ঘন কুয়াশায় বন্ধ প্লেন চলাচল, ফাইল ছবি

দেশে আবারও বাড়তে শুরু করেছে শীতের তীব্রতা। ভোর থেকেই রাজধানী ঢাকার আকাশে ঘন কুয়াশা। যার কারণে শুক্রবার (২২ জানুয়ারি) প্রায় ৫ ঘণ্টা বন্ধ ছিল হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফ্লাইট উঠানামা। চলতি শীত মৌসুমে দ্বিতীয়বারের মতো ঘটল এমন ঘটনা।

ভোর ৫টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত ঘন কুয়াশার কারণে বিমানবন্দরের ২ হাজার ফিট ওপর থেকেও দেখা যায়নি রানওয়ে। ফলে ঢাকার আকাশে চক্কর কাটতে হয়েছে বেশ কয়েকটি প্লেনকে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পরই সেগুলো অবতরণ করেছে।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সূত্র জানায়, শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইন্সের (ইউএল-১৮৯) কলম্বো থেকে ঢাকাগামী একটি ফ্লাইট বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে ঢাকায় অবতরণের কথা ছিল। তবে অবতরণের আধঘণ্টা আগে বিমানটির পাইলট ঢাকা এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলকে (এটিসি) জানান, ‘কুয়াশার জন্য রানওয়ে দেখা যাচ্ছে না।’ ঢাকার এটিসি তাকে আকাশে থাকার পরামর্শ দেন। অবতরণ না করে প্রায় ২ ঘণ্টা ঢাকার আকাশে চক্কর খায় প্লেনটি। এরপর ১০টা ২৮ মিনিটে কুয়াশা কিছুটা কমে যাওয়ার পর ফ্লাইটটি নিরাপদে অবতরণ করে।

ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের বিএস-৩১৮ ফ্লাইটটি কুয়ালালামপুর থেকে ভোর ৫টায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করার কথা ছিল। কুয়াশার পূর্বাভাস পেয়ে চট্টগ্রামে অবতরণের সিদ্ধান্ত নেয় প্লেনটি। কিন্তু সেখানেও একই সমস্যার জন্য ভোর সাড়ে ৬টা থেকে চট্টগ্রামের আকাশে ঘুরপাক খেয়ে সাড়ে ৭টা ২৩ এর দিকে অবতরণ করে ফ্লাইটটি।

ক্ষতিগ্রস্ত কমপক্ষে ২৫ ফ্লাইট, সর্বোচ্চ বিলম্ব ৩ ঘণ্টা

ঢাকা বিমানবন্দর জানায়, কুয়াশার কারণে চট্টগ্রামসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন এয়ারপোর্ট থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে আসা প্রতিটি বিমান দেড়-ঘণ্টা থেকে ৩ ঘণ্টা পর্যন্ত দেরি করেছে। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটের কমপক্ষে ২৫টি ফ্লাইট উঠানামায় সমস্যার সম্মুখীন হয়। আন্তর্জাতিক অনেক ফ্লাইট ঢাকার কুয়াশার তথ্য পেয়ে নিজ দেশ থেকে দেরিতে বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা হয়েছে।

বিমানবন্দরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কুয়াশাজনিত সমস্যার কারণে জাজিয়ার এয়ারওয়েজের কুয়েতের ফ্লাইট সাড়ে ৩ ঘণ্টা, বিমান বাংলাদেশের ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের ফ্লাইট ১ ঘণ্টা, কক্সবাজারের ফ্লাইট দুই ঘণ্টা, সিলেটের ফ্লাইট ১ ঘণ্টা, নভোএয়ারের সিলেট ফ্লাইট ২ ঘণ্টা দেরিতে ছাড়ে।

এছাড়াও বাংলাদেশে দেরিতে পৌঁছানোর কারণে দেশে ফিরতেও দেরি করেছে শ্রীলংকান এয়ারলাইন্সের। সোয়া ১০টার ফ্লাইটটি ঢাকা থেকে কলম্বের উদ্দেশ্যে ছেড়েছে ১২টায়। এমিরেটস এয়ারওয়েজের দুবাই, কাতারের দোহাগামী ফ্লাইটসহ দুপুর পর্যন্ত প্রায় প্রতিটি ফ্লাইটই নির্ধারিত সময়ের ঘণ্টাখানেক পর ঢাকা ছেড়েছে।

অতিরিক্ত ফ্লাইটের চাপ, রানওয়েতে জ্যাম

নাম না প্রকাশ করার শর্তে বিমানবন্দরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, কুয়াশা কিছুটা কমার পর সকাল ১০টার কিছু সময় আগে রানওয়ে সচল হয়। তখন একসঙ্গে বেশ কয়েকটি ফ্লাইট ঢাকায় অবতরণের চেষ্টা করে, আবার অনেক ফ্লাইট ঢাকা ছাড়ার প্রস্তুতিও নিচ্ছিল। ফলে রানওয়েতে ট্রাফিক জ্যামের সৃষ্টি হয়। প্রস্তুতি থাকা স্বত্তেও প্রতিটি ফ্লাইট উঠার জন্য ১৫ থেকে ৩০ মিনিট রানওয়েতে অপেক্ষা করতে হয়েছে।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক ক্যাপ্টেন তৌহিদ উল আহসান বলেন, ঘন কুয়াশার কারণে বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ ছিল। সকাল ১০টার দিকে কুয়াশা কিছুটা কমায় ফ্লাইট চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। ফ্লাইট জমে থাকায় অনেক সময় ট্রাফিক দেখা যায়। তবে দুপুর থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে গেছে।

শুক্রবার মধ্যরাত থেকে আবারো কুয়াশার সম্ভাবনা

২০২০ সালের ৮ ডিসেম্বর সর্বশেষ ঢাকার আকাশে ঘন কুয়াশার কারণে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ ছিল। এই মৌসুমে দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটলো আজকে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, শীত মৌসুমে সাধারণত কুয়াশার ঘনত্ব ৬০ থেকে ৮০ তে থাকে। আজ তা ৫০ এর নিচে নেমে আসে।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর এর আবহাওয়াবিদ মো. আফতাব উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় কুয়াশার ঘনত্ব ৫০ মিটারে নেমে এসেছে। দুপুরে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতির হয়। তবে শুক্রবার মধ্যরাত থেকেও এমন কুয়াশা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা আছে। শনিবারের পর কুয়াশা থাকলেও এতো ঘন হবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, মৌসুমে দ্বিতীয় বারের মতো এমন ঘন কুয়াশা দেখা গেছে। গত দুদিন বৃষ্টির কারণে এত ঘন কুয়াশা দেখা গেছে।

সর্বশেষ ঘন কুয়াশায় বিমানবন্দর পরিস্থিতি যেমন ছিল

২০২০ সালের ৮ ডিসেম্বর কুয়াশার কারণে দীর্ঘ সময় ঢাকায় ফ্লাইট চলাচল বন্ধ ছিল। এদিন অতিরিক্ত কুয়াশার কারণে নামতে পারেনি গুয়াঞ্জু থেকে আসা চায়না সাউদার্ন। দীর্ঘ সময় ঢাকার আকাশে ঘুরপাক খেয়ে পরে আবারও গুয়াঞ্জুর উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে। ঢাকায় নামতে না পেরে কলকাতায় গিয়েছে সৌদি এয়ারলাইন্স (সাউদিয়া)।

তখন বিমানবন্দর জানিয়েছিলো, চায়না সাউদার্নের সিজেড-৩৯১ ফ্লাইটটি মঙ্গলবার রাতে গুয়াঞ্জু থেকে ঢাকায় আসার কথা ছিল। ফ্লাইটটি ঢাকার বিমানবন্দরের নামার জন্য ৩৮ হাজার ফিট থেকে ১৯৫০ ফিটে নেমে আসে। তবে ঢাকা এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি) থেকে কুয়াশার কারণে প্লেনটিকে দেখা যায়নি বলে তারা বাংলাদেশে চায়না সাউদার্নকে ল্যান্ডিংয়ের অনুমতি দেয়নি। পরে ফ্লাইটটি গুয়াঞ্জুর উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে বাংলাদেশ সময় রাত ১টার দিকে গুয়াঞ্জুতে অবতরণ করে।

একইভাবে রিয়াদ থেকে ঢাকাগামী সাউদিয়ার এসভি-৮০৪ ফ্লাইটটি বাংলাদেশের আকাশের কুয়াশার পূর্বাভাস পেয়ে রাত সাড়ে ১১ টার দিকে (ভারতের স্থানীয় সময়) কলকাতায় অবতরণ করে। সাউদিয়ার জেদ্দা থেকে ঢাকায় আগত এসভি ৩৮৮২ ফ্লাইটটি বাংলাদেশের আকাশে প্রবেশ করে আবহাওয়া পরিস্থিতি দেখে ভারতে প্রবেশ করে।

মালিন্দো এয়ারের ওডি-১৬২ ফ্লাইটটি কুয়ালালামপুর থেকে ঢাকায় এসে নামতে না পেরে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের ডন মিয়াং বিমানবন্দরে চলে যায়।

এআর/এমএইচএস