সংসদের ফাইল ছবি

ট্রাভেল এজেন্সির মালিকানা হস্তান্তর এবং দেশ-বিদেশে শাখা খোলার সুযোগ দিয়ে আইন পাস হয়েছে জাতীয় সংসদে। সোমবার (২৫ জানুয়ারি) কণ্ঠভোটে সংসদে এ আইন পাস হয়। এখন ট্রাভেল এজেন্সিগুলো সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশে-বিদেশে শাখা অফিস খুলতে পারবে।

গত ৭ সেপ্টেম্বর ‘বাংলাদেশ ট্রাভেল এজেন্সি বিল-২০২০’ সংসদে তোলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী। ২০১৩ সালের এ সংক্রান্ত আইন সংশোধনের জন্য প্রতিমন্ত্রী এ বিল প্রস্তাব করেন। বিলটি পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। বিলের ওপর দেওয়া জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে পাঠানো এবং সংশোধনী প্রস্তাবগুলোর নিষ্পত্তি করেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।

• এ সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তিতে ফৌজদারি কার্যবিধি প্রযোজ্য হবে 
• অনুমোদন ছাড়া কোনো ট্রাভেল এজেন্সি ঠিকানা পাল্টাতে পারবে না

বর্তমানে কোনো অপরাধের জন্য ট্রাভেল এজেন্সিকে জরিমানার সুযোগ নেই। কর্তৃপক্ষ তাদের নিবন্ধন স্থগিত বা বাতিল করে। পাস হওয়া বিলে জরিমানার সুযোগ পাওয়া যাবে।

ট্রাভেল এজেন্সিগুলো যৌক্তিক কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিবন্ধনের আবেদন করতে না পারলে পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে জরিমানা দিয়ে আবেদন করতে পারবে। বর্তমান আইন অনুযায়ী, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিবন্ধনের আবেদন না করলে ট্রাভেল এজেন্সির নিবন্ধন বাতিল হয়ে যেত।

বিলে বলা হয়েছে, কোনো বিধান লঙ্ঘন করলে ছয় মাস জেল, পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেওয়া হবে। এ সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তিতে ফৌজদারি কার্যবিধি প্রযোজ্য হবে। অনুমোদন ছাড়া কোনো ট্রাভেল এজেন্সি ঠিকানা পাল্টাতে পারবে না।

ট্রাভেল এজেন্সি হতে কাঙ্খিত সেবা পাওয়া সহজ হবে। সরকারের রাজস্ব আয়ও বৃদ্ধি পাবে।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী

বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বলেন, আইনটি অনুমোদত হলে নবায়ন আবেদন দাখিলে বিলম্বের ও অপরাধের জন্য লাইসেন্স বাতিলের পরিবর্তে বিধি দ্বারা নির্ধারিত জরিমানা আদায়পূর্বক সনদ নবায়ন, নির্ধারিত শর্ত সাপেক্ষে মালিকানা হস্তান্তর এবং দেশে-বিদেশে শাখা অফিস খোলার সুযোগ সৃষ্টি হবে। ফলে ট্রাভেল এজেন্সি হতে কাঙ্খিত সেবা পাওয়া সহজ হবে। সরকারের রাজস্ব আয়ও বৃদ্ধি পাবে।

বিলটি জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে পাঠানো এবং সংশোধনী প্রস্তাবগুলো তোলার সময় বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও বিএনপির কয়েকজন সংসদ সদস্য বিমানের টিকিট নিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতিতে সরকারের সমালোচনা করেন। জবাবে প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বলেন, সরকার অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে।

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, ট্রাভেল এজেন্সির কাজ হচ্ছে এজেন্টের। সাপ্লায়ার বিমান। বিমানের এজেন্সির জন্য আইন কেন করা হলো? এর প্রয়োজন ছিল না।

ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর স্বার্থ রক্ষার জন্য বিলটি আনা হয়েছে।

বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ

বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর স্বার্থ রক্ষার জন্য বিলটি আনা হয়েছে। এ বিষয়টি আরও যাচাই-বাছাই করা প্রয়োজন। গ্রাহকদের স্বার্থ যাতে রক্ষা করা যায় সেদিকে নজর দিতে হবে। ঢাকা বিমানবন্দরে মশার উৎপাতে বসা যায় না। ব্যাট নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। ফুটুস ফুটুস করে মশা মারে। ভিআইপ লাউঞ্জগুলোতে বসা যায় না। কে বসবে কে বসবে না কোনো ঠিক নেই। এগুলো মন্ত্রণালয়কে ঠিক করতে হবে।

বিএনপির রুমিন ফারহানা বলেন, সনদ বাতিল না করে শুধু অর্থদণ্ড দেওয়ার জন্য বিলটি আনা হয়েছে। ৫৩ থেকে ১০০টি কোম্পানি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এজেন্সিগুলো নিজেরা ক্রেতা সেজে টিকিট বুক করে রাখে। এতে ক্ষতি হয় বিমানের। যে এজেন্সিগুলোর কথা বলা হচ্ছে সেগুলোর নিয়ন্ত্রক মন্ত্রণালয়। অদক্ষ ব্যবস্থপনার জন্য বিমান লসে। আড়াই হাজার কোটি টাকা দেনা পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের কাছে। উড়োজাহাজ কেনা, ইজারা দেওয়া, ফুড ক্যাটারিংয়ে অনিয়ম হয়। এজেন্সি, জিডিএস সিন্ডিকেট বহাল আছে।

বিমানে যারা কাজ করে তারা বাপের সম্পত্তি মনে করে। ট্রাভেল এজেন্টগুলো মানব পাচারে জড়িত। বিদেশে যদি অফিস খোলে তবে মানব পাচার বেড়ে যাবে।

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, বিলটা আনার উদ্দেশ্য সম্পর্কে দ্বিমত নেই। বিমানের ইতিহাস সুখকর নয়। বেশিরভাগ সময় এটি লস করেছে। লাভ করেছে কম সময়ে। বিমানের ম্যানেজমেন্টের দুর্বলতার কারণে লাভ করা মুশকিল। যারা এজেন্ট তারা টিকিট বিক্রির টাকা দেয় না। এজেন্টরা কারসাজি করে। টিকিট পাওয়া যায় না। কিন্তু সিট ফাঁকা থাকে। এর জন্য কী করবেন? বিমানে যারা কাজ করে তারা বাপের সম্পত্তি মনে করে। ট্রাভেল এজেন্টগুলো মানব পাচারে জড়িত। বিদেশে যদি অফিস খোলে তবে মানব পাচার বেড়ে যাবে।

তিনি বলেন, কয়েকশ যুগ্ম এবং অতিরিক্ত সচিব। একশ সচিব। ভিআইপি লাউঞ্জে এমপিদের আলাদা একটা রুম দেবেন। লাউঞ্জে গাদাগাদি করে বসতে হয়।

মন্ত্রণালয় অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। এজেন্সি ও কনজিউমার উভয়ের স্বার্থে বিলটি আনা হয়েছে।

প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী

এসব সমালোচনার জবাবে প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বলেন, মন্ত্রণালয় অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। আমরা অনেক ব্যবস্থা নিয়েছি। জিডিএস সিস্টেম, টিকিট না পাওয়া এগুলো ছিল। আমরা তদন্ত করেছি। কিছু স্টেপ নিয়েছি। যাতে কোনো সমস্যা না হয়। টিকিটিং সিস্টেম যাতে সমস্যা না হয়। ট্রাভেল এজেন্সি, এয়ারলাইন্স অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে করেনাভাইরাসে। অনেক সংকটের মধ্যে চলছে। এখন কেউ বলতে পারবে না টিকিট নেই। আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। 

তিনি বলেন, এজেন্সি ও কনজিউমার উভয়ের স্বার্থে বিলটি আনা হয়েছে। আমরা শাস্তি বাড়িয়েছি। জিডিএসের মাধ্যমে ইন্টারপুলেশন হতো। যারা যুক্ত ছিল সবাইকে শাস্তির আওতায় এনেছি। আমি বলছি না দুর্নীতি নেই। সীমিত  আকারে আছে। যে জড়িত তার বিরুদ্ধে ব্যবস্তা নেওয়া হচ্ছে।

এইউএ/এইচকে