সাইবার হ্যাকিং বেড়েছে ১৩ শতাংশ
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অনলাইনে অন্যান্য অ্যাকাউন্ট হ্যাকিংয়ের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮ দশমিক ৩১ শতাংশে, যা ২০১৯ সালে ছিল ১৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ। অর্থাৎ এ হার বেড়েছে ১৩ শতাংশেরও বেশি।
অন্যদিকে, ২০১৯ সালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচারের ঘটনা ছিল ২২ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এটি কমে দাঁড়িয়েছে ১৬ দশমিক ৩১ শতাংশে। সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের (সিসিএ ফাউন্ডেশন) প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
বিজ্ঞাপন
শুক্রবার (১ অক্টোবর) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত ‘সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাস অক্টোবর কর্মসূচি’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরা হয়।
সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাসবিষয়ক জাতীয় কমিটি-২০২১ এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। কমিটির আয়োজনে ‘সচেতন রই সাইবার স্মার্ট হই’ কর্মসূচি চলবে অক্টোবর মাসজুড়ে।
সংবাদ সম্মেলনে ইনফরমেশন সিস্টেম অ্যান্ড কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশন ঢাকা চ্যাপ্টারের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন বলেন, দেশে বিভিন্ন ধরনের প্রযুক্তি ও ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ক্রমে ব্যাপক হারে বাড়ছে। এর ইতিবাচক দিকগুলোর সঙ্গে নেতিবাচক দিকগুলোও ব্যাপকভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নেতিবাচকতার হার কেবল ভাবিয়েই তুলছে না, ভবিষ্যৎ নিয়ে সৃষ্টি হচ্ছে শঙ্কা। সবার আগে নিজে সচেতন হতে হবে।
ইনফরমেশন সিস্টেম অ্যান্ড কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশন ঢাকা চ্যাপ্টারের সভাপতি মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন বলেন, ব্যক্তিগত ও সামাজিক পর্যায়ে এ সচেতনতা কর্মসূচি মাসব্যাপী চলতে থাকবে। বর্তমানে নারীরা সবচেয়ে বেশি সাইবার বুলিংইয়ের শিকার হচ্ছেন। এসব থেকে বাঁচতে সবাইকে সচেতন হতে হবে।
সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম গবেষণা প্রতিবেদনে তুলে ধরে বলেন, ২০১৯-২০ সালে আশঙ্কাজনকভাবে সামাজিক মাধ্যমসহ অন্যান্য অনলাইন অ্যাকাউন্ট হ্যাকিং ও তথ্য চুরি বেড়েছে। এটিএম কার্ড হ্যাকিংয়ের মতো নতুন একটি অপরাধ জরিপে উঠে এসেছে। বয়সভিত্তিক সাইবার অপরাধ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ৮৬ দশমিক ৯০ শতাংশ ভুক্তভোগীর বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। সচেতনতার পাশাপাশি সাইবার লিটারেসিও বাড়াতে হবে।
সিসিএ ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট কাজী মুস্তাফিজ বলেন, সমাজে সুস্থ সাইবার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠার কাজ সরকার কিংবা কোনো প্রতিষ্ঠানের পক্ষে এককভাবে করা সম্ভব নয়। সবার সম্মিলিত দায়িত্বে এটি করতে হবে। সব ধরনের সরকারি-বেসরকারি সংগঠন, বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও রাজনৈতিক দলের নীতিনির্ধারকদের সম্মিলিতভাবে এ কাজে অংশ নিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্য বক্তারা বলেন, নিরাপত্তার বিষয়টি শুধুমাত্র কোনো বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান বা রাষ্ট্রযন্ত্রের দায়িত্ব নয়, সবারই ব্যক্তিগত দায়িত্ব। সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে অনলাইনে শক্তিশালী নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে পারেন। পাশাপাশি ঝুঁকিতে থাকা নাগরিকদের জানাতে পারেন। প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের সাইবার নিরাপত্তাবিষয়ক প্রশিক্ষণের আয়োজন করা যেতে পারে। তাহলে ভার্চুয়াল প্লাটফর্ম আরও বেশি নিরাপদ এবং সবার জন্য সুরক্ষিত করা যাবে।
তারা বলেন, ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি অ্যালায়েন্স (এনসিএসএ) ও ইনফ্রাস্ট্রাকচার সিকিউরিটি এজেন্সি (সিআইএসএ) বিশ্বজুড়ে সাইবার সচেতনতা মাসের নেতৃত্ব দিচ্ছে। গত বছর ৫০টি দেশের বাণিজ্যিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্যক্তি সচেতনতা মাসের কর্মসূচিতে অংশ নেয়।
অক্টোবর মাসের কর্মসূচিকে চার ভাগে ভাগ করেছে সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাসবিষয়ক জাতীয় কমিটি-২০২১। প্রথম সপ্তাহে সাইবার স্মাট হই, দ্বিতীয় সপ্তাহে ফিশিং প্রতিরোধ, তৃতীয় সপ্তাহে সাইবার সিকিউরিটিতে ক্যারিয়ার ও চতুর্থ সপ্তাহে সবার আগে সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে কর্মসূচি পালন করা হবে। দেশব্যাপী এ কর্মসূচি চলমান থাকবে বলে সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
এমএইচএন/জেইউ/আরএইচ