দুদকের অভিযান
বাংলাদেশ বেতারে শিল্পীর আড়ালে কারা?
বাংলাদেশ বেতারে শিল্পী নামধারীর আড়ালে তালিকায় যুক্ত হয়েছে পিয়ন বা কম্পিউটার অপারেটর। প্রতিষ্ঠানটিতে দৈনিক ও মাসিক চুক্তিভিত্তিক শিল্পীদের মধ্যে শতকরা ৩০ ভাগই বেতারের অনুষ্ঠান শাখার বিভিন্ন কর্মকর্তাদের আত্মীয়-স্বজন। তাদের নামে অনুষ্ঠান দেখিয়ে ভুয়া বিল ভাউচারে অর্থ আত্মসাৎ করা হচ্ছে।
অভিযোগের তির বেতারের উপ-মহাপরিচালক (অনুষ্ঠান) সালাহউদ্দিন আহমেদ ও সাবেক উপ-মহাপরিচালক হোসনে আরা তালুকদারসহ একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে।
বিজ্ঞাপন
এমন অভিযোগে মঙ্গলবার (২৬ অক্টোবর) দুদক প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ ফয়সাল, সহকারী পরিচালক সাইফুল ইসলাম ও তানজির হাসিব সরকারের সমন্বয়ে গঠিত একটি এনফোর্সমেন্ট টিম অভিযান চালায়।
বেতারের ঢাকা কেন্দ্রে অভিযানের বিষয়টি দুদকের সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) মোহাম্মদ শফিউল্লাহ ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, বেতারের বিভিন্ন কেন্দ্র ইউনিটের সম্মানী ও পারিতোষিকের খাত থেকে অনিয়মের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে অভিযান চালিয়েছে দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম। অভিযানের সময় দুদক টিম চুক্তিভিত্তিক শিল্পীদের সম্মানী প্রদান সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে। শিল্পী হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের দিয়ে কর্মকর্তারা তাদের ব্যক্তিগত ও অন্যান্য কাজ করিয়ে থাকেন কি-না, বিষয়টি যাচাই করা হয়।
তিনি আরও বলেন, এছাড়াও বিভিন্ন প্রোগ্রামের নামে ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে নথিপত্র সংগ্রহ করে দুদক টিম। এ অভিযানের প্রেক্ষিতে প্রতিবেদন তৈরি করবে টিম। তারপর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, রাজস্ব খাতে বেতারে গত পাঁচ বছরে প্রায় এক হাজার কর্মচারী নিয়োগ করা হয়েছে। পাশাপাশি জনবলের সংকট দেখিয়ে বেতারের কর্মকর্তাদের বিপুল সংখ্যক অশিক্ষিত আত্মীয়-স্বজনদের শিল্পী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। শিল্পী নামধারী এসব শ্রমিকদের করণে প্রকৃত শিল্পীরা পিছিয়ে ও কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন।
সংযুক্ত তালিকায় যাদের শিল্পী বলা হচ্ছে তাদের শতকরা ৮০ জনই মূলত পিয়নের অথবা কম্পিউটার অপারেটরের পদে কাজ করেন। তারা কোনো গান কিংবা বাদ্যযন্ত্র চালনায় পারদর্শী না। তারপরেও শিল্পী পরিচয়ে বছরের পর বছরের বেতন-ভাতা নিচ্ছেন। যেখানে সরকারের প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে।
অভিযোগে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ বেতারের দৈনিক ও মাসিক চুক্তিভিত্তিক শিল্পীদের শতকরা ৩০ ভাগই বেতারের অনুষ্ঠান শাখার বিভিন্ন কর্মকর্তাদের আত্মীয়-স্বজন। শতকরা ৪০ ভাগের কাগজে-কলমে নাম আছে, কিন্তু বাস্তবে তাদের কোনো অস্তিত্ব নেই। তারা কখনোই বেতারে আসেননি এবং বেতার চেনেও না। তাদের নামে অনুষ্ঠান দেখিয়ে ভুয়া বিল ভাউচার তৈরির মাধ্যমে চেক কাটা হয়। পরবর্তীতে তা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়।
অভিযোগে উদাহরণ হিসাবে বলা হয়, বেতারের বার্তা শাখার মূল কাজ হচ্ছে সংবাদ পরিবেশন করা। ২০১৫-১৬ অর্থ বছরের বেতারের বার্তা শাখার সংবাদ প্রচারের জন্য সম্মানী ৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল। বেতারের বিগত ৫ বছরের খবর প্রচার ঘণ্টা একই থাকার পরেও ২০১৯-২০ অর্থ বছরে তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৭ কোটি ২২ লাখ ৭৭ হাজার টাকা।
বৃদ্ধির পরিমাণ প্রায় চার কোটি টাকা বাড়লেও যারা সংবাদ পড়েন তাদের সম্মানী বৃদ্ধি পায়নি। যারা সংবাদ প্রস্তুত করে থাকেন এবং যাদের নিকট থেকে সংবাদ গ্রহণ করা হয় তাদের সম্মানী কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। এভাবে অনিয়মের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করা হচ্ছে।
আরএম/ওএফ