মুফতি কাজী ইব্রাহীম

বিভিন্ন মাধ্যমে করা বিতর্কিত সব মন্তব্য সম্পর্কে গ্রেফতারের পর ব্যাখ্যা দিয়েছেন মুফতি কাজী ইব্রাহীম। অনেক বিষয়ে সঠিক ব্যাখ্যা দিতে না পারলেও তিনি নিজের সব বিতর্কিত বক্তব্যের সমর্থনে নানা যুক্তি উপস্থাপনের চেষ্টা করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, আধ্যাত্মিক জগতে রয়েছে তার অবাধ বিচরণ। স্বপ্নে তিনি অনেক তথ্য পান।

বাংলাদেশে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর অনেক দালাল বা এজেন্ট রয়েছে- মর্মে যে বক্তব্য মুফতি কাজী ইব্রাহীম প্রচার করেছেন, সেটিও তিনি জেনেছেন স্বপ্নে পাওয়া এক নোটিশে। তবে সত্যতা যাচাই না করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এটি প্রচার করা উচিত হয়নি বলেও গোয়েন্দা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন মুফতি ইব্রাহিম।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম ও গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

গত ২৮ সেপ্টেম্বর ভোরে মোহাম্মদপুর লালমাটিয়া জাকির হোসেন রোডের বাসা থেকে মুফতি ইব্রাহীমকে গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে দুটি মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। 

অর্থ আত্মসাৎ ও প্রতারণার অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন জেড এম রানা নামের এক ব্যক্তি। আর সামাজিক মাধ্যমে ‘উগ্র’ বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলাটি করে গোয়েন্দা পুলিশ।

গোয়েন্দা পুলিশের মামলায় ২৯ সেপ্টেম্বর কাজী ইব্রাহীমের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকা মহানগর আদালত। পরে এ ধর্মীয় বক্তাকে রিমান্ড শেষে আদালতে সোপর্দ করা হলে গত শনিবার ঢাকার মহানগর হাকিম শাহিনুর রহমান জামিন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

ডিএমপির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম ও ডিবি-উত্তরের যুগ্ম পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, সম্প্রতি ওয়াজ মাহফিল, ইউটিউব, ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে কাজী ইব্রাহীমের বিভিন্ন বক্তব্য ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়। গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার ইউনিট সবকিছুর খেয়াল রাখছে, কারা কী বলছে, কি প্রচার করছে। কাজী ইব্রাহিমও প্রায়ই বিভিন্ন ধরণের বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। 

তিনি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কাজী ইব্রাহিমকে হেফাজতে নেওয়া হয়। তখন তিনি সব উদ্ভট ও বিভ্রান্তিকর কিছু তথ্য দিয়েছেন। তিনি বিভিন্ন সময় যা যা বলেছেন, সবই নাকি স্বপ্নে দেখেছেন। তিনি মন্ত্রী হওয়ার স্বপ্নে বিভোর ছিলেন।

ডিবি উত্তরের এ যুগ্ম-কমিশনার বলেন, তার রয়েছে ধর্মীয় বিষয়ে অগাধ পাণ্ডিত্য। কিন্তু তিনি হরহামেশা সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিষয়েই বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। যদিও তার এসব বিষয়ে কোনো গভীরতা নেই।

তালেবানরা ক্ষমতায় এলে মন্ত্রী হবেন- কাজী ইব্রাহীমের এমন উদ্ভট স্বপ্ন সম্পর্কে হারুন অর রশীদ বলেন, তিনি বলেছেন, তিনি নাকি স্বপ্নে দেখেছেন তালেবানরা ক্ষমতায় আসবে। সেটি নাকি সত্যিও হয়েছে। তিনি মন্ত্রিত্বও পাবেন। এমন সব তথ্য তিনি পেয়েছেন স্বপ্নযোগে।

তিনি বলেন, কাজী ইব্রাহীমের দাবি ছিল, করোনা টিকা নিলে ছেলে মেয়ে হয়ে যাবে, মেয়ে ছেলে হয়ে যাবে। কোরআন হাদিসের আলোকে যারা কথা বলে না, তারা হিন্দুস্তানি দালাল, তারা ‘র’-এর দালাল। তিনি বিভিন্ন উদ্ভট, বিভ্রান্তিকর তথ্য তিনি ছড়িয়েছেন সামাজিক মাধ্যমে। মসজিদের খুতবায়, বিভিন্ন মাহফিলেও এসব বলে তিনি মানুষকে বিভ্রান্ত করেছেন।  

কাজী ইব্রাহীমকে আটকের অভিযানে অংশ নেওয়া ডিএমপির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইমের এক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, তাকে জিজ্ঞাসাবাদের উদ্দেশ্যে আমরা তার বাসায় গিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি ফেইসবুক লাইভে ঢুকে আমাদেরকে হিন্দুস্তানি দালাল বলেছেন। বলেছেন, আমরা নাকি ‘র’-এর এজেন্ট। এ ধরনের বিভ্রান্তিকর কথা তিনি প্রতিনিয়ত বলে যাচ্ছেন। ‘র’-এর এজেন্ট কারা, তা তিনি স্পষ্ট করে বলতে পারেননি। তবে তিনি বলেছেন, ‘র’ সম্পর্কে যা বলেছেন তা তিনি স্বপ্নযোগে এক নোটিশে পেয়েছেন। সেজন্য প্রচার করেছেন। পাশাপাশি তিনি করোনার টিকা সম্পর্কে বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্যের সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। জিজ্ঞাসাবাদে কাজী ইব্রাহীম জানিয়েছেন, তিনি সপরিবারে করোনার সরকারি টিকা নেননি।

জামায়াতের সঙ্গে মুফতি ইব্রাহীমের যোগসূত্র খোঁজা হচ্ছে

জামায়াতের ইন্ধনে বিভিন্ন মাধ্যমে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছেন কি না, বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেছেন। তবে তার অনেক তথ্য ও বয়ানের সঙ্গে জামায়াতের বয়ানের মিল খুঁজে পেয়েছে ডিবি পুলিশ।

এ প্রসঙ্গে ডিবি উত্তরের যুগ্ম পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ডিবির ধারণা জামায়াতে ইসলামীর ইন্ধন-প্ররোচনায় বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে কাজী ইব্রাহীম মানুষের মধ্যে সরকার বিদ্বেষী মনোভাব সৃষ্টির চেষ্টা করে আসছেন। এ বিষয়ে বিশদ তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছে ডিবি।

জেইউ/আরএইচ