জাতিসংঘকে স্বাগত জানিয়ে ভাসানচরে আনন্দ মিছিল
ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা দেবে জাতিসংঘ। এজন্য জাতিসংঘের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের গতকাল শনিবার একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে। এ ঘটনায় আনন্দ মিছিল করেছেন ভাসানচরের রোহিঙ্গারা।
আজ রোববার (১০ অক্টোবর) দুপুর আড়াইটা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত এ আনন্দ মিছিল করেন তারা। মিছিলটি সিআইসি অফিস (শেল্টার-০৯) থেকে হাসপাতাল রোড হয়ে ১ নং রোহিঙ্গা বাজারের সামনে গিয়ে শেষ হয়। ক্যাম্প হেড ফোকালদের নেতৃত্বে রোহিঙ্গারা এ আনন্দ মিছিলের আয়োজন করেন।
বিজ্ঞাপন
জাতিসংঘ ও শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরকে ভাসানচরে স্বাগত জানিয়ে মিছিলে শ্লোগান দেন রোহিঙ্গারা। ‘ওয়েলকাম ইউএন, ওয়েলকাম ইউএনএইচসিআর, থ্যাংক ইউ ইউএন, উই আর হ্যাপি’ শ্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার নিয়ে মিছিলে হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা অংশগ্রহণ করেন।
কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার পর থেকে মানবিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে জাতিসংঘ। এবার ভাসানচরে স্থানান্তরিত রোহিঙ্গাদেরও মানবিক সহায়তা দিতে সংস্থাটি শনিবার (৯ অক্টোবর) বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সমঝোতা স্মারকটি (এমওইউ) সই করে। বাংলাদেশের পক্ষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মহসীন এবং জাতিসংঘের পক্ষে ইউএনএইচসিআরের কান্ট্রি ডিরেক্টর চুক্তি স্বাক্ষর করেন।
ইউএনএইচসিআর বলছে, এর ফলে ভাসানচরে অবস্থানরত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য সেবা ও সহায়তা কার্যক্রমে সরকার ও জাতিসংঘের ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা সম্ভব হবে। সুরক্ষা, শিক্ষা, দক্ষতা, প্রশিক্ষণ, জীবিকা ও স্বাস্থ্যসেবায় সহায়তার মাধ্যমে শরণার্থীরা দ্বীপে মানসম্মত জীবনযাপন করতে পারবেন। এছাড়া তারা ভবিষ্যতে মিয়ানমারে টেকসই প্রত্যাবাসনের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করতে পারবে।
শুরুতে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো থেকে শরণার্থীদের ভাসানচরে স্থানান্তর নিয়ে জাতিসংঘের আপত্তি ছিল। তবে গত ১৭ মার্চ তিন দিনের সফরে ভাসানচরে স্থানান্তরিত রোহিঙ্গাদের দেখতে যান জাতিসংঘের ১৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। ভাসানচর ঘুরে আসা জাতিসংঘের কর্মকর্তারা প্রায় মাসখানেক পর ভাসানচর নিয়ে ইতিবাচক অবস্থানের কথা জানান।
চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে ভাসানচরে স্থানান্তরিত রোহিঙ্গাদের প্রথম দেখতে যায় ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) একটি প্রতিনিধি দল। সর্বশেষ চলতি মাসের শুরুর দিকে ভাসানচরের রোহিঙ্গাদের দেখতে যান ঢাকায় নিযুক্ত ১০ বিদেশি রাষ্ট্রদূত। সফর শেষে দাতা গোষ্ঠীদের এসব কূটনীতিকরাও ভাসানচর নিয়ে ইতিবাচক অবস্থানের কথা জানান।
কক্সবাজারের ক্যাম্প থেকে এক লাখ রোহিঙ্গাকে অধিকতর নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে ২ হাজার ৩১২ কোটি টাকা ব্যয় করে ভাসানচর প্রস্তুত করে বাংলাদেশ সরকার। বছর দুয়েক আগেও ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর করা সম্ভব ছিল না আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিষেধাজ্ঞার কারণে। তবে গতবছরের ডিসেম্বর থেকে জাতিসংঘের অনিচ্ছা সত্ত্বেও এক হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গাকে নিয়ে ভাসানচরে স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরু করে সরকার। এ পর্যন্ত ছয় দফায় ১৮ হাজার ৫২১ জন রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নেওয়া হয়েছে।
এইচকে