আনন্দের দিন, বঞ্চিতদের মাথা গোঁজার ঠাঁই দিতে পেরেছি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আজ আনন্দের দিন। বাংলাদেশের সবচেয়ে বঞ্চিত গৃহহীন-ভূমিহীন মানুষদের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিতে পেরেছি।
শনিবার (২৩ জানুয়ারি) প্রধানমন্ত্রীর গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গৃহহীন পরিবারকে ঘর হস্তান্তর অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মানুষের কথাই ভাবতেন। আমাদের পরিবারের লোকদের চেয়ে তিনি গরীব অসহায় মানুষদের নিয়ে বেশি ভাবতেন এবং কাজ করেছেন। এই গৃহ প্রদান কার্যক্রম তারই শুরু করা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের লক্ষ্য ছিল সব থেকে আগে যেটা আমাদের কাছে অগ্রাধিকার। সেটা হচ্ছে এদেশের খেটে খাওয়া মানুষ, গরিব মানুষ, গ্রামের একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চলে পরে থাকা মানুষ তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করা এবং বাংলাদেশকে দারিদ্র মুক্ত করা। আশ্রয়ণ প্রকল্প নিলাম। প্রত্যেকরে একটা ঘরের মালিক করে দেওয়া। একেবারে নিঃস্ব যারা ভূমিহীন যারা তাদের আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ঘর দেওয়ার প্রকল্প করে দিলাম।
বস্তিবাসীদের ঘরে ফেরা কর্মসূচি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বস্তিবাসীরা নিজ গ্রামে ফিরে গেলে ছয় মাস বিনা পয়সায় খাবার পাবে, বাচ্চাদের স্কুলে দিতে পারবে। বিনা পয়সায় একটা ঘর করে দেব আর সেই সাথে টাকা দেব তারা যেন কাজ কর্ম করে ব্যবসা বাণিজ্য করে চলতে পারে। সেই ব্যবস্থা নিয়ে ঘরে ফেরা কর্মসূচি বাস্তবায়ন শুরু করলাম। আমরা গৃহায়ন তহবিল করলাম। এই গৃহায়ন তহবিল থেকে এনজিওদের হাতে টাকা দিলাম যে তারা যেন আমাদের গৃহহীন মানুষদের ঘর করে দেয়। এনজিওরা ২৮ হাজার পরিবারকে এই ঘর করে দিয়েছিল। প্রায় ২০ হাজারের মতো বস্তিবাসী নিজ গ্রামে ফিরে গিয়েছিল এবং ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকের মধ্যে ১১ হাজার ভবন তৈরি করলাম ৪ হাজার চালু করে দিলাম।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এদেশের কোনও শ্রেণির মানুষ বাদ যাচ্ছে না। বেদে শ্রেণির মানুষের জন্য ঘর করে দিচ্ছি, তাদের বাসস্থনের ব্যবস্থা করেছি। হিজরাদের স্বীকৃতি দিয়েছি, তাদেরকেও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যারা দলিত শ্রেণি বা হরিজন শ্রেণি তাদের জন্য ভালো উচ্চ মানের ফ্ল্যাট তৈরি করে দিচ্ছি। এভাবে প্রত্যেক শ্রেণির মানুষ চা শ্রমিকদের জন্য করে দিচ্ছি। প্রত্যেক শ্রেণির মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি যেন সবাই সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে। মুজিববর্ষে আমাদের লক্ষ্য একটি মানুষও ঠিকানা বিহীন থাকবে না।
দেশের ৪৯২টি উপজেলার প্রায় ৭০ হাজার পরিবারকে পাকা ঘরসহ বাড়ি হস্তান্তর করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ সময় লাইভে যুক্ত ছিল খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা, চাপাইনবাবগঞ্জ সদর, নীলফামারীর সৈয়দপুর ও হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলা। এছাড়াও দেশের সব উপজেলা অনলাইনে যুক্ত হয়।
আশ্রায়ণ-২ প্রকল্প প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় একক গৃহ নির্মাণের সামগ্রিক কার্যক্রম সমন্বয় করেছে। মুজিববর্ষে ২১ জেলার ৩৬ উপজেলায় ৪৪টি প্রকল্প গ্রামে ৭৪৩টি ব্যারাক নির্মাণের মাধ্যমে তিন হাজার ৭১৫টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। একই সঙ্গে ৬৯ হাজার ৯০৪ জন ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে জমি ও ঘর দেওয়ার ঘটনা বিশ্বে এটাই প্রথম।
তিন প্রকল্পে এক হাজার ১৭৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা ব্যয়ে ৬৬ হাজার ১৮৯টি পরিবারকে জমিসহ ঘর নির্মাণ করে দিয়েছে সরকার। যার মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রায়ণ-২ প্রকল্পে ৪১৯ কোটি ৬০ লাখ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দুর্যোগ সহনীয় গৃহ নির্মাণ কর্মসূচির ৬৫৯ কোটি ৮২ লাখ ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের গুচ্ছগ্রাম দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্পের ৫২ কোটি ৪১ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। এছাড়াও অতিরিক্ত পরিবহন বাবদ ২৬ কোটি ৪৮ লাখ ও জ্বালানি বাবদ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১০ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
এসব পরিবারের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রায়ণ-২ প্রকল্পের মাধ্যমে দুই শতাংশ খাস জমি বন্দোবস্ত দিয়ে এক লাখ ৭১ হাজার টাকা ব্যয়ে ২৪ হাজার ৫৩৮টি পরিবারকে একক গৃহ নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দুর্যোগ সহনীয় গৃহ নির্মাণ কর্মসূচির মাধ্যমে দুই শতাংশ খাস জমি বন্দোবস্ত দিয়ে এক লাখ ৭১ হাজার টাকা ব্যয়ে ৩৮ হাজার ৫৮৬টি পরিবারকে একক গৃহ নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের গুচ্ছগ্রাম দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্পের মাধ্যমে দুই শতাংশ খাস জমি বন্দোবস্ত দিয়ে দুই লাখ ৭১ হাজার টাকা ব্যয়ে তিন হাজার ৬৫টি পরিবারকে একক গৃহ নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা বিভাগের ১৩ জেলার ৮৮ উপজেলায় ভূমিহীন পরিবারের সংখ্যা ২৯ হাজার ৫৭৪। জমি আছে, ঘর নেই এমন পরিবারের সংখ্যা ৮৯ হাজার ৬২৩টি। মোট এক লাখ ২৯ হাজার ১৯৭টি।
ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলার ৩৫ উপজেলায় ভূমিহীন পরিবারের সংখ্যা ১০ হাজার ৬৬৫। জমি আছে, ঘর নেই এমন পরিবারের সংখ্যা ২৫ হাজার ৩৩৮টি। মোট ৩৬ হাজার ৩টি।
চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জেলার ১০৩ উপজেলায় ভূমিহীন পরিবারের সংখ্যা ৬১ হাজার ৫৩০টি। জমি আছে, ঘর নেই এমন পরিবারের সংখ্যা ৯৯ হাজার ৭৬৭টি। মোট এক লাখ ৬১ হাজার ২৯৭টি।
রংপুর বিভাগের আট জেলার ৫৮ উপজেলায় ভূমিহীন পরিবারের সংখ্যা ৫৬ হাজার ৯৯৮টি। জমি আছে, ঘর নেই এমন পরিবারের সংখ্যা এক লাখ ২৬ হাজার ৮৩৬টি। মোট এক লাখ ৮৩ হাজার ৮৩৪টি।
রাজশাহী বিভাগের আট জেলার ৬৭ উপজেলায় ভূমিহীন পরিবারের সংখ্যা ৩৭ হাজার ৫৭০টি। জমি আছে, ঘর নেই এমন পরিবারের সংখ্যা ৫৮ হাজার ৯৩৪টি। মোট ৯৬ হাজার ৫০৪টি।
খুলনা বিভাগের ১০ জেলার ৫৯ উপজেলায় ভূমিহীন পরিবারের সংখ্যা ৩১ হাজার ৯৬৬টি। জমি আছে, ঘর নেই এমন পরিবারের সংখ্যা এক লাখ ১০ হাজার ৪৪৫টি। মোট এক লাখ ৪২ হাজার ৪৪১টি।
বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার ৪২ উপজেলায় ভূমিহীন পরিবারের সংখ্যা ২৭ হাজার ৩২৮টি। জমি আছে, ঘর নেই এমন পরিবারের সংখ্যা ৫৩ হাজার ২৫৬টি। মোট ৮০ হাজার ৫৮৪টি।
সিলেট বিভাগের চার জেলার ৪০ উপজেলায় ভূমিহীন পরিবারের সংখ্যা ২৭ হাজার ৭৩০টি। জমি আছে ঘর নেই এমন পরিবারের সংখ্যা ২৮ হাজার ৬২টি। মোট ৫৫ হাজার ৭৯২টি।
সারাদেশের ৬৪ জেলার ৪৯২ উপজেলায় ভূমিহীন পরিবারের সংখ্যা দুই লাখ ৯৩ হাজার ৩৬১টি। জমি আছে, ঘর নেই এমন পরিবারের সংখ্যা পাঁচ লাখ ৯২ হাজার ২৬১টি। সর্বমোট আট লাখ ৮৫ হাজার ৬২২টি।
পর্যায়ক্রমে সব ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে ঘর দেওয়া হবে।
এইউএ/ওএফ