আলোচিত প্রশান্ত কুমার হালদারের (পি কে হালদার) অর্থ আত্মসাৎ ও পাচার কেলেঙ্কারির ঘটনায় ফেঁসে যাচ্ছেন তার আরও ২৩ সহযোগী। ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড এবং আনান কেমিক্যাল লিমিটেডের ওই শীর্ষ কর্তাব্যক্তিরা দুদকের নতুন মামলায় আসামি হতে যাচ্ছেন।

তাদের বিরুদ্ধে অস্তিত্ববিহীন প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিয়ে ৭০ কোটি ৮২ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ আনতে যাচ্ছে দুদক। দুদকের ওই মামলায় পি কে হালদারকে এক নম্বর আসামি করা হচ্ছে। যদিও পি কে হালদার চক্রের বিরুদ্ধে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ রয়েছে।

পি কে হালদারের সহযোগী হিসেবে আনান কেমিক্যাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অমিতাভ অধিকারী, পরিচালক প্রিতিশ কুমার হালদার, উজ্জ্বল কুমার নন্দী, পূর্ণিমা রানী হালদার, রাজীব সোম, রতন কুমার বিশ্বাস ও পরিচালক ওমর শরীফের নাম এসেছে দুদকের অনুসন্ধানে।

দুদকের ঊর্ধ্বতন সূত্র নিশ্চিত করেছে, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদুল হক ছাড়াও প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক আনোয়ারুল কবীর, মো. নুরুল আলম, নাসিম আনোয়ার, মো. নুরুজ্জামান, এম এ হাশেম, মোহম্মদ আবুল হাসেম, জহিরুল আলম, নওশেরুল ইসলাম, বাসুদেব ব্যানার্জি, মিজানুর রহমান, সাবেক ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আবেদ হাসান, ভাইস প্রেসিডেন্ট নাহিদা রুনাই, অ্যাসিসট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট আল মামুন সোহাগ, সিনিয়র ম্যানেজার রাফসান রিয়াদ চৌধুরী এবং কোম্পানি সেক্রেটারি রফিকুল ইসলাম খান নতুন মামলায় আসামি হতে যাচ্ছেন।

তাদের মধ্যে পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের চেয়ারম্যান উজ্জ্বল কুমার নন্দী ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদুল হককে রোববার (২৫ জানুয়ারি) গ্রেপ্তার করে দুদক।

দুদক পরিচালক ও তদারককারী কর্মকর্তা বেনজীর আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে এ ধরনের মামলা করতে যাচ্ছে দুদক। যে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা ওই মামলার সম্ভাব্য আসামি। সোমবার (২৫ জানুয়ারি) মামলাটি দায়ের হতে পারে।

দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, আসামিরা ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ভুয়া ও অস্তিত্ববিহীন প্রতিষ্ঠান আনান কেমিক্যাল লিমিটেডের নামে রেকর্ডপত্র প্রস্তুত করে। যা ওই প্রতিষ্ঠানের মালিককে ঋণ পেতে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করে৷ ঋণ গ্রহীতা আনান কেমিক্যালের পরিচালকরা ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে ৭০ কোটি ৮২ লাখ টাকার ভুয়া ঋণের কাগজপত্র প্রস্তুত করে। ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের কর্মকর্তা ও বোর্ড সংশ্লিষ্ট সদস্যদের প্রত্যক্ষ সহায়তায় ওই টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন লেয়ারিংয়ের মাধ্যমে স্থানান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে পাচার করা হয়।

তাদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯, ৪২০, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭১, ১০৯ ও ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধে আইনের ৫ (২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ২০১২ এর ৪ (২) ও (৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। 

এর আগে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে দায়ের করা ২৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও পাচারের মামলায় তার ব্যক্তিগত আইনজীবী সুকুমার মৃধা ও তার মেয়ে অনিন্দিতা মৃধা, সহযোগী অবন্তিকা বড়াল এবং শংখ ব্যাপারীকে গ্রেপ্তার করে দুদক।  

ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের গ্রাহকদের অভিযোগের মুখে পি কে হালদার বিদেশ পালানোর পর ২০১৯ সালের ৮ জানুয়ারি তার বিরুদ্ধে ২৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও পাচারের অভিযোগে মামলা করেন দুদক উপ-পরিচালক মো. সালাহউদ্দিন।

এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক পি কে হালদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নানা কৌশলে নামে-বেনামে অসংখ্য কোম্পানি খুলে শেয়ারবাজার থেকে বিপুল পরিমাণ শেয়ার কেনেন এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ও পরে নিজের আত্মীয়, বন্ধু ও সাবেক সহকর্মীসহ বিভিন্ন ব্যক্তিকে পর্ষদে বসিয়ে অন্তত চারটি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নেন।

অভিযোগ রয়েছে, পি কে হালদার ওই প্রতিষ্ঠানসহ ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানির (বিআইএফসি) দায়িত্ব পালন করে প্রায় তিন হাজার ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচার করেছেন।

ক্যাসিনোবিরোধী শুদ্ধি অভিযানের পরপরই পি কে হালদারের নাম উঠে আসে আলোচনায়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ২০২০ সালের ১৪ নভেম্বর হাজির হতে নোটিশ দিয়েছিল দুদক। ৩ অক্টোবর পি কে হালদারের বিদেশযাত্রায়ও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি ঠিকই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। পরে দেশে ফেরার কথা বলেও আর আসেননি। এরমধ্যে চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি দুদকের অনুরোধে গ্রেপ্তার পরোয়ানা দিয়ে রেড এলার্ট জারি করে ইন্টারপোল।

পি কে হালদারের প্রতারণায় সহায়তাকারী ২৪ জনের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। আর এখন পর্যন্ত তার সহযোগী হিসেবে ৬২ জনকে শনাক্ত করেছে দুদক।

আরএম/এসআরএস