কপ-২৬ লক্ষ্য অর্জনে ইইউকে পাশে চায় বাংলাদেশ
চলতি মাসের শেষ দিন গ্লাসগোতে জলবায়ু পরিবর্তন শীর্ষ সম্মেলন কপ-২৬ শুরু হতে যাচ্ছে। আসন্ন এ সম্মেলনে জলবায়ু ইস্যুতে নিজেদের লক্ষ্য অর্জনে বেশ কিছু বিষয় তুলে ধরবে বাংলাদেশ। সেগুলো যেন সফল হয় সেজন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সহযোগিতা চেয়েছে বাংলাদেশ।
রোববার (১৭ অক্টোবর) আসন্ন কপ-২৬ সম্মেলন নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউর বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন।
বিজ্ঞাপন
ড. মোমেন বলেন, কপ-২৬-এ আমাদের লক্ষ্যগুলো যেন আমরা অর্জন করতে পারি সেজন্য ইইউর সহযোগিতা চেয়েছি। আমাদের ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বৈঠকের মূল কারণ, আমরা চাই তাদের সহযোগিতা; তাদের পার্টনারশিপ। যাতে আমাদের যে ইস্যুগুলো কপ-২৬ এ তুলে ধরব তারা যেন আমাদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে আমাদের পক্ষে কথা বলে। কপ-২৬ একমাত্র আমাদের আশা। ওটাতে যদি আমরা ইফেক্টিভ পদক্ষেপ নিই তাহলে আমাদের সব সমস্যা দূর হবে।
পরিবেশ ও বনমন্ত্রী জানান, মূল বিষয় হচ্ছে কপ-২৬ চলতি মাসের ৩১ তারিখ। আমরা সেখানে যোগদান করছি। আমরা প্রস্তুতি ও উদ্দেশ্য, বিশেষ করে কী কী বিষয় নিয়ে আমরা আলোচনা করব; কী কী সিদ্ধান্ত নেব সেসব বিষয়ে আলোচনা করেছি।’
বৈঠকে ইইউর নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত, ডেনমার্ক, ইতালি, স্পেন ও সুইডেন রাষ্ট্রদূত উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং বন পরিবেশ ও জলবায়ু সচিব উপস্থিত ছিলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা তাদের কাছে তুলে ধরেছি, বাংলাদেশ ক্লাইমেট ভালনারেবল দেশ। আমাদের কার্বন নিঃসরণ কম হওয়ার পরও ক্লাইমেটের কারণে নদী ভাঙন, বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে বহু লোক তাদের বাড়িঘর হারাচ্ছে। এসব সমস্যা সমাধানে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা ইইউকে বলেছি, এ সমস্যা আমাদের নয়। আমরা ইমিটিশন করি না, তোমাদের কারণে এ লোকগুলো বাড়ি হারা হচ্ছে। এ বিষয়ে তোমরা জোর দাও। আমরা আমাদের তথ্য উপাত্ত দিয়েছি, বলেছি কপ-২৬ এ তোমাদের এনডিসিগুলো এমনভাবে তৈরি করবে যেন গ্লোবাল ওয়ার্মিং ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি না হয়।’
প্যারিস এগ্রিমেন্ট অনুযায়ী জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে গত বছর থেকে বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার কথা থাকলেও এখনো কোনো তহবিল পায়নি বাংলাদেশ। এবারের কপ-২৬ সম্মেলনে এ বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য ইইউর সহযোগিতা চেয়েছেন জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের বলেছি, প্যারিস এগ্রিমেন্ট ২০২০ সালের পর থেকে প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলার করে আমাদের ক্লাইমেট ভালনারেবল ফান্ডে দেওয়ার কথা। কিন্তু সেটা দেওয়া হয়নি। আমরা এ অর্থের মাধ্যমে শতকারা ৫০ ভাগ এডাপটেশান এবং বাকি ৫০ ভাগ মিটিগেশানে ব্যবহার করতে চাই। তোমরা দাওনি, এবারে এটা নিয়ে আসো। সেখানে তোমাদের সাহায্য চাই। আমরা বলেছি, মস অ্যান্ড ডেমেজ ইস্যুটা কপ-২৬ এ তুলব, সেখানে তাদের সাহায্য চেয়েছি।’
ড. মোমেন বলেন, ‘আগামীতে আমরা নবায়নযোগ্য জ্বালানি বাড়াতে চাই, সেখানে তাদের পাশে চেয়েছি। আমাদের কিছু প্রজেক্ট আছে, সেখানেও তাদের সাহায্য চেয়েছি। ভালো সংবাদ হচ্ছে, তারা টেকনিক্যাল সাহায্য করতে চায়। তারা বলেছে, পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমেও কাজ করা যেতে পারে। সবাই এক বাক্যে একমত, সবার সহযোগিতায় জলবায়ু ইস্যুটা সমাধান করা যাবে। ইইউর রাষ্ট্রদূতরা বলেছেন, কার্বন মিটিগেশান ২০৩০ সালের মধ্যে শতকরা ৫০ ভাগ এবং ৫০ সালের মধ্যে জিরো ইমিশনে নিয়ে আসবে।’
এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, সিভিএফ প্রধান হিসেবে সিভিএফ ও কপ-২৬ এর মধ্যে একটা হাই লেভেল সামিটের প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি, তবে আলোচনার টেবিলে রয়েছে।
পরিবেশ ও বনমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ক্লাইমেট প্রেসিডেন্ট প্রসপারিটি ডিকেড ২০২০-৩০ প্রকল্পে আমরা কী কী করতে চাই সেটা তাদের জানিয়েছি। আমাদের দেশীয় সমস্যা জলবায়ু ইস্যুতে অর্থনৈতিক সহযোগিতার কথা বলেছি। নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিয়ে কথা বলেছি। তারা মিথাইল গ্যাসের ব্যাপারে একটা আলোচনা করেছে। সে ব্যাপারে আমাদের করণীয় আমরা তাদের বুঝিয়ে বলেছি।
এনআই/এসএম/জেএস