রাসেলকে নিয়ে দেশ ও জাতি গর্ব করতে পারতো
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রাসেল যদি বেঁচে থাকতো, তাহলে হয়তো একজন মহানুভব, দূরদর্শী ও আদর্শ নেতা আজ আমরা পেতাম, যাকে নিয়ে দেশ ও জাতি গর্ব করতে পারতো।
১৮ অক্টোবর ‘শেখ রাসেলের জন্মদিন’ উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে তিনি এ কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাসেল আজ বেঁচে থাকলে কী করতো-এই ভাবনাটা আমাকে প্রায়ই ভাবায়। আজ এত বছর পরেও শেখ রাসেলকে জাতি শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করছে। কারণ রাসেল তার মহানুভবতা ও ব্যবহারে ছিল অমায়িক।
তিনি বলেন, বিভীষিকাময় সেই রাতের প্রতিটি ক্ষণ, প্রতিটি মুহূর্ত এখনো গভীর শোকের সঙ্গে স্মরণ করি। এখনো ভাবি, কারো বিরুদ্ধে শত্রুতা থাকতেই পারে, কিন্তু সেই ক্ষোভ একজন কোমলমতি শিশুকে কেন কেড়ে নেবে? এই শিশু কী দোষ করেছিল? সে তো কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল না।
শেখ হাসিনা বলেন, সে কেন এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের অংশ হবে? এতসব স্মৃতি স্মরণ করতে কষ্ট হয়। বুকে পাথর বেঁধে সেইসব স্মৃতির সাগরে ডুব দেই। কারণ সেদিন ঘাতকের বুলেট যে কোমলমতি শিশুটির প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল, সে ছিল নির্দোষ-নিষ্পাপ।
তিনি বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ছোট ছেলে শেখ রাসেলের ৫৮তম জন্মদিন উপলক্ষে আমি তাকে গভীর ভালোবাসা ও পরম মমতায় স্মরণ করি এবং তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিশু রাসেলের জীবন সম্পর্কে শিশু-কিশোরদের কাছে তুলে ধরতে প্রতি বছর তার জন্মদিনকে ‘শেখ রাসেল দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রথমবারের মতো পালিত ‘শেখ রাসেল দিবস ২০২১’ এর প্রতিপাদ্য ‘শেখ রাসেল দীপ্ত জয়োল্লাস, অদম্য আত্মবিশ্বাস’ যথার্থ হয়েছে বলে আমি মনে করি।
তিনি বলেন, শেখ রাসেল ১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবর ঢাকার ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের বাসায় জন্মগ্রহণ করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের অত্যন্ত প্রিয় লেখক ছিলেন খ্যাতনামা দার্শনিক ও নোবেলজয়ী লেখক বার্ট্রান্ড রাসেল। জাতির পিতা বার্ট্রান্ড রাসেলের বই পড়ে বঙ্গমাতাকে ব্যাখ্যা করে শোনাতেন। তাই বঙ্গবন্ধু আর বঙ্গমাতা দু’জনে মিলে শখ করে তাদের আদরের ছোট ছেলের নাম রেখেছিলেন ‘রাসেল’।
সরকার প্রধান বলেন, রাসেল নামটি শুনলেই প্রথমে যে ছবিটি সামনে আসে তা হলো- হাস্যোজ্জ্বল, প্রাণচঞ্চল এক ছোট্ট শিশুর দুরন্ত শৈশব; যে শিশুর চোখগুলো হাসি-আনন্দে ভরপুর। মাথা ভর্তি অগোছালো চুলের সুন্দর একটি মুখাবয়ব, যে মুখাবয়ব ভালোবাসা ও মায়ায় মাখা।
তিনি বলেন, এই কোমলমতি শিশু রাসেলকে আমরা হারিয়েছি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ইতিহাসের এক নির্মম, জঘন্য ও বিভীষিকাময় রাতে। স্বাধীনতা বিরোধী, ষড়যন্ত্রকারী ও বিশ্বাসঘাতকদের হাতে স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারের ১৮ জন সদস্য শহীদ হন ওই কালরাতে।
শেখ হাসিনা বলেন, সেদিন ছোট্ট শিশু রাসেলও খুনিদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। রাসেল তো বাঁচতে চেয়েছিল। বাঁচার জন্য ঘাতকদের কাছে আকুতি জানিয়েছিল, মায়ের কাছে যাওয়ার কথা বলেছিল। মায়ের কাছে নিয়ে যাওয়ার মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে ঘাতকরা তাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে।
তিনি বলেন, শেখ রাসেল আজ আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু আছে তার পবিত্র স্মৃতি। বাংলাদেশের সব শিশুর মধ্যে আজও আমি রাসেলকে খুঁজে ফিরি। এই শিশুদের রাসেলের চেতনায় গড়ে তুলতে হবে। এমন এক উজ্জ্বল শিশুর সত্তা বুকে ধারণ করে বাংলাদেশের শিশুরা বড় হোক। খুনিদের বিরুদ্ধে তারা তীব্র ঘৃণা বর্ষণ করুক। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়তে তারা এগিয়ে আসুক- আজ এ প্রত্যাশাই করি।
প্রধানমন্ত্রী ‘শেখ রাসেল দিবস ২০২১’ উপলক্ষে গৃহীত সব কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।
এইউএ/এসএম