কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গাদের প্রথম সারির নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যার ঘটনায় পশ্চিমা বিশ্ব থেকে কোনো ধরনের চাপ নেই বলে দাবি করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তবে মুহিবুল্লাহ হত্যার ঘটনায় জড়িতদের অবশ্যই উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

রোববার (৩ অক্টোবর) রাতে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন।

ড. মোমেন বলেন, ‘আন্তর্জাতিক কোনো চাপ নেই। যারা তাকে (মুহিবুল্লাহকে) হত্যা করেছে আমরা অবশ্যই তাদের শাস্তি দেবো। কারও কথায় শাস্তি দেবো এমনটা নয়, যারা অপরাধ করেছে তাদের শাস্তি পেতেই হবে।’

গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৮টার দিকে কক্সবাজারের উখিয়ায় লাম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একদল দুর্বৃত্ত মুহিবুল্লাহকে গুলি করে হত্যা করে। মুহিবুল্লাহ হত্যার খবরে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ ঘটনায় জড়িত অপরাধীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার পাশাপাশি মুহিবুল্লাহর মৃত্যুর ঘটনা তদন্তের দাবি জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আগে মুহিবুল্লাহ ইস্যুতে সরব হন পশ্চিমা কূটনীতিকরা। বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার, ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটার্টন ডিকসন, নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত আন্নে গেরার্ড ভেন লিউইন ছাড়াও বেশিরভাগ পশ্চিমা কূটনীতিক টুইটারে দেওয়া পৃথক বার্তায় মুহিবুল্লা হত্যার বিচারের দাবি করেন। মুহিবুল্লা হত্যার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘও। 

সংস্থাটি একটি বিবৃতিতে বলেছে, কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী নেতা মুহিবুল্লাহর মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) গভীরভাবে মর্মাহত ও শোকাহত। আমরা এ হামলার তীব্র নিন্দা জানাই।

মুহিবুল্লাহ হত্যার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা কূটনীতিকদের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে মোমেন বলেন, ‘পশ্চিমা বিশ্ব কিছু পাইলে একটা স্টেটমেন্ট দিয়ে দেয়। স্টেটমেন্ট দিয়ে তাদের দায়িত্ব শেষ বলে মনে করে, কিন্তু কাজের কাজ কিছু করে না। তারা কিছু হলেই স্টেটমেন্ট দেয়, অথচ তাদের দেশে লোক মরলে তারা কিছু বলে না; তাদের মলে লোক মরে, স্কুলে বাচ্চা মরে এ নিয়ে কোনো স্টেটমেন্ট দেয় না। কিন্তু আমাদের মতো দেশে কিছু হলেই তারা একটা স্টেটমেন্ট দিয়ে দেয়। তাদের কাজই এটা।’

এ সময় রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে পশ্চিমাদের ভূমিকা নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেন ড. মোমেন। তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা ফেরানো নিয়ে তারা কোনো উদ্যোগ নেয় না।’

বাংলাদেশের বিভিন্ন ইস্যুতে পশ্চিমাদের স্টেটমেন্টের বিষয়ে সরকারের তরফ থেকে কোনো প্রতিবাদ বা নোট দেওয়া হয় কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মোমেন বলেন, ‘তারা এটা পত্রিকায় পাঠায়, আপনারা ছাপান। আমাদের কাছে এসব বলে না। আপনারা তাদের পছন্দ করেন, তাই এসব ছাপান।’

এদিকে রোববার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের জানান, যারা তাকে হত্যা করেছে বলে আমরা মনে করছি, শিগগিরই তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পারব। তদন্ত চলছে, শিগগিরই এর ব্যবস্থা করতে পারব বলে বিশ্বাস করি।

আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে এপিবিএন সদস্যরা। মুহিবুল্লাহ আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) চেয়ারম্যান ছিলেন। এই সংগঠনের হয়ে তিনি রোহিঙ্গাদের অধিকারের কথা তুলে ধরতেন। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের চেষ্টায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছিলেন তিনি।

এনআই/এসকেডি