বার প্লেট খুলে চট্টগ্রাম শহর থেকে বের হন। একই তারিখে গাড়িতে রাত সাড়ে আটটার দিকে তৈলার দ্বীপ ব্রিজ হয়ে বাঁশখালীতে প্রবেশ করেন এবং রাত আটটা ৪০ মিনিটের দিকে বাঁশখালী থেকে পুনরায় তৈলার দ্বীপ ব্রিজ হয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা করে।  

এসআই মো. শাহাদাত হোসেন আরও বলেন, সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজ এবং আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির সূত্র ধরে শনিবার (৩০ অক্টোবর) চট্টগ্রাম নগরীর ডবলমুরিং থানা এলাকা থেকে শহিদুল ইসলাম কায়সার ওরফে বেলালকে (৩৬) গ্রেফতার করা হয়। পরে বেলালকে সহায়তাকারী নুরুল আমিন রনি (৩০) নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। 
 
পিবিআই সূত্রে জানা গেছে, ভিকটিম শাহ আলম গাড়ির মালিককে কোর্ট বিল্ডিং নামিয়ে দিয়ে বেলালের সাথে তার যে বিরোধ চলছিল তা মীমাংসা করার লক্ষে কর্ণফুলীর আহাসানিয়া পাড়া এলাকায় বেলালের মালিকানাধীন রড সিমেন্ট বিক্রয়ের অফিসে যান। এদিকে বেলাল ভিকটিম শাহ আলমকে হত্যার উদ্দেশ্যে পূর্ব-পরিকল্পনা অনুযায়ী নেশা জাতীয় ও ঘুমের ওষুধ কিনে তা প্রাণ ফ্রুটোর সাথে মিশিয়ে রেখে দেন। ভিকটিম শাহ আলম বেলালের অফিসে গেলে নেশা জাতীয় দ্রব্য ও ঘুমের ওষুধ মেশানো জুসটি খেতে দেন। খেয়ে শাহ আলম অচেতন হয়ে যান। এরই একপর্যায়ে মাথায় হাতুরি দিয়ে আঘাত করে শাহ আলমকে হত্যা করেন বেলাল। তারপর অন্যান্য  আসামিদের সহায়তায় লাশ বস্তাবন্দি করে বাঁশখালীতে ফেলে দেন। 

পিবিআই জানিয়েছে, বেলালের মালিকানাধীন রড-সিমেন্ট বিক্রয়ের অফিস হতে ভিকটিমের পরিহিত স্যান্ডেল, রক্ত মাখা বস্তা, ঘুমের ওষুধ, সিগারেটের অংশ ও নেশা জাতীয় জিনিস জব্দ করা হয়েছে। পরে শহিদুল ইসলাম কায়সার ওরফে বেলালের দেখানো মতে বাঁশখালী থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত হাতুরি উদ্ধার করা হয়। শাহ আলমকে খুন করে নিয়ে যাওয়া ও লাশ গুম করার কাজে ব্যবহৃত প্রিমিও-এফ কারটি মুহুরিগঞ্জ হাইওয়ে থানা এলাকা থেকে উদ্ধার করে জব্দ করা হয়েছে। 

এর আগে, শুক্রবার (২৯ অক্টোবর) বিকেলে বাঁশখালীর চাঁনপুর বাজার পুরান ঘাট এলাকার রাস্তার পাশের জমি থেকে শাহ আলমের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল। এরপরে ওই দিন রাতেই নিহত শাহ আলমরে মেয়ে আয়েশা আক্তার বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের নামে বাঁশখালী থানায় একটি মামলা করেন। এরপর পিবিআই হেডকোয়াটার্সের নির্দেশে মামলাটি অধিগ্রহণ করে তদন্ত শুরু করে পিবিআই। 

নিহত শাহ আলম কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার বালিয়াকান্দি গ্রামের বাসিন্দা। তিনি বর্তমানে পরিবার নিয়ে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের বেপারিপাড়া এলাকায় থাকতেন। তিনি একজনের গাড়ির চালক ছিলেন বলে জানা গেছে। 

শাহ আলমের মেয়ে আয়শা আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেছিলেন, বাবা ২৬ অক্টোবর থেকে তিন দিন ধরে নিখোঁজ ছিলেন। বাঁশখালীতে অজ্ঞাতপরিচয় একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে শুনে এসে দেখি বাবার লাশ। আমার বাবাকে খুন করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি চাই আমরা।

কেএম/এইচকে