আরজে নিরবের পরামর্শেই গ্রাহকদের ২৫০ কোটি টাকা আটকে রেখেছে কিউকম
দেশে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতারণার চিত্র একে একে সবার সামনে উঠে আসছে। প্রতারণার দায়ে গত কয়েক মাসে ই-অরেঞ্জ, সিরাজগঞ্জ শপ ডটকম, নিরাপদ ডটকম, ইভ্যালির মতো নামিদামি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে। এসব মামলায় গ্রেফতার রয়েছেন প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকরাও।
সবশেষ কিউকম নামে একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের প্রতারণা নিয়ে দেশব্যাপী আলোচনা শুরু হয়। ডিজিটাল প্লাটফর্ম ব্যবহার করে গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণার দায়ে প্রতিষ্ঠানটির সিইও মো. রিপন মিয়া এখন জেলে রয়েছেন। রিপন মিয়ার পর শুক্রবার ভোরে প্রতিষ্ঠানটির হেড অব সেলস (কমিউনিকেশন অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন) ও সবার পরিচিত মুখ হুমায়ুন কবির নিরব ওরফে আরজে (রেডিও জকি) নিরবকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপির তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে এক ভুক্তভোগীর করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
বিজ্ঞাপন
তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় হওয়া মামলার সূত্রে জানা গেছে, প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে আরজে নিরবের বিরুদ্ধে মামলাটি হয়েছে। তিনি কিউকমের প্রতারণার মূলহোতা। তার পরামর্শে কিউকমের সিইও মো. রিপন মিয়া প্রতারণা করে গ্রাহকদের ২৫০ কোটি টাকা আটকে রেখেছেন। গ্রাহকদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য আরজে নিরব তারকা হিসেবে নিজের নাম ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিউকমের বিভিন্ন অফার ও স্কিমের বিষয়ে প্রচারণা চালিয়েছেন। তার এই প্রচারণায় গ্রাহকরা লাখ লাখ টাকার পণ্যের অর্ডার দিয়েছেন এই ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানটিতে। এখন প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকদের টাকা তো দিচ্ছেই না উল্টো তাদের টাকা আটকে রেখেছে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, আরজে নিরব পরিচিত মুখ হওয়া ফেসবুকে তার বিশাল ফ্যান-ফলোয়ার রয়েছে। মূলত ফ্যান-ফলোয়ারদের টার্গেট করে কিউকমের প্রচারণা করে আসছিলেন তিনি। তার মূল কাজই ছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে মানুষকে কিউকমের প্রতি আকৃষ্ট করা। তার এই প্রচারণায় মানুষ সাড়াও দিয়েছিল। তার কথায় বিশ্বাস করে লাখ লাখ টাকার পণ্য অর্ডার দিয়েছিল গ্রাহকরা। কিন্তু সেই গ্রাহকরা নিরবের কথা বিশ্বাস করে এখন ঠকেছেন। তাদের প্রায় ২৫০ কোটি টাকা কিউকমের আছে আটকে আছে।
নিজের ফেসবুক ব্যবহার করে নিরব যে কিউকমের প্রচারণা চালিয়েছেন সে প্রমাণও রয়েছে। সর্বশেষ গত ২৪ আগস্ট ও ২২ সেপ্টেম্বর ব্যক্তিগত ফেসবুক পেইজে পোস্ট দিয়ে কিউকমের প্রচারণা চালিয়েছেন তিনি।
গত ২৪ আগস্টের পোস্টে নিরব বলেন ‘পুরো দেশ আর সারা দুনিয়া জুড়ে কিউকম ছড়াতে চাই, ইনশাআল্লাহ’। এছাড়াও পোস্টে দেশের ৮ বিভাগে নিজস্ব ডেলিভারি পয়েন্ট, ওয়ারহাউজ, কাস্টমার কেয়ার চালু করবে কিউকম’ বলেও জানান তিনি।
২২ সেপ্টেম্বর গ্রাহকদের সঙ্গে কিউকমের প্রতারণার বিষয়টি সামনে আসলে নিরব তার পোস্টে লিখেন ‘মনে হয় এই শিল্পটা বন্ধ না করে কেউ থামবে না’। এছাড়া মালিকের পাশে থেকে গ্রাহকদের টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি। তবে পোস্টে কারো নাম উল্লেখ না করে তিনি লেখেন, অনেকে তার পিছনে লেগেছ। তিনি চাকরি না ছাড়া পর্যন্ত সেটা চলতে থাকবে বলেও জানান।
নিরবের গ্রেফতারের বিষয়ে তেজগাঁও বিভাগের এডিসি হাফিজ আল ফারুক বলেন, আরজে নিরব কিউকমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তার বিরুদ্ধে গতকাল রাতে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় এক ভুক্তভোগী মামলা করেছেন। সেই মামলায় তাকে আজ ভোরে রাজধানীর আদাবর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, কিউকমের প্রতারণার বিষয়ে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আজ তাকে আদালতে পাঠিয়ে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। পরে বিজ্ঞ আদালত তার এক দিনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেন। রিমান্ড শেষে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য বলা যাবে।
গত ৪ অক্টোবর ডিএমপির পল্টন থানায় কিউকমের সিইও মো. রিপন মিয়ার বিরুদ্ধে ডিএমপির পল্টন থানায় ভুক্তভোগী এক গ্রাহক একটি মামলা করেন। দুই ধারায় মামলাটি হয়। একটি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও অপরটি প্রতারণা। এ মামলায় মো. রিপন মিয়াকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের মতিঝিল বিভাগ। পরে তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বৃহস্পতিবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
তাকে গ্রেফতারের পর ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবি প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, গ্রাহকদের পণ্য ডেলিভারির ২৫০ কোটি টাকা আটকে রেখেছে কিউকম। যদিও এস্ক্রো সিস্টেমের (Escrow System) মাধ্যমে গেটওয়ে পেমেন্ট হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগ করা তৃতীয় পক্ষ প্রতিষ্ঠান ফস্টারের কাছে কিউকমের গ্রাহকদের ৩৯৭ কোটি টাকা আটকে আছে।
এমএসি/এমএইচএস