খানাখন্দে ভরা সড়ক

সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার সড়ক নির্মাণ ও সংস্কারের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আনতে চায় সরকার। এ লক্ষ্যে সড়কগুলোকে পৃথক পৃথক আইডি নম্বরের (পরিচিতি নম্বর) আওতায় আনা হবে। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা বাস্তবায়ন হলে অনিয়ম বন্ধ হবে, এমনটিই আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

জানা গেছে, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার পক্ষ থেকে যেসব সড়ক নির্মাণ করা হয়, বর্তমানে সেগুলোর কোনো আইডি নম্বর নেই। এজন্য বিভিন্ন সময় অনিয়মের ঘটনা ঘটে। অনেক ক্ষেত্রে সড়ক নির্মাণ ছাড়া কিংবা পাকা-সংস্কার না করেও বিল দেখানো বা অনিয়মের সুযোগ থাকে। এ কারণেই সড়কগুলো আইডিভুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইডি নম্বর অনুযায়ী বরাদ্দ দেওয়া হলে সুষ্ঠুভাবে সড়ক নির্মাণ ও সংস্কার কাজ সম্পন্ন হবে। এক্ষেত্রে এক সড়কে একাধিক প্রতিষ্ঠানের কাজ করা কিংবা দুইবার অথবা তিনবার কাজ দেখানোর কোনো সুযোগ থাকবে না।

সড়ক সংস্কার না করেও অনেক ক্ষেত্রে বিল উঠিয়ে নেওয়া হয়

জানা গেছে, বর্তমানে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) সব সড়ক আইডিভুক্তির পর নির্মাণ করা হচ্ছে। এলজিইডির আদলে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার সড়কগুলোরও আইডি নম্বর থাকবে। আইডি নম্বরে থাকবে বিভিন্ন তথ্য। সেসব তথ্য অনুযায়ী সড়কে নির্মাণ বা সংস্কারের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হবে। 

অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, একবার বরাদ্দ পাওয়ার পর সড়কের নাম বদলে আবারও নেওয়া হয়। আইডি নম্বর থাকলে সে সুযোগ আর থাকবে না। মো. আলি আখতার হোসেন বলেন, আইডি নম্বর থাকলে সড়কের নাম পরিবর্তন করার সুযোগ নেই। 

জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (সড়ক ও সেতু রক্ষণাবেক্ষণ ইউনিট) মো. আলি আখতার হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আইডি নম্বরে সড়কের অনেক তথ্য থাকে। রাস্তা কোথা থেকে শুরু হয়েছে, কোথায় শেষ হয়েছে, কতটুকু চওড়া ইত্যাদি। 

অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, একবার বরাদ্দ পাওয়ার পর সড়কের নাম বদলে আবারও নেওয়া হয়। আইডি নম্বর থাকলে সে সুযোগ আর থাকবে না। মো. আলি আখতার হোসেন বলেন, আইডি নম্বর থাকলে সড়কের নাম পরিবর্তন করার সুযোগ নেই।

সড়ক নির্মাণের তিন থেকে চার মাস পর দেখা যায় সংস্কারের জন্য বরাদ্দ চাওয়া হচ্ছে

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় সরকার বিভাগের এক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, অনেক সময় দেখা যায়, প্রয়োজন না হলেও এক সড়ক সংস্কার করতে একাধিকবার বরাদ্দ নেওয়া হয়। নতুন সড়ক নির্মাণের তিন থেকে চার মাস পর দেখা যায়, সংস্কারের জন্য বরাদ্দ চাওয়া হচ্ছে। নতুন সড়ক কয়েক মাস পর কেন সংস্কার করতে হবে? 

এসব অনিয়মের ক্ষেত্রে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জড়িত থাকেন বলেও অভিযোগ করেন ওই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, আপনি যদি জনপ্রতিনিধি হন, আপনার এলাকার সড়কের কাজ ঠিকভাবে হয়েছে কি না, কাজ না করে অথবা অর্ধেক কাজ করে বিল উঠিয়ে নেওয়া হচ্ছে কি না, সে তথ্য নিশ্চয়ই আপনি জানবেন। 

জানতে চাইলে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার সড়কগুলো আইডিভুক্ত করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অনিয়ম দূর, গুণগত মান নিশ্চিত এবং সঠিক পরিকল্পনায় কাজ করার জন্য এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম

তিনি বলেন, সড়কগুলো আইডিভুক্ত হলে কখন কোন ধরনের মেইনটেন্যান্স লাগবে, সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা তা জানতে পারবে। একটি কাজ সম্পন্ন হলে সেটির মেয়াদ থাকবে। মেয়াদের মধ্যে আর কোনো বরাদ্দের প্রয়োজন হবে না। যদি বরাদ্দ দেওয়া হয়, তাহলে এটিকে ওভারল্যাপিং হিসেবে বিবেচনা করা হবে। অনেকগুলো বিষয় এখানে থাকবে। 

স্থানীয় সরকারমন্ত্রী জানান, একটি সড়কে একাধিকবার বরাদ্দের ঘটনা যাতে না ঘটে, এমনটি যাতে কেউ করতে না পারেন, সেজন্যই আইডি নম্বরের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কেননা আইডি নম্বর থাকলে জানা যাবে, সড়কটি কবে নির্মাণ করা হয়েছে এবং এর জন্য কবে আবারও বরাদ্দ লাগবে। এছাড়া, আইডি নম্বর থাকলে আগাম বাজেট তৈরিসহ অনেক সুবিধা রয়েছে। 

এসএইচআর/আরএইচ