স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল

কুমিল্লার পূজামণ্ডপে কোরআন রাখা ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। ওই ব্যক্তিকে লুকিয়ে রাখা হয়েছে বলে সন্দেহ করছেন তিনি। 

বৃহস্পতিবার (২১ অক্টোবর) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বলপ্রয়োগে বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের (রোহিঙ্গা) সমন্বয়, ব‍্যবস্থাপনা ও আইনশৃঙ্খলা সম্পর্কিত জাতীয় কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ সন্দেহের কথা জানান।  

কুমিল্লার ঘটনায় যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের কবে জনসম্মুখে আনা হবে বা এ ঘটনার সর্বশেষ আপডেট কী- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কুমিল্লার ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজ দেখে দায়ী ব্যক্তিকে আমরা চিহ্নিত করেছি। কুমিল্লা মাজারের সঙ্গে যে মসজিদ, সেটা প্রসিদ্ধ মসজিদ। লোকটি (যাকে চিহ্নিত করা হয়েছে) রাত তিনটার দিকে কয়েকবার (সেখানে) গিয়েছেন। সেখানে তিনি মসজিদের খাদেমের সঙ্গে কথাবার্তা বলেছেন।  

সিসিটিভি ফুটেজের সংগৃহীত স্থিরচিত্র 

মন্ত্রী বলেন, আমাদের যারা এ কাজে অভিজ্ঞ তারা নিশ্চিত হয়েছেন, ব্যক্তিটি মসজিদ থেকে কোরআন শরিফ এনে রেখেছেন, এটা তারই কর্ম। আমরা যতটুকু দেখেছি, লোকটি কোরআন এনে মূর্তির কোলে রেখে মূর্তির গদাটি কাঁধে করে নিয়ে আসছে।  

‘এই লোকটি কার প্ররোচনায়, কার নির্দেশে, কীভাবে এই কর্মটি করলেন? তিনি তো প্ল্যানমাফিক করেছেন। কাজেই নির্দেশিত হয়ে কিংবা কারো প্ররোচনা ছাড়া এ কাজটি করেছেন বলে আমরা এখনো মনে করি না। তাকে ধরতে পারলে আমরা বাকি তথ্য উদ্ধার করতে পারব বলে বিশ্বাস করি।’

ওই যুবক কোনো মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে না জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, যারা তাকে পাঠিয়েছিল হয়তো বা... আমি এখনও বলতে পারছি না, তারা তাকে লুকিয়ে রাখতে পারে। আমরা তাকে খুঁজে বের করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নিয়েছি।

এ সময় রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যার প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মুহিবুল্লাহকে যারা মার্ডার করেছে, প্রায় সবাইকেই আমরা ধরে ফেলেছি। জিজ্ঞাসাবাদের পরে বিস্তারিত জানাতে পারব। আমাদের সিকিউরিটির কোনো দুর্বলতা নেই। 

কুমিল্লার ঘটনায় ৮ মামলায় আসামি ৬৬১

কুমিল্লার ঘটনায় শনাক্ত ব্যক্তি কে?

কুমিল্লার ঘটনায় সিসিটিভি ক্যামেরায় শনাক্ত ব্যক্তিকে নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। কুমিল্লা পুলিশ সুপার ফারুক আহম্মেদ বলছেন, আমরা এখনো কাউকে শনাক্ত হওয়া ব্যক্তির নাম ও পরিচয় বলিনি। তবে ওই ব্যক্তিকে আমরা খুঁজছি।

তবে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে সিসিটিভি ফুটেজে থাকা ব্যক্তির নাম ইকবাল হোসেন। 

বিভিন্ন গণমাধ্যমে ইকবাল হোসেনের নাম-ঠিকানা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, তিনি কুমিল্লা নগরীর ১৭ নং ওয়ার্ড সুজানগর এলাকার মাছ বিক্রেতা নূর আলমের ছেলে। 

ঢাকা পোস্টের কুমিল্লা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইকবাল নামের ওই ব্যক্তি মাদকাসক্ত। তিনি টাকার জন্য তার মা আমেনা বেগমকে বিভিন্ন সময় মারধর করতেন এবং আসবাবপত্র ভাঙচুর করতেন। 

চট্টগ্রামে ১৬ অক্টোবর গ্রেফতার হন ৮৩ জন

ইকবালের মা আমেনা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার ছেলে মাদকাসক্ত। নেশার টাকা না পেলে পাগলের মতো আচরণ করে। কয়েক বছর আগে তার বন্ধুরা তাকে ছুরিকাঘাতে আহত করে এবং কয়েকবার এলাকাবাসী তাকে চুরির অভিযোগে পিটিয়েছে। ১৫ দিন আগে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়।

পূজামণ্ডপে কোরআন রাখার ঘটনায় আপনার ছেলের নাম বিভিন্ন মাধ্যমে শোনা যাচ্ছে বলে জানালে আমেনা বেগম বলেন, বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিলে ইকবাল বিভিন্ন সময় মাজারে থাকত। আমার ছেলে যদি অপরাধ করে থাকে, তাহলে শাস্তি দাবি করছি। তবে আমার ছেলে তো মাদকাসক্ত, পাগলের মতো। আমার ছেলেকে দিয়ে এই কাজ কেউ করাতে পারে। 

বান্দরবানে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় ১৯ অক্টোবর গ্রেফতার হন ৪ জন

ভাইরাল হওয়া সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে জানা যায়, গত ১৩ অক্টোবর রাত দুইটা ১০ মিনিটে দারোগাবাড়ির মাজার থেকে কোরআন সদৃশ গ্রন্থ হাতে নিয়ে পুকুরের পূর্ব পাড় দিয়ে বের হন এক ব্যক্তি। আরেক ফুটেজে দেখা গেছে, রাত ৩টা ১২ মিনিটে পূজামণ্ডপ থেকে ফিরে আসছেন ওই ব্যক্তি। এ সময় তার কাঁধে হনুমান মূর্তির গদাটি রাখা ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, পবিত্র কোরআন মূর্তির যে স্থানে রাখা হয়েছে, গদাটি না সরালে সেখানে রাখা যেত না, সেজন্য গদা নিয়ে এসেছেন তিনি।

পুলিশের দাবি, সিসিটিভি ফুটেজে শনাক্ত হওয়া ব্যক্তিটি ঘটনার মূল হোতা। তাকে খুঁজে বের করার জন্য বিভিন্ন স্থানে একাধিক টিম কাজ করছে। তিনি বারবার স্থান পরিবর্তন করছেন। তাই তাকে গ্রেফতার করতে সময় লাগছে। এ ঘটনার সঙ্গে আর কেউ জড়িত আছে কি না- তা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বিস্তারিত জানা যাবে।

উল্লেখ্য, ১৩ অক্টোবর রাত আড়াইটা থেকে ভোর সাড়ে ৬টার মধ্যে সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনার জের ধরে নানুয়া দিঘিরপাড় পূজামণ্ডপসহ নগরীর কয়েকটি প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়। পরবর্তীতে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ, প্রতিমা ভাঙচুর, ঘরবাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। এ ইস্যুতে কয়েকজনের প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে।

এসএইচআর/অমিত মজুমদার/এইচকে/জেএস