স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টিতে কোনো বিদেশি সংস্থা জড়িত কি না তা তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

রোববার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে শারদীয় দুর্গোৎসবের আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত সভা শেষে ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান। 

মন্ত্রী বলেন, আমরা সবকিছু তদন্তের মাধ্যমে বের করে আপনাদের জানাব। কারা এ অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করার প্রয়াস পাচ্ছে এবং কোনো বিদেশি সংস্থা এর সঙ্গে জড়িত আছে কি না, সবই আমরা তদন্ত করে দেখছি।

মন্ত্রী বলেন, আমরা এখনো কিছু বলতে পারছি না। আমরা অনেক কিছুই সন্দেহ করছি। তদন্তের পরই আপনাদের জানাব। 

তাহলে এটি (মুহিবুল্লাহ হত্যা) বিচ্ছিন্ন ঘটনা কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটিকে বিচ্ছিন্ন বলুন, কিংবা উদ্দেশ্যমূলক বলুন, যাই হোক, আমরা তা বের করব। 
 
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেখানে রয়েছে। এ ধরনের মারামারি আপনারা আগেও দেখেছেন। আপনারা দেখেছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে অস্থির পরিবেশ সৃষ্টির জন্য আগেও মিয়ানমার থেকে বিভিন্নভাবে অস্ত্র এসেছে। এ অস্ত্র নিয়ে এবং আধিপত্য বিস্তার করার জন্য বিভিন্ন গ্রুপে মারামারি দেখা গেছে। 

খুন হওয়া আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মুহিবুল্লাহ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সোচ্চার ছিলেন বলেও জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।  

তিনি বলেন, ওই নেতা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সবসময় সোচ্চার ছিলেন। আমরা মনে করি ঘটনাটি তদন্ত করে এর মূল কারণ বের করতে হবে এবং আমরা সে অনুযায়ী কাজ করছি।

তিনি আরও বলেন, তাকে যারা হত্যা করেছে বলে আমরা মনে করছি, আমরা তাদের শিগগিরই আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পারব। আমাদের তদন্ত, সবকিছুই খুব দ্রুত চলছে। 

কাঁটাতারের বেড়ায় ঘেরা হচ্ছে রোহিঙ্গা ক্যাম্প

মন্ত্রী বলেন, আমরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চারদিকে কাঁটাতারের বেড়া দিচ্ছি। এটি কিছুদিনের মধ্যে শেষ হবে। ওয়াচ টাওয়ার করছি, সেটিও কিছুদিনের মধ্যে শেষ হবে। সেখানে রাস্তাঘাটও তৈরি করা হচ্ছে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলা শিথিল হয়নি। মনে রাখতে হবে, দুইটি থানার কিছু অংশে ১১ লাখ লোক বাস করে। এ বিশাল জনগোষ্ঠীর সবকিছু মেইনটেনেন্স করা খুব সহজ কাজ নয়। 

সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ

গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৮টার দিকে নিজ সংগঠনের কার্যালয়ে অবস্থানকালে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ। এ ঘটনায় পরদিন রাতে উখিয়া থানায় একটি মামলা রুজু করা হয়। যার বাদী নিহত মুহিবুল্লাহর ছোট ভাই হাবিব উল্লাহ।

১ অক্টোবর দুপুরে উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্প-৬ থেকে মুহিবুল্লাহ হত্যায় জড়িত সন্দেহে মোহম্মদ সেলিম (৩৩) (প্রকাশ লম্বা সেলিম) নামে একজনকে গ্রেফতার করে উখিয়া থানায় হস্তান্তর করে এপিবিএন।

২ অক্টোবর ভোর রাতে কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে জিয়াউর রহমান ও আব্দুস সালাম নামের আরও দুইজনকে গ্রেফতার করে এপিবিএন।

আজ (৩ অক্টোবর) দুপুরে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প-৫ এ অভিযান চালিয়ে মো. ইলিয়াস (৩৫) নামে আরও একজনকে আটক করা হয়।

রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যায় নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। মুহিবুল্লাহ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে প্রত্যাবাসন বিরাধীরা তাকে হত্যা করেছে।

এসএইচআর/আরএইচ/জেএস